কুয়েতের ফাইলাকা দ্বীপে একদিন

সাদেক রিপন
সাদেক রিপন সাদেক রিপন , কুয়েত প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ১১ জুন ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

আরব উপসাগরে নৌকায় ভ্রমণ করার সময়, কুয়েত উপসাগরের প্রবেশদ্বার থেকে ফাইলাকা দ্বীপটি চোখে পড়ে। ফাইলাকা একটি কুয়েতি দ্বীপ, আরব উপসাগরের কুয়েত সিটির উপকূল থেকে ২০ কিমি দূরে অবস্থিত। ভ্রমণকারীদের জন্য দ্বীপটি যেন পর্যটক চুম্বক হয়ে উঠছে।

দ্বীপটিতে নৌপথে ছোট জাহাজ, অথবা বোটে যেতে হয়। এই দ্বীপের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। ফাইলাকা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি বিভাগের নিজস্বতা আছে। এখানে রয়েছে ট্যুরিস্ট পার্ক, ফ্যামিলি পার্ক, হেরিটেজ পার্ক, স্যানিটোরিয়াম, হোটেল, সুইমিং পুল, তাঁবু, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি।

পর্যটকদের জন্য ছোট রিসোর্টও রয়েছে যারা রাত বা সপ্তাহান্তে থাকার জন্য বেছে নেয়। দ্বীপটি বৈদ্যুতিক স্কুটার ভাড়া করা, জাদুঘর পরিদর্শন, কায়াকিং, সৈকতে ভোজন এবং ঘোড়ার আস্তাবল পরিদর্শন করা থেকে শুরু করে পারিবারিক-সময় কাটানোর জন্য মনোরম পরিবেশ।

ট্যাঙ্ক-বোন ইয়ার্ড এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কাঠামোর সঙ্গে দ্বীপটির ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ফাইলাকা প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের বসবাস ছিল এবং মেসোপটেমিয়া এবং উপসাগরীয় উপকূল বরাবর অন্যান্য সভ্যতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্টপ ছিল। খনন কার্যক্রম খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের হেলেনিস্টিক যুগ পর্যন্ত একটি সভ্যতা আবিষ্কার করে, যেখানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে ইকারুস নামে একটি গ্রিক উপনিবেশ তৈরি করেছিলেন।

ফাইলাকা দ্বীপে বসন্তকালকে স্থানীয় কুয়েতি ও দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। কুয়েতের মূল ভূখণ্ড থেকে ফাইলাকার বেশ আলাদা ইকোসিস্টেম রয়েছে এবং এর উদীয়মান ফুল এবং পরিবর্তিত তাপমাত্রা খুবই সতেজ। যদিও দ্বীপের অবকাঠামো দুর্বল রয়ে গেছে, ফাইলাকা মাছ ধরা, বোটিং, সাঁতার কাটা, পাল তোলা এবং অন্যান্য জল খেলার ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে শুরু করেছে কুয়েত সরকার।

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক তার প্রতিবেশী দেশ কুয়েতের ওপর দুইদিনব্যাপী ‘কুয়েত আক্রমণ’ অপারেশন পরিচালনা করে। এর ফলে দীর্ঘ সাত মাসব্যাপী দেশটি ইরাকের অধীনে ছিল। এছাড়া ইরাকের জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কুয়েত থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাতিসংঘের সম্মিলিত সামরিক জোট সামরিক হস্তক্ষেপ করে।

ফলশ্রুতিতে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ফলাফলস্বরূপ ইরাকি বাহিনী কুয়েত থেকে বিতাড়িত হয়। ইরাকি বাহিনীর যুদ্ধে ব্যবহৃত ট্যাংক, কামান,যুদ্ধে বিধবস্ত পুরান ঘর বাড়ি স্থাপনাগুলো রয়ে গেছে যুদ্ধ চলাকালীন যেমন ছিল তেমন। ফাইলেকা দ্বীপে রয়ে গেছে যুদ্ধ বিধবস্ত সকল চিহ্ন। এই দ্বীপে গেলে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকরা অনুভব করতে পারে দুই দেশের যুদ্ধে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় সেটা বাস্তব চিত্র।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]