বঙ্গ সম্মেলন
শিল্পীদের অবমাননায় ছিঃ ছিঃ রব
চরম অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২ জুলাই রাতে শেষ হয়েছে ৪৩তম বঙ্গ সম্মেলন। ভারতের রাষ্ট্রীয় পদক পদ্মভূষণপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী জয়িতা চক্রবর্তীসহ অনেক শিল্পীকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি নির্দিষ্ট সম্মানীও দেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার জন্ম হয়েছে। নর্থ আমেরিকা বেঙ্গলি কনফারেন্সের (এনএবিসি) এবারের আয়োজনটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রর নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর একটি হোয়াটসঅ্যাপ খুদেবার্তা স্ক্রিনশট আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কণ্ঠশিল্পী জয়িতা চক্রবর্তী ৪ জুলাই দুপুরে ফেসবুক লাইভে আমেরিকায় আসার পর থেকে তার সঙ্গে প্রতিটা বিষয়ে যে ধরনের অব্যবস্থাপনা এবং অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে তা তুলে ধরেন। দুটি বিষয়ে হাজারো নেটিজেন আয়োজকদের ধিক্কার ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গ সম্মেলনে অব্যবস্থাপনা
৩ জুলাই রাতে ভাইরাল হওয়া পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দেখা যায়, তিনি বলেছেন, আমেরিকায় আসার প্রথম দিন থেকে আমার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা হয়ে আসছে। এই ৭১ বছর বয়সে আমি এখানে আসতে চাইনি। সংগঠক অভীক দাশগুপ্ত অন্তত ৫০ বার কল করে নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত আমার চুক্তি করা সম্মানীয় দেওয়া হয়নি। আমরা যখন নিজেরা কেএফসি খেয়ে ফেলেছি, বিকেল চারটায় এসেছি তারপর খাবার। হোটেলে ঢুকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। আগামীকাল চলে যাব। এখনো দেখা হয়নি আহ্বায়ক পার্থ মুখার্জি এবং অন্য কারও সঙ্গে। অগণিত বার ফোন করেছি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। তারপরের দিন সকাল সাড়ে সাতটায় ফ্লাইট, কেউ গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেবে কি না তাও জানি না। কী করবো তাই ভেবে পাচ্ছি না।
‘ভারতের কিংবদন্তি শিল্পীকে যদি এমন চিঠি লিখতে হয়, তাহলে বেঙ্গলি কনফারেন্স করে লাভ কী? এই অসম্মানটুকু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রাপ্য বুঝি! বাঙালি আর কত নিচে নামবে?’ বলে মন্তব্য করেন কলকাতার অভিবাসী রাহুল রাহমান।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে মঞ্চে জায়েদ খান, দর্শকের ‘ভুয়া ভুয়া’ চিৎকার
গানের প্রসঙ্গ ছাড়া সচরাচর জয়তী চক্রবর্তীকে দেখা যায় না লাইভে কথা বলতে। এবার তিনি প্রতিবাদী হয়ে বলেছেন বঙ্গ সম্মেলনের শিল্পীদের অবমাননা করার কথা। লাইভে তিনি বলেছেন, আয়োজকরা বিশেষ করে যিনি শিল্পীদের দায়িত্বে ছিলেন অভীক দাশগুপ্ত কাউকে মানুষ বলেই মনে করেননি। যা-তা ব্যবহার করেছেন শিল্পীদের সঙ্গে। হোটেলে রাতের খাবার দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ শিল্পীকে চুক্তি অনুযায়ী সম্মানী দেওয়া হয়নি। বঙ্গ সম্মেলনের প্রতিটি ধাপে বিশৃঙ্খলতার চিত্র তুলে ধরেন লাইভে।
সংস্কৃতিকর্মী ফাহিম সব্যসাচী বলেন, সব অনুষ্ঠানেই শিল্পীদের যথার্থ সম্মান বজায় রাখা উচিত। না হয় সাধারণ দর্শক-শ্রোতা আয়োজকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। কেননা আমেরিকায় প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত প্রতিটি শিল্পীরই অগণিত ভক্ত-শ্রোতা আছেন।
চরম অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শুক্রবার (৩০ জুন) শুরু হয়েছিল ৪৩তম বঙ্গ সম্মেলন। নর্থ আমেরিকা বেঙ্গলি কনফারেন্সের (এনএবিসি) এমেরিটাস চেয়ারম্যান প্রবীর রায় বলেছিলেন, আমি প্রথম বঙ্গ সম্মেলন শুরু করে এ পর্যন্ত আছি। ৪২ বছরের বঙ্গ সম্মেলনে এমন বিশৃঙ্খলা পরিবেশ কখনো তৈরি হয়নি এজন্য সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
আরও পড়ুন: জেমসে মাতলো নিউইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রে কলকাতার অভিবাসীদের এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক গৌতম দত্ত শনিবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় বঙ্গ সম্মেলনের প্রধান মঞ্চে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনিবার্য কারণবশত বাংলাদেশ থেকে আগত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শুধু এই অনুষ্ঠান নয় বঙ্গ সম্মেলনের ওয়েবসাইটে নতুন যে অনুষ্ঠান সূচি দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা গেছে অন্তত ৪৫ ভাগ অনুষ্ঠান বাদ পড়েছে। ২ জুলাই জাগো নিউজে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর চঞ্চল ও শাওনকে মঞ্চে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গ সম্মেলনের আহ্বায়ক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, প্রধান সংগঠক অভীক দাশগুপ্ত এবং প্রধান সমন্বয়ক গৌতম দত্তসহ অন্যান্য সংগঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এমআরএম/এএসএম