ইইউতে শরণার্থী স্বীকৃতি পেলে কি ফ্রান্সে থাকতে পারবেন?

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ২২ মে ২০২৩
প্যারিস অঞ্চলে অবস্থিত ফরাসি আশ্রয় বিষয়ক দপ্তর অফপ্রার সদর দপ্তর। ছবি- ইনফোমাইগ্রেন্টস

গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিরা নানা কারণে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর হতে চান। সুরক্ষা পাওয়া এসব ব্যক্তিরা ফ্রান্সে আবারও আশ্রয় আবেদন করার সুযোগ আছে কিনা তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

নিজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ও ভাষাগত দক্ষতার কারণে গ্রিসসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশে রিফিউজি স্ট্যাটাস পাওয়া ব্যক্তিরা ফ্রান্সে আসতে চান। এই প্রক্রিয়াটি অসম্ভব নয়, তবে বেশ জটিল। এক্ষেত্রে শরণার্থীদের কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে।

প্রথমত, কোন ব্যক্তি যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পেয়ে থাকেন (উদাহরণস্বরূপ গ্রিসে) এবং তিনি যদি ফ্রান্সে আসতে চান সেক্ষত্রে তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের ফরাসি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করে দীর্ঘস্থায়ী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর অফপ্রার সিনিয়র কর্মকর্তা সোফি পেগলিয়াসকো বলেন, একটি রাষ্ট্রের সুরক্ষা দেওয়ার অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যেকোনো দেশে বসতি স্থাপনের স্বয়ংক্রিয় অনুমতি দেয় না।

অর্থাৎ, একটি ইইউ দেশের শরণার্থী মর্যাদা অন্যদেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তরযোগ্য নয়।

একজন বিদেশি নাগরিককে প্রথমত চাকরি, পড়াশোনা কিংবা পারিবারিক সংযোগ দেখিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী ফরাসি ভিসা নিতে হবে।যেটি দিয়ে সর্বোচ্চ ৯০ দিন ফ্রান্সে বৈধভাবে অবস্থান করা যাবে।

এই সময়সীমার মধ্যে ফ্রান্সের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ওই ব্যক্তি আশ্রয় আবেদন দায়ের করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অন্যসব আবেদনকারীর মতো তাকেও ফরাসি প্রেফেকচুরের যাবতীয় কাজ এবং অফপ্রায় আশ্রয়ের সাক্ষাৎকার দিতে হবে।

তবে অফপ্রায় সাক্ষাৎকারের সময় ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই আগে কোনো ইইউ দেশে শরণার্থী মর্যাদা পেয়ে থাকলে, সেই বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।

সোফি পেগলিয়াসকো ব্যাখ্যা করেন, যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ব্যক্তিকে ফ্রান্সের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেয় (যদিও তিনি এরই মধ্যে অন্য দেশে শরণার্থী), সেক্ষেত্রে অফপ্রা ওই ব্যক্তির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। ভিসা পেতে সফল হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইনিভাবে শরণার্থী মর্যাদা স্থানান্তরের সুযোগ থাকে।

ভিসা পেতে ব্যর্থ হলে

দ্বিতীয়ত, কেউ যদি সংশ্লিষ্ট দেশের ফরাসি দূতাবাস থেকে ভিসা পেতে ব্যর্থ হন এবং তবুও ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন দায়ের করতে চান, তাকেও আশ্রয় পদ্ধতির সনাতন ও প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে, অন্যদেশে সুরক্ষা পাওয়ার ঘটনাটি ফ্রান্সে আশ্রয় না পাওয়ার কারণ হতে পারে।

সোফি পেগলিয়াসকো নিশ্চিত করেন, ফ্রান্সে থাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ছাড়া অনুপস্থিত হয়ে আশ্রয়ের আবেদন করলে, এরই মধ্যে প্রথম দেশে সুরক্ষা কার্যকর বলে বিবেচিত হবে। এমতাবস্থায় অফপ্রা ওই ব্যক্তির আশ্রয় আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা দিতে পারে।

ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ) এর মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আশ্রয় সুরক্ষার মান একই। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির সুরক্ষার নিশ্চয়তা আছে।

সিনডিএর মতে, আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে ইইউতে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার অধীনে থাকা ব্যক্তিদের অধিকারকে সম্মান করা হয়।

অন্যদিকে অফপ্রার মতে, ইতিমধ্যে সুরক্ষাপ্রাপ্ত হওয়ায় একজন ব্যক্তির নতুন করে সুরক্ষার প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে তিনি যেই দেশে আশ্রয় পেয়েছিলেন সেখানে তার নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়নি।

সবশেষ, অন্য সব আশ্রয়ের আবেদনের মতোই ইইউতে সুরক্ষা পাওয়া ব্যক্তিকেও ফ্রান্সে আবারও একটি পৃথক সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

আমরা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিস্থিতি খুব গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা করে থাকি। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ রয়েছে, বলেন সোফি পেগলিয়াসকো।

এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশে সুরক্ষা পেয়ে আবার ফ্রান্সে আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ।

সূত্র: জুলিয়া দ্যুমো/ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]