সিডনিতে বসন্ত উৎসব

মো. আবুল কালাম আজাদ
মো. আবুল কালাম আজাদ মো. আবুল কালাম আজাদ , অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বসন্ত উৎসব। প্রাচীনকাল থেকে বাংলা বছরের সর্বশেষ ঋতু বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রকৃতি যখন তার দখিন-দুয়ার খুলে দেয়, বইতে শুরু করে ফাগুন হাওয়া। মধুর অমৃত বাণী শোনা যায় কোকিলের কণ্ঠে, রঙের উচ্ছ্বাস জাগে অশোক-পলাশ-শিমুলে। বেরিয়ে আসে শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, আর এসব ফুলে ফুলে ভ্রমর করে খেলা; তখনই যেন প্রবল বিক্রমে আগমন ঘটে রাজাধিরাজের, ঋতুরাজ বসন্তের।

পহেলা ফাল্গুন দিনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্ত্যলোকে অভিষেক ঘটে ঋতুরাজের, আর তাকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি নেয় এক বর্ণিল সাজ। গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা, নতুন ফুলের সমারোহ। সবাই যেন মত্ত শীতের শুষ্কতাকে প্রাণপণে আড়াল করার চেষ্টায়। অবশ্য ফুল যদি না-ও ফোটে, বসন্তের আগমনধ্বনিকে কোনোভাবেই চাপা দেয়া যায় না। কারণ কবি যে বলেই দিয়েছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

সিডনিতে বসন্ত উৎসব

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নবধারা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে রোববার দুপুরে ওয়ালী পার্কের হরিজন থিয়েটারে ‘বসন্ত বাতাসে’র ব্যানারে ফাল্গুন উৎসব উদযাপন করে। আবুল কালাম আজাদ খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন আবিদা সুলতানা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যান্টারবারি-ব্যাংকস টাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর কার্ল সালেহ।

সিডনিতে বসন্ত উৎসব

এসময় অতিথিরা বলেন, বসন্ত আসেই যেন আমাদের হৃদয়ে অকারণ খুশির দোলা দিতে। যেদিকে চোখ যায়, যেন রঙের রায়ট। এদিকে চোখ গেল তো গোধূলিরঙা পলাশ, আরেক দিকে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। দখিনের জানালা খুললেই মিষ্টি বাতাস আর সারাদিন নরম কুসুমের মতো রোদ। এমন দিনেই তো উৎসব জমে ওঠে। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বনের সূচনাও হয় এমনই এক ঋতুতে, যখন মানুষের মন ঠিক যেন কবিগুরুর ভাষায় ‘অলক্ষ্য রঙে'র ছোঁয়ায় অকারণের সুখে’ ভরে ওঠে।

সিডনিতে বসন্ত উৎসব

‘পাতাঝরা শুষ্ক শীতের শেষে আসে রঙে রঙিন বসন্ত। চারদিকে নতুন পাতা আর ফুলের সমাহার। বাংলার ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত। বসন্ত বারবার নানা রঙে ও নানা রূপে ফুটে উঠেছে হাজারও কবির কবিতায়, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। কখনও বন্দনা বসন্তের বাতাসের, তো কখনও আরাধনা বসন্তের ফুলের সুবাসের। এই সিডনিতেও মাঝেমধ্যেই শোনা যায় কোনো এক গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কোকিলের কুহু ডাক। বসন্তই তো ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে ওঠার দারুণ উপলক্ষ।’

অনুষ্ঠানে মেয়েরা হলুদ শাড়ি ও ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে আনন্দের ক্ষণটুকু লালন করে। বসন্ত উৎসবের গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পী নিতু। বাচ্চাদের খেলা ও পুরস্কারের আয়োজন ছিল। রঙিন ফটো সেশন ও ডিনার শেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]