পর্তুগালে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন সম্পন্ন
পর্তুগালে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন শেষ হয়েছে। ২৭ জুন রাজধানী লিসবনে পাঁচ দিনব্যাপী চলা এ সম্মেলন শুক্রবার (১ জুলাই) সমাপনী ঘোষণা করা হয়। এবার আয়োজক হিসেবে ছিল সাগরকন্যা খ্যাত দেশ পর্তুগাল ও কেনিয়া।
জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত উচ্চ পর্যায়ের দেশগুলো এবারের সম্মেলনে অংশ নেয়। এশিয়ার চীন, ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি অংশ নেয় বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সম্মেলনে সমুদ্রসীমা নিয়ে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছে। বাংলাদেশ এখন যৌথভাবে সম্পদ কাজে লাগাতে প্রস্তুত।
এ সময় দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা, বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দূষণ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মহাসাগর ও সাগরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সমুদ্রবিজ্ঞানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে নিরাপদে জাহাজ রিসাইক্লিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপেরও ঘোষণা দিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ উৎপাদন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।’
সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহাসাগরের পরিবেশ রক্ষায় করণীয় বিষয়াদি ছাড়াও বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কর্মশালায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলগুলো তাদের দেশের মতামত, পদক্ষেপ ও সমুদ্রের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। বলা হয়, মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় ও সমুদ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
২০২১ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ‘স্টেট অফ দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট’ প্রতিবেদন অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তাপ, মহাসাগরের অম্লকরণ ও গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব ২০২১ সালে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। সামুদ্রিক দূষণও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে শিগগিরই বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে।
মহাসাগরের পরিবেশ ঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ‘স্টেট অফ দ্য ওশান রিপোর্ট’ শিরোনামে একটি নতুন ফ্ল্যাগশিপ প্রতিবেদন চালু করেছে। সর্বসাধারণের প্রবেশযোগ্য করে সমুদ্রের বর্তমান অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত ও ওয়ান-স্টপ ওভারভিউ করছে- যা মহাসাগর রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সচেতন সমাজকে একত্রিত করতে উৎসাহ দিচ্ছে।
সম্মেলন শেষে লিসবনের একটি পাবলিক পার্কে স্থাপন করা স্থায়ী শহীদ মিনার পরিদর্শন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও প্রতিনিধি দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দেন।
এমআরএম/জেআইএম