মনকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুসাহিত্য

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
কণ্ঠস্বরের প্রকাশক খান তবারক হাসান তপুর

জনপ্রিয় লেখিকা শায়লা জাবীন। এবারের বইমেলায় বের হয়েছে তার প্রথম উপন্যাস ‘নিচতারা’ ও দ্বিতীয় গল্পের বই ‘অমোচনীয় দাগ’। বই দুটি মেলায় এনেছে কণ্ঠস্বর প্রকাশনী। লেখক ইয়াকুব আলী বই ও মেলার বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন কণ্ঠস্বরের প্রকাশক খান তবারক হাসান তপুর সঙ্গে। কথপোকথনে উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গ।

মো. ইয়াকুব আলী: কেমন আছেন?

তবারক হাসান: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি

মো. ইয়াকুব আলী: কেমন যাচ্ছে এবারের একুশে বইমেলা?

তবারক হাসান: করোনার ধকল কাটিয়ে এবারই প্রথম বইমেলা পূর্ণরূপে হচ্ছে। দর্শনার্থীরা মেলায় আসছে, ঘুরছে, বই দেখছে, ভালো লাগছে। কিন্তু বই বিক্রির পরিমাণ ততটা না। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও এর অন্যতম কারণ, এছাড়া ছাপাখানার ব্যয়বৃদ্ধি। এরপরও যেসব পাঠক বই কিনছেন, তারা অনেকেই নিজেদের পরিচিত লেখকের বই কিনছেন আবার অনেকেই বই এর বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দিয়ে কিনছেন, কেউ অনুরোধে কিনছেন, কেউ বইয়ের প্রচ্ছদ, ভূমিকা দেখেও কিনছেন, এমন সবধরনের পাঠকই আছেন।

মো. ইয়াকুব আলী: আপনার স্টলে কোন বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে?

তবারক হাসান: লেখক এবং কবি শায়লা জাবীনের ‘নিচতারা’ বইটি বেশ বিক্রি হচ্ছে। তার কিছু আলাদা পাঠক রয়েছে। আমাদের প্রকাশনী থেকে শায়লা জাবীনের দুটো নতুন বই বেরিয়েছে। শায়লা জাবীনের প্রথম উপন্যাস ‘নিচতারা’ বইমেলার প্রথম থেকেই কণ্ঠস্বরের স্টলে আছে এবং পাঠক বইটিতে সাড়া দিচ্ছেন। একটি সাধারণ বাঙালি নারী চরিত্রকে ঘিরে উপন্যাসটির অন্যান্য চরিত্র ও কাহিনি গড়ে উঠেছে। এক বসায় শেষ করে ওঠার মতো বই। বইটি পড়তে গিয়ে মনেই হয়নি এটা তার প্রথম উপন্যাস, খুবই সাবলীল সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লেখা।

আর দ্বিতীয় গল্পের বই ‘অমোচনীয় দাগ’ মাত্র দুদিন হলো বইমেলায় এসেছে, এসেই বাজিমাত করছে বইটি। দাম্পত্য জীবনের নানান বাস্তব সমস্যাগুলো গল্পের আকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই বইয়ে। ভালো লেখার কদর এখনো আছে তার প্রমাণ এই বইটি। এখনো পাঠক প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ বইয়ের খোঁজ করেন কারণ বইটি মেলায় আসার আগেই অনেক পাঠক বইটির খোঁজ করেছেন দোকানে।

ইয়াকুব আলী: নিচতারা উপন্যাসটি পর্ব আকারে জাগো নিউজ ছাপিয়েছিল, কিন্তু উপন্যাসে আরও বর্ধিত আকারে এসেছে এবং পুরোটাই একসাথে, সেক্ষেত্রে পাঠকরা কেমন সাড়া দিচ্ছে?

তবারক হাসান: যারা ‘নিচতারা’ পর্ব আকারে পড়েছেন এবং পছন্দ করেছেন তারাই পুরো উপন্যাসটির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। তাই সাড়া পাচ্ছি বেশ। নিচতারা উপন্যাসের শেষ দিকে লেখক তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। পাঠক পরিতৃপ্ত হবেন। এছাড়া বেশ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা আছে উপন্যাসটিতে যা লেখক সহজভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ জন্য যারা নিচতারার পর্বগুলো পড়েছেন, তারা সবাই নিচতারা উপন্যাসটি সংগ্রহ করার পাশাপাশি অন্যদেরও উৎসাহ দিচ্ছেন পড়ার জন্য, সত্যিকারের পাঠক তৈরিতে এটা একজন সাহিত্যিকের স্বার্থকতা বলে আমি মনে করি।

ইয়াকুব আলী: ‘অমোচনীয় দাগ’ বইটি পারিজাত রহমান সিরিজের গল্প, যার বেশ কিছু প্রকাশ করা হয়েছে, অসম্ভব পাঠকপ্ৰিয় গল্পগুলো। অনেক আলোচনা এবং জাগো নিউজে অনেক মন্তব্য এসেছে, প্রতিটা গল্পই বাস্তব জীবন ঘনিষ্ঠ এবং শিক্ষামূলক, এই বইটির কাটতি কেমন?

