লাল দোপাট্টা
আম্মিজান, আমারে ডাকছেন?
জ্বি নবাবজাদী, এত্ত বড় ধামড়ি মাইয়া হইছস, কই আমরে নাস্তা রেডি করতে হাত লাগাই বো, তা না উনি বিয়ান বেলা ফুড়ুৎ, কই গেছিলি...
কই আবার গেলাম, গলির মোড়ে ছেফালীর লগে এট্টু কতা কইবার লাগছিলাম, আম্মিজান কি করণ লাগবো কন দেহি, রুটি লাগামু তাওয়ায়... চান্ডি ফুটছেনি।
‘হ, দে আর শোন চায়ের পাতিলও চড়ায় দে, আমি এট্টু পান মুখে দিয়া আইতাছি...’
দুই দিন পর শুক্রবার সকাল
কি রে ছিমুইল্লা ছুক্কুরবার সকাল সকাল যে...
শিমুল এসেছে এলাকার বড় ভাই সিরাজের কাছে তার মোটরসাইকেলটা ধার নিতে, সিরাজভাই বাইকটা দিলে পারুলরে নিয়া বাইকে কইরা ছিনেমা দেখতে যাবে, পারুল তখন তার অনেক কাছে বসবে।
ভাবতেই শরীরে কেমুন ঝাঁকি আসবার লাগছে...
‘বড়ভাই বিকেলে এট্টু বাইকডা দেওন লাগবো, সন্ধ্যার মধ্যেই দিয়া যামু’
কিল্লাই?
ছিনেমা দেখতে যামু
তা যাবি, মোটরসাইকেল লাগবো কিল্লাই?
শিমুল কিচ্ছু কইলো না, একটু হাসলো শুধু
ওহ, বুচ্ছি..
আইচ্ছা, বাদ জুমা আয়া লইয়া যাছ...
আর শোন, ছাতটার ভেতরে দিয়া যাইস কইলাম, আটটায় নয়া ঢাকা যামু।’
‘জি ভাইজান, আমি জুমা পইড়া আইসা নিয়া যামু...’
শিমুলের খুশিতে নাচতে মন চাইতাছে...
দুপুর পর আয়নার সামনে পারুল চুলে বেণী করছিল, ছোটবোন বকুল জিজ্ঞাসা করলো কিধার যাও এইবেলা হুনি?
অনামিকার ডগা দিয়ে চোখে কাজল দিতে দিতে পারুল বললো ছেফালীর লগে ছিনেমা দেখতে, আম্মিরে কইবি না কইলাম
হ, আমি জানি ছেফালী কেডা...
পারুল অন্য চোখে কাজল দেওয়া বাদ দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো ছেফালীর দিকে, অই ছেমরি তু্ই কি জানস? খালি বেশি কতা কয়।
এই যে ছেফালী আছলে ছিমুল ভাই...
চুপ, একদম চুপ ছেমরি, যা কইছস ভুইলা যা, আর একবার ও কইবি না। আম্মিজনের কানে গেলে মাইরা ফেলবো আমারে
হুনবো না কেউ , তুমি যাও...
রোজ যখন ফিল্ডিং মারবার যাও তখন আম্মিজানরে কে আগলায় থোয় একবার ও মাথাত আসে না?
এমনই ডুবা ডুবছো....
পারুল লাল দোপাট্টা গায়ে চড়াইতে চড়াইতে ফিক করে হেসে দিলো, আইচ্ছা যাই... তোর লাগি কি আনমু ক?
কিচ্ছু লাগতো না, ঘুস খাই না, যা করছি মায়া কইরা করছি, তোমাগো দুইজনের শাদী হইলে জব্বর মানাইবো, দুজনেই বিউটিফুল
পারুল হাসলো, গজদাঁতের হাসি...
মোড়ের মাথায় শিমুল জিনসের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে দাঁড়ানো, পারুলকে আসতে দেখে ধাক্কা খেলো, কি সোন্দর দেখতে মাইয়াডা, এক্কেরে লাল পরীর লাহান...
