২০২৩ সালে রোমানিয়ায় আটক ৩ হাজার বাংলাদেশি

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ০৮ মে ২০২৪
ছবি সংগৃহীত

অনিয়মিতভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৩ সালে রোমানিয়ায় আটক হয়েছেন তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি। ইউরোপের ভিসামুক্ত চলাচলের অঞ্চল শেঙেনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে রোমানিয়া।

সোমবার (৬ মে) রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রুর এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ৪০০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে রোমানিয়া থেকে অনিয়মিত উপায়ে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে আটক করে বর্ডার পুলিশ। তাদের বেশিরভাগই হাঙ্গেরিতে ঢুকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও জানান তিনি।

অভিবাসীরা সাধারণত পণ্যবাহী লরি, ট্রাক অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোমানিয়া ছাড়ার চেষ্টা করেন।

বর্ডার পুলিশের মুখপাত্রের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছর অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে।

যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বৈধ ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তারা।

গেলো বছর সীমান্তে আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের নাম। দেশটির ৮১০ জন নাগরিকের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করায় আটকে দিয়েছে রোমানিয়ার সীমান্ত পুলিশ। এছাড়া নেপালের ৩৫৯ জন, শ্রীলঙ্কার ৩৩০ জন এবং ভারতের ২২০ জন অভিবাসীকে গত বছর সীমান্ত থেকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মুখপাত্র।

সীমান্ত ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এর আগে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের আলোচিত নাদলাক-২ সীমান্ত ঘুরে দেখে ইনফোমাইগ্রেন্টস। ২০২৩ সালে এই সীমান্ত পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি পারাপারের চেষ্টা দেখা গেছে।

ওই সময় সীমান্ত আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু সীমান্তের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ও অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে নেওয়া কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ব্যখ্যা করেন।

তিনি জানান, সীমান্তে বিপুল সংখ্যক তুর্কি-নিবন্ধিত মালবাহী গাড়ির চলাচল রয়েছে। এসব গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই মানবপাচারের অভিযোগ আসে। তাই সংকট নিরসে রোমানিয়া, হাঙ্গেরি এবং তুরস্ক কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করে আসছিল।

দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু আরও যোগ করেন, তিন দেশের মধ্যে সফল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়া ও হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষকে সহায়তার জন্য তুর্কি সীমান্ত পুলিশের কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তারা হাঙ্গেরিতে এবং ২০২২ সালের ২৫ মার্চ থেকে রোমানিয়াকে গাড়ি তল্লাশিসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা দিচ্ছে।

রোমানিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার একটি চুক্তির আওতায় তুর্কি পুলিশ দেশটির ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে বুখারেস্ট।

রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত ছাড়াও হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে অবস্থিত রোজকে হাইওয়েতেও এমন আন্তঃদেশীয় যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি থাকার কথা জানিয়েছে রোমানিয়া বর্ডার পুলিশ।

রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মতে, বলকান রুটে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিন দেশের যৌথ সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্ববপূর্ণ।

বলকান রুটে সবার সহযোগিতায় অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই করা সম্ভব বলেও মনে করা হয়। এছাড়া এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার মধ্য দিয়ে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তাদের সীমান্তে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা হয়। এই অভিজ্ঞতা নিজ দেশে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

২০২০ সালের জুলাই থেকে রোমানিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন মো. দাউদ আলী। তিনি ৩০ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিগত তিন বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় এসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়োগকর্তা সম্পর্কিত জটিলতায় থাকলেও বড় একটি অংশ রোমানিয়ায় বৈধ অভিবাসী হিসেবে ভালো আছেন।

রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, কাজের ভিসায় বাংলাদেশিরা যেসব এজেন্টদের মাধ্যমে আসেন তারা প্রায়ই অভিবাসীদের গ্রস বা করসহ বেতন এবং নেট বা কর ছাড়া বেতনের বিষয়টি গোপন রাখেন। যার ফলে অভিবাসীরা রোমানিয়ায় এসে হতাশায় ভোগেন। এটি অনেক ব্যক্তিকে অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দিতে উৎসাহী করেছে। যার সুযোগ নিচ্ছেন সীমান্ত মানবপাচারে জড়িত অপরাধীরা। এসব জটিলতা এড়াতে আমরা রোমানিয়া কর্তৃপক্ষকে রোমানিয়ান ভাষা ও ইংরেজিতে কাজের চুক্তি অনুবাদ করার প্রস্তাব দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কিছু নাম সর্বস্ব কোম্পানি ওয়ার্ক পারমিট বের করে অভিবাসীদের কাছ থেকে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা কর্মীদের কোনো কাজ দিতে পারেনি। যার ফলে উপায় না দেখে অনেক অভিবাসীরা অনিয়মিত হয়ে পারেন। আমরা রোমানিয়া কর্তৃপক্ষকে যাছাই বাছাই করে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর আহ্বান করেছি।

বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি রোমানিয়ার ভিসা পেলেও দেশটিতে নিয়মিতভাবে থাকার সংখ্যা কম। যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা প্রাপ্তির হার কমেছে বলে নিশ্চিত করেছেন বুখারেস্টে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ থেকে শেঙেন জোনে অন্তুর্ভুক্তির পর থেকে রোমানিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন অভিবাসী শ্রমিকদের এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর মেয়াদি অস্থায়ী রেসিডেন্ট পারমিট দিচ্ছে। যা অভিবাসীদের জীবনযাত্রা সহজ করবে।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]