তবারক হাসান: অমোচনীয় দাগ যেহেতু একটু দেরিতে বইমেলায় এসেছে তাই প্রচারও কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে অমোচনীয় দাগের মতো বই, বর্তমানে খুব বেশি লেখা হচ্ছে না। দাম্পত্য জীবনে কমবেশি সমস্যা থাকেই,সেগুলো বেশিরভাগ মাটিচাপা পড়ে সমাজের চাপে। এই বইটিতে দাম্পত্য সমস্যাগুলো একজন মনোচিকিৎসকের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রতিটি গল্পে। লেখক এই বইটিতে তার পেশাগত দক্ষতা এবং লেখকসত্তার দূরদর্শিতার চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।

jagonews24

‘আমরা বইমেলার স্টল থেকে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বইটি প্রচার করেছি, যারা বইটি কিনছেন তারাও একে অন্যকে বলছেন। যেহেতু এই বইটি একটি তথ্যসমৃদ্ধ মানসম্পন্ন বই তাই ‘অমোচনীয় দাগ’ নিয়ে আমরা আশাবাদী, এ ধরনের বইয়ের লেখক নিঃসন্দেহে সম্মানের দাবিদার। এই বইটি বর্তমান সময়ের দাম্পত্য সমস্যা ও নিরসনে একটি সামাজিক দলিল হয়ে ইতিহাসে স্থান পাবে বলে আমি মনে করি।’

ইয়াকুব আলী: প্রবাসী লেখকদের একটা অভিযোগ থাকে, তারা যেহেতু দেশ থেকে দূরে থাকেন, তাদের বই দেশে তেমন প্রচার পায় না বা বিক্রি হয় না লেখা যত ভালোই হোক। যেহেতু বেশিরভাগ সময় লেখকরা মেলায় উপস্থিত থাকতে পারেন না, ফটোগ্রাফে অংশ নিতে পারেন না, অটোগ্রাফ দিতে পারেন না সুতরাং বইমেলার প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

তবারক হাসান: আমার মনে হয়, লেখার মান যদি ভালো হয়, তাহলে লেখক কোথায় থাকছেন তা আসলে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। যেমন শায়লা জাবীন। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, তাই দেশে এবং প্রবাসে যেখানেই থাকুন আপনার প্রচার প্রায় সমানভাবেই হয়। তবে যে লেখক বইমেলার স্টলে থাকেন, তিনি সাধারণত তার বইয়ে অটোগ্রাফ দিয়ে থাকেন, পাঠকদের সাথে ছবি তুলে থাকেন যা ইদানীং পাঠকদের পছন্দের। কারণ এখন ফেসবুক বা ইনস্ট্রাগ্রামের যুগ, সবাই ছবি দিতে পছন্দ করেন। এ জন্য মেলায় উপস্থিত থাকা লেখক বা কবিদের বই একটু বেশি বিক্রি হয় এটা সত্যি তবে একটা মানসম্মত বই টিকে থাকে তার ভেতরের লেখা দিয়ে, বাইরের মলাট যত সুন্দর হোক বইয়ের ভেতরে কিছু না থাকলে সেই বই হারিয়ে যায় পাঠকের হৃদয় থেকে।

ইয়াকুব আলী: সর্বোপরি এবারের মেলার কী ধরনের বই বেশি চলছে বা পাঠকরা কেমন বই খুঁজছেন?

তবারক হাসান: পাঠকরা উপন্যাস এবং গল্পের বইয়ের দিকেই বেশি ঝুকছেন, একই সঙ্গে মানসম্পন্ন কবিতার বইও চলছে। অনুবাদ ও থ্রিলারের আলাদা পাঠক আছে। বলা যায় সবধরনের পাঠকই মেলায় আসছেন।

ইয়াকুব আলী: আপনার প্রকাশনীর আগামীর পরিকল্পনা কী?

তবারক হাসান: কণ্ঠস্বর প্রকাশনীর স্লোগান ‘জীবনের জন্য সাহিত্য’। আমরা এই মন্ত্র ধরেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই সাহিত্য হোক আমাদের যাপিত ও আগামী জীবনের প্রতিচ্ছবি। ২০২৩ এর বইমেলা উপলক্ষে আমরা ৩০টি নতুন বই প্রকাশ করেছি আমাদের প্রকাশনা থেকে। সেখানে রয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার জয়ী কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন কবিতার বই ‘ডায়োজেনিসের লণ্ঠন’। বাংলাদেশের প্রথম নারী এএসপি, যাকে দিয়ে শুরু পুলিশ ক্যাডারে নারীদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, ফাতেমা বেগমের আত্মজীবনী ‘আমার পুলিশ হওয়া’। এছাড়াও অনেক প্রবীণ ও নবীন লেখক। আমরা চাই ভালো লেখা প্রকাশ করতে। ভালো পাঠক তৈরি করতে। ভালো লেখাই ভালো পাঠক তৈরি করে।

ইয়াকুব আলী: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

তবারক হাসান: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]