প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ
মধ্য ইউরোপের একটি ছোট দেশ স্লোভেনিয়া। এর উত্তরে অস্ট্রিয়া, উত্তর-পূর্বে-হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পূর্বে ক্রোয়েশিয়া, পশ্চিমে ইতালি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ২৯ মাইল সীমারেখা বরাবর আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে দেশটি যুগোস্লাভিয়ার জোট থেকে বের হয়ে আসে এবং নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। নবীন এ রাষ্ট্রটি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, জার্মানি কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোর ভিড়ে স্লোভেনিয়ার মতো দেশের নাম সবসময় উপেক্ষিত থেকে যায়। উচ্চশিক্ষা কিংবা জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু নাগরিক স্লোভেনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। ধীরে ধীরে মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে উঠছে।
যদিও ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া কিংবা জার্মানির তুলনায় স্লোভেনিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি খুব একটা শক্তিশালী অবস্থানে নেই, তবে ইদানিং তৌসিফ রহমান নামক এক প্রবাসী প্রকৌশলীকে নিয়ে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাকাডেমিক ও পেশাগত যে কোনো দিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে তিনি সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি।
তৌসিফ রহমানের জন্ম ১৯৮৮ সালের ১২ জুন ৩৬০ আউলিয়ার দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেটে। শহরে তার বেড়ে উঠা। ২০০৫ সালে তিনি ব্লু বার্ড স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এস.এস.সি. এবং ২০০৭ সালে তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ২০০৯ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ২০১২ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পেশাগত জীবনেও তিনি অত্যন্ত সফল। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় তিনি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন।
দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতেও প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি ঢাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন মেট্রো রেল প্রজেক্টে ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে ইরাসমাস মুন্ডুস শিক্ষাবৃত্তির অধীনে পর্তুগালে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব মিনহো এবং স্লোভেনিয়াতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা থেকে সমন্বিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো মাস্টার্সে অধ্যয়ন করার সুযোগ লাভ করেন।
গত বছর কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স শেষ করার পর তিনি স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে অবস্থিত ইলিয়া আইসি নামক শীর্ষস্থানীয় কনসালট্যান্ট গ্রুপের অধীনে জিওবিআইএম ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন।
গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া কিংবা পর্তুগালের মতো দেশে বসবাস করার পরও ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কেনও তিনি স্লোভেনিয়াকে বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌসিফ রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে আমি ভীষণভাবে ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করি। যাযাবরের মতো পুরো বিশ্বটাকে আপন হাতের মুঠোয় পুরে ঘুরে দেখার স্বপ্নে আমি সব সময় বিভোর। নতুন কোনো দেশ কিংবা নতুন কোনো শহর ভ্রমণ করাটা আমার কাছে তাই সব সময় নেশার মতো।
তিনি স্লোভেনিয়াতে এ মুহূর্তে স্থায়ী হওয়ার মূল কারণ একটি, আর সেটি হচ্ছে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর কফির কাপ হাতে নিয়ে যখন জানালা দিয়ে বাইরের পৃথিবীকে দেখার চেষ্টা করি, সুউচ্চ আল্পস ও ডিনারাইডস পর্বতমালার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। ক্ষণিকের জন্য আমি শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলোকে দেখতে পাই, সিলেটের ছোট ছোট পাহাড়ের সঙ্গে মিশেছিল আমার শৈশব। স্লোভেনিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আল্পস ও ডিনারাইডস পর্বতমালার অংশবিশেষ আমাকে এতটাই বিমোহিত করে রাখে যে আমি এখন স্লোভেনিয়া ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তা করতে পারি না।
তিনি আরও যোগ করেন, যুক্তরাজ্য কিংবা অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষের ভাষা ইংরেজি এবং এ কারণে আমাদের অনেকের কাছে এ দুইটি দেশ ভীষণ পছন্দের। তবে আমি ছোটবেলা থেকে সব সময় ব্যতিক্রম ধাঁচের কোনো জিনিস খোঁজার চেষ্টা করতাম। অজানা কিংবা অচেনা কোনো বিষয়ের প্রতি আমার আগ্রহ সব সময় প্রবল। স্লোভেনিয়া আয়তনে যদিও খুব বেশি একটা বড় নয়, তবে দেশটি ভীষণভাবে গোছালো ও পরিচ্ছন্ন।
