মিশরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা শুরু
রাজধানীর নিউ কায়রোস্থ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ৫৪তম ‘কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা’। ৪৫ হাজার বর্গমিটার আয়তনের দৃষ্টিনন্দন এই প্রদর্শনী কেন্দ্রে রয়েছে সুউচ্চ পাঁচটি হল, বিশাল চত্বর, মনোমুগ্ধকর নানান সাজের পুষ্পোদ্যান, রং বেরঙের আলোয় সজ্জিত পানির ফোয়ারা।
এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৭ জন প্রকাশক। এর মধ্যে ৭০৮ জন মিশরীয় এবং ৩৪০ জন বিদেশি। মেলায় ইরিত্রিয়া, ভারত, ঘানা, কুয়েত, মরক্কো, আফ্রিকান পাবলিশার্স নেটওয়ার্ক, কুয়েতি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টার এবং আমিরাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে হাঙ্গেরি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক।
বইমেলার সুবিন্যস্ত স্টলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরকাড়া প্যাভিলিয়ন। বই বিক্রি ছাড়াও প্রতিদিন এসব প্যাভিলিয়নে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে চলে সভা–সেমিনার, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানান বর্ণাঢ্য আয়োজন। মিশরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এবার অতিথি দেশ কিংডম অব জর্ডান।
বইমেলায় কথা হয় বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও দূতাবাসের কাউন্সিলর ইসমাইল হুসাইনের সঙ্গে।
কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর বলেন, গত দুই বছর হলো আমি মিশর এসেছি। এই প্রথম কায়রো বইমেলা দেখতে আসলাম, পছন্দ হলে কয়টি বই কিনবো। বই সৃজনশীল মানুষের আত্মার খোরাক। বই মানুষকে একীভূত করে।
বইমেলায় জাগো নিউজের প্রতিনিধি আফছার হোসাইন || ছবি- জাগো নিউজ
তিনি বলেন, আজকাল বইপড়া মানুষের অভাব হলেও বইমেলা আনন্দের জন্য। বই পড়া বোধকে জাগিত ও শানিত করে। যদিও কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলার অধিকাংশ বই আরব জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতি প্রাধান্য।
ঢাকাস্থ মাকতাবাতুল আজহার লাইব্রেরি দেশের অন্যতম বড় আরবি বই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আজহারী প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পছন্দ করে বই কিনতে এসেছেন কায়রো বই মেলায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মিশর ও আরব দেশের বিভিন্ন সুনামধন্য লেখকদের আরবি কিতাবের যে সহজলভ্যতা দেখা যাচ্ছে এর অন্যতম উৎস হলো কায়রো বইমেলা। আমার প্রতিষ্ঠান মাকাতাবাতুল আজহার দেশের কয়েক হাজার কওমি ও আলিয়া মাদরাসা, সরকারি-বেসরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরবি বইয়ের চাহিদা পূরণ করে আসছে বেশ সুনামের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও কাগজের দাম আকাশ ছোঁয়া। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বইমেলা বইয়ের দাম প্রচুর বেড়ে গেছে। এ কারণ কিছুটা হতাশ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ; সে হিসেবে দেশের পাঠকদের জন্যও আরও কিছু দাম বাড়বে। সবমিলিয়ে বইয়ের দাম সাধারণ পাঠকদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ঢাকাস্থ মাকতাবাতুল আজহারের স্বত্বাধিকারী মওলানা ওবায়দুল্লাহ আজহারী || ছবি- জাগো নিউজ
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আম্মার হোসান মিমন বলেন, বাংলাদেশের পড়াশোনার গন্ডি পার করে ২০১৯ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসুলুদ্দিন বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করি, সেই থেকে কায়রোতে অবস্থিত বিশ্বের ২য় বৃহত্তম বই মেলায় এবং বই কেনার যাত্রা শুরু আমার।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে ডলারের রেট কম থাকায় বইয়ের দামও কম ছিল এখন ডলারের রেট বাড়ার কারণে বইয়ের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। তবে বই কেনার আগ্রহ কি আর টাকা দিয়ে মাপা যায়? এই বই মেলায় ইসলামিক বই থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষদের বই, উপন্যাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, কবিতা এবং বাচ্চাদের বই এর পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার বই সমূহ পাওয়া যায়। বই মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই টাকা সঞ্চয় শুরু করি, যেন কিছু বই সংগ্রহ করতে পারি এবং বইগুলোর মাধ্যমে কিছু উপকার লাভ করতে পারি।
আরব বিশ্বের প্রাচীন ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা ১৯৬৯ সালে কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রথম উদ্বোধন করেন। কালক্রমে এর পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্তমানে কোনো কোনো সমীক্ষায় একে ফ্রাঙ্কফুট বই মেলার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই মেলার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ইসলামী সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বইমেলাটি প্রতি বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে।
এমআরএম/জেআইএম