অভিবাসী চাপে ‘নাকাল’ ম্যানস্টন আশ্রয়কেন্দ্র

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২২
যুক্তরাজ্যের কেন্টে অবস্থিত ম্যানস্টন আশ্রয় কেন্দ্রের ভেতরে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা অভিবাসী শিশুদের দেখা যাচ্ছে। ছবি: পিকচার এলায়েন্স

ইংল্যান্ডের বন্দর শহর কেন্টে অবস্থিত ম্যানস্টন আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় চার হাজার অভিবাসী রয়েছেন। বিভিন্ন এনজিও, সাংসদ এবং আইনজীবীরা এই কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে এটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে এই তীব্র অভিবাসী চাপের জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের ভুল নীতিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সোয়াস ডেটাইনি সাপোর্ট (এসডিএস) টুইটারে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের ম্যানস্টন আশ্রয় কেন্দ্রের ভেতর অবস্থান করা শিশুরা কাঁটাতারের বেড়ার আড়াল থেকে চিৎকার করছে। তারা স্বাধীনতা! স্বাধীনতা! স্লোগান দিতে থাকে। অন্যান্য শিশুরা তাদের হাত নেড়ে বেড়ার ওপাশে জড়ো হওয়া অধিকার ও অভিবাসন কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিল।

প্রচারিত ভিডিওর এই অংশগুলো দেখে কেন্টের এই কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের মতে, এই কেন্দ্রটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে আশ্রয়প্রার্থীদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে খোলা হয়। সেখানে চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখার কথা থাকলেও বর্তমানে কেন্দ্রটিতে তিলধারণের জায়গা নেই।

সর্বাধিক ১৬০০ জনকে রাখার কথা থাকলেও এই অস্থায়ী কেন্দ্রে বর্তমানে চার হাজার লোক অবস্থান করছে। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

১ নভেম্বর, ব্রিটিশ অভিবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক জানান, ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর রাতের মধ্যে এই কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।

কেন্দ্রটিতে অভিবাসন সংস্থা ও এনজিও কর্মীদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। অভিবাসন সংস্থা এসডিএসের কর্মীরা রোববার (৩০ অক্টোবর) সেখানে গিয়েছিলেন। তারা একটি লাউডস্পিকার ব্যবহার করে অভিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

আশ্রয়প্রার্থীরা বেড়ার ওপার থেকে চিৎকার করে তাদের অবস্থান জানায়। অভিবাসীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ এই নিবন্ধন কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়া বা পাকিস্তান থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা জানান, তাদের বেশ কয়েক দিন ধরে ম্যানস্টনে আটক রাখা হয়েছে। অনেকেই ২০, ৩০ এমনকি ৪০ দিন ধরে এই অস্থায়ী কেন্দ্রে আটক রয়েছেন।

যদিও ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, অস্থায়ী কেন্দ্রে আটকের সর্বোচ্চ সময়কাল পাঁচ দিন।

‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে ম্যানস্টনের কেন্দ্রে সৃষ্ট চাপের জন্য দায়ী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসীদের আরও উপযুক্ত বাসস্থানে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছেন। যদিও মন্ত্রীকে এই সমস্যা নিয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের বিকল্প বাসস্থান না দিয়ে আইন বহির্ভূত কাজ করছে।

এর ফলে, যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি আটকের অভিযোগ সম্ভাব্য শত শত আইনি মামলা দায়ের হতে পারে।

চলতি সপ্তাহের সোমবার সন্ধ্যায়, সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এই স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করে ফের আগুনে ঘি ঢেলেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি উত্তপ্ত বিতর্কের সময় তিনি দাবি করেন যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসীরা আক্রমণ করছেন।

তিনি বলেন, আসুন আমরা ভান করা বন্ধ করি যে তারা সবাই দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থী। অভিবাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

অভিবাসন সংস্থা, এনজিও এবং অনেক বিরোধী সাংসদ তার এই বক্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণে ডোভারে অবস্থিত অভিবাসীদের একটি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে পেট্রল বোমা হামলার পরদিনই এই বক্তব্য দেন সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান।

লেবার পার্টির সাংসদ ইভেট কুপার বলেন, একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি জনসাধারণের এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে গুরুত্ব সহকারে নেন তিনি কখনোই একটি বিপজ্জনক আক্রমণের পর এ ধরনের উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না।

বিপজ্জনক পরিস্থিতি

গত ২৬ অক্টোবর ম্যানস্টন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট বর্ডারস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ইনস্পেক্টর ডেভিড নিল। তিনি কেন্দ্রের ভেতরে দুঃখজনক পরিস্থিতি দেখে তিনি বাকরুদ্ধ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন।

তার মতে, সেখানকার পরিস্থিতি সত্যিই বিপজ্জনক।

ম্যানস্টন কেন্দ্রে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীদের একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, এটি ব্রিটিশ ভূখন্ডে সত্যি একটি বড় মানবিক সংকটের ঘটনা।

এসওএএস ডিটেনি সাপোর্ট কর্মীদের মতে, আটক অভিবাসীরা জানায় তাদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে অন্তত আটজনের ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া একটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং সম্ভাব্য গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে স্ক্যাবিস নামে এক প্রকার চর্মজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে দাবি করেছে এসডিএস।

মূল প্রতিবেদন জুলি বুরদা। ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলায় ফরাসি থেকে ভাষান্তর মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]