স্লোভেনিয়ানরাও জাতি হিসেবে অত্যন্ত বন্ধুবাৎসল। স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা না থাকলেও শুধুমাত্র ইংরেজির ওপর নির্ভর করে এখানে চলাফেরা করা সম্ভব। অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাজ্যের তুলনায় স্লোভেনিয়া অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও এ দুই দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়ার লাইফস্টাইল আমার কাছে যথেষ্ট নমনীয় মনে হয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্লোভেনিয়ায় কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। এমনকি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও টিউশন ফি অনেক কম। কিউএস ও টাইমস হায়ার এডুকেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে স্লোভেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ এগিয়ে।
ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ারও এদেশে সেভাবে নেই। ষাটোর্ধ্ব সিনিয়র সিটিজেন এবং তৃণমূল পর্যায়ের কিছু মানুষ ছাড়া স্লোভেনিয়াতে বেশিরভাগ অধিবাসী ইংরেজিতে অত্যন্ত পারদর্শী। এসব কারণে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্লোভেনিয়া একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে বলে তিনি এসব ব্যক্ত করেছেন। তবে এজন্য তিনি বেশ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি বলেন, ১৯৬১ সালে স্বাক্ষরিত হেগ অ্যাপোস্টাইল চুক্তিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব না থাকায় বাংলাদেশ থেকে ইস্যু করা কিছু ডকুমেন্ট অনেক সময় স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লিগালাইজড করতে হয়। স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ থেকে ইস্যু হওয়া কোনো ডকুমেন্ট লিগালাইজ করতে হলে প্রথমে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সেটিকে অ্যাটাস্টেড করতে হয় যা অত্যন্ত দুরূহ একটি বিষয়।
এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী অনেক সময় চাইলেও এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার সাহস পান না। যিনি এর আগে কখনও ইউরোপে আসেননি তার পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থান করে ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোনো ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেড করে লিগালাইজেশনের জন্য স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সে পাঠানোর বিষয়টি অনেকক্ষেত্রে অসম্ভবপর হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়াও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্লোভেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেভাবে স্কলারশিপ বরাদ্দ নেই। এসব সমস্যার কথা আমরা এরই মধ্যে ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও দূতালয় প্রধান তারাজুল ইসলাম ভাই এবং দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন রাহাত বিন জামান ভাইকে জানিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
স্লোভেনিয়া সে অর্থে বৃহৎ কোনো অর্থনীতির রাষ্ট্র নয়। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ হাঙ্গেরি কিংবা অস্ট্রিয়ার মতো স্লোভেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এখনও সে অর্থে বিকশিত নয়। এছাড়াও স্লোভেনিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ডানপন্থী মনোভাবের, এ কারণে দেশটির ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় তিনি বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সামনের দিনগুলোতে তাই স্লোভেনিয়াতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনের হার আগের দিনগুলোর চেয়ে কমে আসতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
তৌসিফ রহমানের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুগোস্লোভিয়ার সম্পর্ক বেশ পুরোনো। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যুগোস্লোভিয়া ছিল প্রথম দিকের কোনো দেশ যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি জানিয়েছিল। সত্তর কিংবা আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্যও অনেকে যুগোস্লাভিয়াতে এসেছেন। যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের সময় বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বিহাচে বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস আজও এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে স্মরণ করে।
দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সাবেক যুগোস্লোভিয়াভুক্ত দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক আগের মতো জোরালো নেই। স্লোভেনিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং সার্বিয়া এ ছয়টি রাষ্ট্রের কোনোটিতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই।