পারুল বললো কই! গাইলি না তো, তেরা লাল দুপাট্টা...
তোরে দেইখা জবান বন্ধ হইয়া গেছেগা..., মাছাল্লাহ কি সোন্দর তু্ই...
হইছে চল যাই, তাড়াতাড়ি ফিরা লাগবো বাড়িত
ল যাই, সেরাজ ভাইয়ের বাইক আনছি, জোরে চালাইলে ডরাইস না, আমারে শক্ত কইরা ধরিস।
জোরে চালাবি কিল্লাই? আস্তে যাবি
ওরা মোটরসাইকেল এ করে রওনা হলো, পৌঁছানোর পর শিমুল পপকর্ন আর পেপসি কিনে ঢুকলো ছিনেমা হলে, ছিনেমা প্রায় শুরু....
শিমুল পারুলের কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো, তোরে আইজ বেশি বিউটিফুল লাগতেছে...
পারুল বললো গজ দাঁতের হাসি দিয়ে বললো, আমি কেমুন দেখতে সেইডা আমি জানি, এখন ছিনেমা দেখপার দে...
পীড়িত পরে দেখাইস।
শিমুল কপাল কুচকায় বললো, তু্ই কি আমারে বিয়ার পরেও তু্ই কইরা কবি?
নাহ, আপনি করে বুলাবো, স্বামী সম্মানের জিনিস, আম্মিজান বলছে... খুশি হইছোস?
ছেমরি তু্ই ভালো হইলি না,
মুভি দেখ...
কিছু সময় পর...
কিরে কানতাছোস কেন?
নায়ক নায়িকার কষ্ট দেইখা, তু্ই বুঝবি না।
আইচ্ছা দুনিয়া ভরা মাইনছের খালি কষ্ট, ছিনেমায় এট্টু শান্তি দেখান যায় না?
খারাপ লাগলে দেহন লাগতো না, চ যাই..., তোর কান্দাকাটি দেখবার পারুম না।
পারুল মুখ গোমড়া করে উঠে দাঁড়ালো... অন্ধকার চারপাশে।শিমুল পারুলের হাত ধরে বের হয়ে আসলো, তখনো সন্ধ্যা হয়নি...
আইসক্রিম খাবি?
না, বাড়িত চ, বকুলে ফোন দিসিলো, মেসেজ রাখছে... তাড়াতাড়ি যাইবার কইছে, আম্মিজান আমার খোঁজ করতাছে
ভাবছিলাম আর একটু থাকমু, দুইডা বাতচিৎ করমু, আইচ্ছা চল তাইলে...
না, আরেকদিন বাড়িত চল
আইচ্ছা চিন্তা করিস না, শক্ত কইরা ধরিস কইলাম, তাড়াতাড়ি যামু...শিমুল বাইক স্টার্ট দিলো...
হাওয়ার গতিতে চলছে।
পারুল পেছন থেকে শক্ত করে শিমুলকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো...
‘রাস্তাডা যদি না ফুরাইতো’
শিমুলের হঠাৎ কি হলো সে জানে না, পুরো শরীর শিহরণ বয়ে গেলো, সামনে কিছু দেখছে না, মনে হলো আকাশে ভাসছে....প্রকাণ্ড শব্দ হলো।
দুজনেই ছিটকে পড়লো একপাশে, কিছু বুঝবার ওপর দিয়ে লোকাল বাস পেরিয়ে গেলো...
আশপাশে মানুষ জমে গেছে...
লাল কামিজ, লাল দোপাট্টা, সাদা সার্ট, পিচঢালা পথ লাল রক্তে মাখামাখি...
শিমুল রক্তাক্ত চোখ বন্ধ করার আগে পারুল বলে ফিসফিস করে একবার ডাকলো....
পারুলের নিথর ঠোঁট আর গজদাঁত যেন হেসে উত্তর দিলো কইছিলাম না, হাম সাথ সাথ মারেঙ্গে।
এমআরএম/এমএস