মালয়েশিয়ায় বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব
পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিরা দিনটি সাড়ম্বরে উদযাপন করে থাকে। মালয়েশিয়ায় এবারের পহেলা বৈশাখ আয়োজনে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের উপস্থিতি মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকায়ত সংস্কৃতির ডালা সাজিয়ে বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে দেশটিতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়েছে।
ভিনদেশের মাটিতেও বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলো নানা অনুসঙ্গে। দেশটিতে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও ছিল আনন্দের কলরব। আর এই আনন্দ উচ্ছ্বাসকে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের চমৎকার আয়োজনের মধ্য দিয়ে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন, হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান ও তার সহধর্মিণী পান্ডারা চৌধুরী
বৃহস্পতিবার (২ মে) পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানী কুয়ালালামপুরের ক্রাফ্ট সেন্টারে অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান ও তার সহধর্মিণী পান্ডারা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মহাপরিচালক, পুয়ান জুবাইদাহ বিনতি মুখতার, বিশেষ অতিথি ছিলেন, মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব নূর আতিকা জুলকেপলি।
পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ বরণ করে নিতে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় মঙ্গল শোভযাত্রা র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে নাচ, গান, ও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ উদযাপন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বৈশাখী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান
একাকী প্রবাসজীবনে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা, দেশীয় স্বাদ ও আমেজের জন্য সারাবছর লালায়িত থাকা এই প্রবাসীরা হাজার মাইলের দূরত্ব কষ্ট ভুলে গিয়েছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে।
রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মালয়েশিয়া সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, সে দেশের ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্টমিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়াও ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারাও যোগদেন বৈশাখী অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছেন, শিল্পীরা
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির গৌরবময় উত্তরাধিকার। একে ঘিরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ কিংবা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে এক ধরনের সম্মিলন ও ঐক্য গড়ে ওঠে। বৈশাখ আবহমান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রবাসের মাটিতে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছেন, শিল্পীরা
দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরী ও প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষের প্রাণবন্ত ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বড়দের পাশাপাশি শিশুশিল্পীরা নাচে-গানে মাতিয়ে তোলেন অনুষ্ঠান।
বৈচিত্রময় পোশাক ও বিচিত্র রংয়ের সমাহারে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় পুরো আয়োজনজুড়ে। সৌন্দর্য্যের ছটায় তৈরি হয় এক অনাবিল শান্তির আবহ। ভিনদেশি, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রায় দুই শরও বেশি মানুষ এ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। অতিথিদের মুহূর্মুহূ করতালিতে সিক্ত হন শিল্পীরা। বৈশাখীর আনন্দঘন এ আয়োজন পরিণত করে এক টুকরো বাংলাদেশে।
এমআরএম/এমএস