একইভাবে বাংলাদেশেও এসব দেশের কোনো দূতাবাস নেই। তাই আমি মনে করে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করার জন্য কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এ সকল দেশের মাটিতে যাতে বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাস স্থাপন করা যায় সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া।
স্লোভেনিয়াতে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ কেমন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পূর্ব ইউরোপের দেশ বিশেষত এক সময় যেসব দেশে কমিউনিজমভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ছিল সে সকল দেশ যেমন- হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড কিংবা ইউক্রেনের তুলনায় স্লোভেনিয়া অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে। স্লোভেনিয়ার অর্থনীতির একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টর থেকে। তাই আইটি রিলেটেড বিভিন্ন ফিল্ড থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা দক্ষ যে কোনো কাজের জন্য স্লোভেনিয়াতে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে দক্ষ কর্মী হিসেবে স্লোভেনিয়াতে পাড়ি জমাচ্ছেন। আগামী দিনে বাংলাদেশিরাও এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, তবে এজন্য সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রয়োজন। এছাড়াও বর্তমানে বেশ কিছু এজেন্সি স্লোভেনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলে বিভিন্নভাবে সাধারণ নাগরিকদের প্রলোভন দেখাচ্ছে যা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। এজন্য আমাদের সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
স্লোভেনিয়াতে বাংলাদেশকে কতটা মিস করেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্লোভেনিয়াতে সে অর্থে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশির বসবাস নেই। সব মিলিয়ে এদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা পঞ্চাশও হবে না। এছাড়াও এ মুহূর্তে আমরা যারা এদেশে আছি, বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যাকার বন্ধনও সেভাবে সুদৃঢ় করতে পারিনি। তাই বাংলাদেশের ইমেজ এখানে সেভাবে নেই। এমনকি বাংলাদেশি খাবারও এখানে সে অর্থে সহজলভ্য নয়।
স্লোভেনিয়াতে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে আমাদেরকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তারা সত্যি ভীষণ আন্তরিক, তারাজুল ভাই কিংবা রাহাত ভাই মাঝে-মধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমাদের যাবতীয় সমস্যা আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করেন। তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে হাহাকার থেকে যায়।
পরিবারের সদস্যদের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ে। বিশেষত সাতকড়া দিয়ে গরুর মাংশ থেকে শুরু করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অনেক দিন হল মুখে পড়েনি। সব ভালোর মাঝে এ জিনিসগুলো তাই শেষমেশ সব অনুভূতিকে শূন্য করে দেয়।
পরিশেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে তার কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হলে তিনি জানান, সবার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই আপনারা যে যে দেশে আছে সে দেশের আইন মেনে চলার চেষ্টা করুন। যে উদ্দেশ্যে বিদেশে গিয়েছেন সে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। আপনারা এ মুহূর্তে যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে থেকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করুন। কাজের মাধ্যমে নিজের অবস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের মর্যাদা যাতে সমুন্নত রাখা যায় সেদিকে সচেষ্ট হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও যোগ করেন, সম্প্রতি একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি স্লোভেনিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে সার্বিয়ার মতো দেশকে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই অনেকে এসব দেশে আসার পর কিছুদিন যেতে না যেতে পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি কিংবা ফ্রান্সে চলে যাচ্ছেন। এ ধরনের কোনো বিষয় এসব দেশে আমাদের ভাবমূর্তিকে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং ধীরে ধীরে ইউরোপে আমাদের ভিসা প্রাপ্তির হার অনেকটা কমে আসছে।
এছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনিবন্ধিত বাংলাদেশির সংখ্যাও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে গেছে যা সত্যি দুৰ্ভাগ্যজনক। তাই সব মিলিয়ে এখন থেকে আমাদের সকলের উচিত দক্ষ জনবল সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যবহারিকভাবে ইংরেজি চর্চার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। এছাড়াও সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
এমআরএম/এএসএম