প্রবাসে ঈদ মানে বেদনার গাংচিল

জমির হোসেন
জমির হোসেন জমির হোসেন , ইতালি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৪
জমির হোসেন

বিদেশ বিভুইয়ে ঈদ মানে বেদনার গাংচিল। ঈদ আসলে সুন্দর স্বপ্নরা দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়, ফেলে আসা সোনালী অতীত নিমিষেই মন খারাপের দিকে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয় আনন্দ রূপ নেয় নিরানন্দে। বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে অভিজ্ঞতার আলোকে প্রবাস থেকে ঈদের বার্তার এই স্মৃতিচারণ। সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধির খোঁজে আমরা পরবাসী। আমাদের পাঠানো অর্থে পরিবারের মাঝে হাসি ফোঁটে আর দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে।

বাংলাদেশের জন্য যতই ঘাম ঝরাই না কেন আমাদের সুখের আর নিরাপত্তার যেন কোনো বালাই নেই। যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় বিমানবন্দরে হয়রানি, লাগেজ উধাও! জমি নিয়ে প্রতারণার শিকারসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

মন্ত্রী থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়টা জানেন তবু যেন প্রতিকার নেই। এটাই আমাদের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সুখ। তবে কি এ রকম সুখের আশায় প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি দেশান্তর। বার থেকে চৌদ্দ অথবা কোনো সময় ষোল ঘণ্টা কাজ করতে হয় আমাদের।

সেই ঘাম ঝরানো অর্থ দেশে পাঠাই পরিবার। নিজে ভালো থাকার জন্য কারণে-অকারণে ভালো থাকা হয়ে ওঠে না। আমরা এরই মধ্যে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পদার্পণ করলেও একটু সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হতে পারিনি। ঈদ আসলেই এই স্মৃতিগুলো বড্ড পীড়া দেয় মনে।

ঈদ আসে ঈদ যায় এর মাঝে সুখ দুঃখের কাহিনি আমরণ পর্যন্ত থেকে যাবে। প্রবাসের ঈদ আমার কাছে একেবারেই সাদামাটা যদি এক কথায় বলি ঈদ মানে ঈদ নয়। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি দেশে ঈদ করা হয় না। শেষ ঈদ দেশে কবে করা হয়েছে মনে নেই।

তবে ঈদের সুখ-দুঃখ এখনও মনে বিরাজমান যা প্রায়ই মনে পড়ে আর বোবা কান্নায় বুক ফাঁটে শান্তনা দেই ওরে মন প্রবাস তো এমনই। কাছে নেই আত্মীয়-পরিবার, বন্ধু-বান্ধব দেশের মতো একে অপরের বাসায় দাওয়াতের ধূম নেই যা ঈদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগায়।

এটাও সত্য প্রবাসে হয়ে ওঠে না অনেক কিছু কর্মব্যস্ততার কারণে। কিন্তু কারো কোনো আন্তরিকতার কমতি নেই। নানা ব্যস্ততায় ক্রমশ আপন মানুষগুলো পর হয়ে যায়। এরই নাম প্রবাস।

আমরা যারা ইউরোপ-আমেরিকাসহ নানান সংস্কৃতির নানা দেশে অভিবাসী তাদের বেশিরভাগ প্রবাসীদের প্রায় একই সমস্যা। ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। আর আমাদের কাজগুলোর সময়সূচি ভোর থেকে শুরু হয়। অনেক সময় ঘুমের ঘাটতি নিয়েই আবার পরের দিন কর্মস্থলে যোগদান করতে হয়।

পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষ তেমন জানে না ঈদ কি। তবে যতটা না ঈদকে জানে তার চেয়ে বেশি চেনে রমজানকে। আমরা যারা রোজায় পানাহার বন্ধ রাখি এ রকম দৃশ্য তাদের নজরে আসে ফলে প্রতি বছর রমজানের পূর্বে সহকর্মীরা জিজ্ঞেস করে কবে থেকে রোজা শুরু।

এ ব্যাপারটা বেশ আনন্দ যোগায় যে আমাদের উত্তম একটি মাসের খবর তারা রাখেন। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই যার ফলে ঈদের মতো এসব উৎসবে সরকারি-বেসরকারি কোনো ছুটি থাকে না। কর্মস্থলের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নিতে হয়।

কোনো প্রতিষ্ঠানে আবার ছুটিও পাওয়া যায় না। আবার কেউ আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য ছুটি নিয়ে ঈদের নামাজ শেষ করে ভোঁদৌড় দিতে হয় কর্মসংস্থানে যাওয়ার জন্য।

এসব দেশে আরেকটি সমস্যা হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট ছুটির দিন থাকলেও ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সপ্তাহের যে কোনো একদিন ছুটির দিন নির্ধারণ করে ফলে ঈদের দিনে একটা হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয় ছুটি নিয়ে।

এর আগে করোনার মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে প্রবাস জীবনে। সবচেয়ে সাদামাটা ঈদ কোনো রকম নামাজ আদায় করে যে যার যার মতো স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে কারণ সরকারের কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়ার ফলে কেউ কারো সঙ্গে আলিঙ্গন বা কুশল বিনিময় করতে পারেনি।

স্বাভাবিক ঈদে যেখানে আনন্দ নেই জটিল পরিস্থিতিতে কি আর আনন্দ হবে। প্রবাসে দেশের মতো যে উৎসবমুখর পরিবেশ তা কোনো জনমেই পাওয়া যাবে না এমন চিরন্তন সত্য মেনে বাকি জীবন প্রবাসে কাটাতে হবে। এত কিছুর পরেও বলব নিরাপদ জীবন নিয়ে বেশ ভালো আছি।

ভিনদেশেও কোনো ভয় সংকোচ ছাড়া একটি নিশ্চিত নিরাপত্তায় জীবন কেটে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপে স্বাধীন ভোগবিলাস করা যায় যদিও মধ্যপ্রাচ্যে ঈদের আনন্দ আছে কিন্তু ব্যক্তি জীবনে কোনো স্বাধীনতা নেই। কারণ নিজের পাসপোর্টটা পর্যন্ত মালিকের কাছে রেখে দিতে হয়।

আমার এক যুগের বেশি ইউরোপ জীবনে বেশির ভাগ ঈদ হয়েছে কর্মদিবসে যার ফলে কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে নামাজ পড়ে আবার কাজে চলে যেত হয়েছে। এই হলো প্রবাস জীবনের ঈদ। এরপরও বলব ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট থাকুক মুসলিমদের মধ্যে।

ধর্ম-বর্ণ সবশেষে যেন শান্তিময় জীবন বর্ষিত হয় দেশ বিদেশের সবার মাঝে। ঈদুল ফিতরের না বলা কিছু কথার মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে যেন কোনো প্রবাসী কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নজর দিলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো সরকারের প্রতি।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]