২০৩০ সালের মধ্যে বিদেশিকর্মী নির্ভরতা কমাবে মালয়েশিয়া
বাংলাদেশসহ ১৫ দেশ থেকে বিদেশিকর্মী নিয়োগ করে থাকে মালয়েশিয়া। এর অন্যতম শর্ত থাকে চুক্তি শেষে বিদেশি কর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া। কর্মীদের বয়স ১৮-৪৫ বছর হওয়ায় সাধারণত নিয়োগকর্তারা বিদেশি কর্মীদের নিযুক্ত করার সুযোগ পায়।
মালয়েশিয়ায় বিদেশিদের ব্যাপক উপস্থিতি, নিজস্ব ব্যাবসা ও বসতি এলাকা গড়ে তোলার ফলে স্থানীয়রা বিদেশিদের বিষয়ে সরকারের দেখভাল করা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সরকার স্থানীয়দের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে বিদেশিকর্মী নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পরিকল্পনা নিয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর এমনটি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী রাফিজি রামলি।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের আগমন রোধে ‘আলি বাবা’ বিরোধী আইনের কথা ভাবছে সরকর। আলি বাবা জাতীয় কোম্পানি কিছু শর্ত পূরণ না করেই অবৈধভাবে বিদেশি কর্মীদের কাজ দেয়।
প্রস্তাবিত ‘আলি বাবা বিরোধী’ আইনটি বিদেশি শ্রমিকদের দিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধা দেওয়ার জন্য সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তার মধ্যে একটি হবে। সামাজিক মাধ্যম এক্স-ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রতি উত্তরে তিনি এসব পোস্ট করেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্স ব্যবহারকারী মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, সরকারের দেওয়া ভর্তুকি থেকে উপকৃত পাওয়া বিদেশিদের ব্যাপক আগমন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে কোনো আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে কি না। রাফিজি বলেছেন, এটি একটি জাতীয় ইস্যু, বিদেশি কর্মী সমস্যা নয়।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কয়েক দশক আগে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে বিদেশি কর্মীদের আগমন ঘটে। কারণ বিদেশি কর্মীদের ওপর আমাদের নির্ভরতা আছে। নিয়োগকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলে নিয়োগকর্তারা বলেন, স্থানীয়রা নির্দিষ্ট সেক্টরের (থ্রি ডি কাজ) কিছু কাজ করতে চায় না। ফলে বিদেশিকর্মী নিয়োগ করতে হয়।
‘যখন অনেক বিদেশিকর্মী থাকে, তখন আমাদের নিজস্ব লোকেরা (স্থানীয়) ব্যবসা পরিচালনার জন্য অবৈধভাবে জায়গা ভাড়া দেয় এবং লাইসেন্স দেয়, রাফিজি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী রাফিজি রামলি। ছবি- সংগৃহীত
‘বেতন প্রদানও একটি কারণ, কিন্তু এখন ন্যূনতম মজুরি থাকার কারণে, পারিশ্রমিক প্যাকেজ আগের চেয়ে বেশি। তিনি যোগ করেন ‘আলি বাবা-বিরোধী’ আইনটি চলমান শ্রমবাজার সংস্কার এবং আসন্ন মালয়েশিয়া পরিকল্পনা (এমপি) এর সাথে সমন্বয় করবে। মূলত ১২তম মালয়েশিয়া পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) বিদেশি কর্মীদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সকল আইন ও প্রগ্রাম বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। আসন্ন ১৩ তম মালয়েশিয়া পরিকল্পনায় (২০২৬ -২০৩০) বিদেশি কর্মী নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্য থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।
শ্রমবাজার সংস্কারের জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রগতিশীল মজুরি, একাডেমি ইন ইন্ডাস্ট্রি প্রোগ্রাম এবং বহু-স্তরীয় শুল্কের মাধ্যমে বিদেশি কর্মীদের পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা। ‘অর্থ মন্ত্রণালয় যে ১৩তম মালয়েশিয়া পরিকল্পনা তৈরি করছে তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিদেশি শ্রমিকদের হ্রাস করার লক্ষ্য চূড়ান্ত করবে।
‘এই সবগুলোকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে যাতে বিদেশিকর্মীদের ওপর বেশি নির্ভরশীল সেক্টরগুলিতে কোনও কঠোর প্রভাব না পড়ে। নিয়োগকর্তা এবং শিল্পের কাছে আমার বার্তায় উল্লেখ করেছি যে এটি আসছে কারণ আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারি না। কৃষি, নির্মাণ, সেবা, প্ল্যান্টেশন, মাইনিং এবং ম্যানুফ্যাকচারিং- এই ৬টি সেক্টরে ১৫টি দেশ থেকে অদক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে থাকে।’
বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা ও সততার কারণে নিয়োগকর্তাদের প্রথম পছন্দ হলেও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় যা কর্মীকে ঋণে আবদ্ধ করে এবং মানবপাচার ও জোরজবরদস্তি শ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে কাজ করছে।
বিদেশি কর্মীদের জন্য রিক্রুটমেন্ট (নিয়োগ), এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) এবং রিপাট্রিয়েশন (প্রত্যাবর্তন) এই তিন শর্তের যে কোনো একটির প্রতিপালন না করলেই অবৈধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ায় দেওয়া বৈধকরণ এবং নিজ দেশে ফেরত যাবার কর্মসূচি দিয়ে থাকে। যা এখনও চলমান রয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ হওয়ার এবং দেশে ফেরত যাবার রেকর্ড আছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত অভিযানে শর্তভঙ্গ করে অবৈধ হওয়া বিদেশিদের গ্রেফতার, শাস্তি ও নিজ দেশে ফেরত প্রেরণ করায় এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের কারণে মালয়েশিয়ায় আগমন শ্লথ হওয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে।
বিপরীতে নেপালের কর্মীর অবৈধ হবার হার খুব কম এবং আগমন অব্যাহত থাকায় এখন প্রথম অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লিখিত দুটি কারণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অভিযোগ উত্থাপন হলে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রায়ই বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার নজির রয়েছে।
এমআরএম/জেআইএম