জাতিসংঘে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবিতে কর্মসূচি
একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউর মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রিনিং সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আগামী ৩ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনা যেন ফলপ্রসূ হয় এবং যেসব সংগঠনের প্রচেষ্টায় গণহত্যার বিষয়টি জাতিসংঘের আলোচনার এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, সেসব সংগঠনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে টরন্টোতে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সংহতি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে টরন্টোর আলোচনা অনুষ্ঠানে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলোচনায় বক্তারা বলেন, এসব সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় ৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১ অক্টোবর, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী ব্যক্তি এবং সংগঠনের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর সন্ধ্যা ৭টায় সমাবেশে অংশ নেওয়াদের ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ সংলগ্ন ডেন্টোনিয়া পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনারে গিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে। সন্ধ্যা ৮টায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রিনিং সেন্টারে ৭১ এর গণহত্যা বিষয়ক একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই চলচ্চিত্র প্রদর্শন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এই প্রথম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতম, বীভৎস, বর্বর গণহত্যা ও জেনোসাইড নিয়ে আলোচনা হতে যাচ্ছে।
এই আলোচনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা এরই মধ্যে সোচ্চার হয়েছে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এই অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ইতিহাসের নৃশংস গণহত্যা ও জেনোসাইডের ভিডিও ফুটেজ, ফটোগ্রাফ, ছবি, দলিলপত্র এবং তথ্য উপাত্ত। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ-BASUG, ‘আমরা একাত্তর’ এবং ‘প্রজন্ম ৭১’-এর যৌথ আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ জেনেভার সদর দফতরে আগামী ৩ অক্টোবর বিকেল ৩টায় ৫১তম অধিবেশনে ৩নং আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করেছে।
এ উপলক্ষে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পৃথিবীব্যাপী ‘জেনোসাইড স্বীকৃতি আদায় সপ্তাহ’ উদযাপন করা হবে। জেনেভা ও নিউইউর্কের জাতিসংঘ ভবন ছাড়াও লন্ডন, টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ফ্লোরিডা, সিডনীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সমাবেশ ও মানববন্ধন তৈরি করা হবে।
টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস নাসির উদ দুজা, টরন্টো বাংলা বই মেলার আহ্বায়ক শেখ সাদী আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন সরকার বাচ্চু, পিডিআই কানাডার আহ্বায়ক বিদ্যুৎ রঞ্জন দে, কানাডা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল গফফার, উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুত রবিন, নাট্যসন্ধ্যার সুব্রত পুরু, ম্যাক এন্টারটেইনমেন্টের ম্যাক আজাদ, ছায়ানটের ঋতু মীর, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজির আরমান রশিদ, অন্যস্বরে রওশন জাহান ঊর্মী, অন্যমেলার আশারাফ আলী এবং বাংলাদেশ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থার নবিউল হক বাবলু।
নিউইয়র্ক থেকে ফোনে আলোচনায় অংশ নেন ‘আমরা একাত্তর’ এর সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক জিএস মাহবুব জামান। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।
এমআরএম/এমএস