সম্পর্কের মূল ভিত্তিই বিশ্বাস

আম্বিয়া অন্তরা
আম্বিয়া অন্তরা আম্বিয়া অন্তরা , যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত: ০৯:১১ পিএম, ০৩ জুলাই ২০২১
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. নিনা আহমেদের সঙ্গে লেখক আম্বিয়া অন্তরা

মানুষ সামাজিক জীব কিংবা মানুষ একাকী বাস করতে পারে না। সঙ্গের প্রয়োজনে মানুষ সম্পর্কে জড়ায় কিংবা গড়ে তুলে একটি সমাজ ব্যবস্থা। এ যে মেলবন্ধন কিংবা সম্পর্ক গড়ে উঠে কিছু মৌলিক পারস্পরিক মানদণ্ডে তেমনি এ সম্পর্ক টিকেও থাকে কিছু বিষয় বিবেচনার মাধ্যমে।

সম্পর্ক যার সাথে হোক এবং যেমনি হোক, একটি সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। যাদের সম্পর্কে বিশ্বাস যত বেশি, তাদের সম্পর্ক তত বেশি শক্তিশালি। বিশ্বাসের ঘাটতির ফলে বিভিন্ন সম্পর্ক ধ্বংস হয়ে যায়।

প্রেম, বিয়ে কিংবা যে কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলা কিংবা তৈরি করা নিয়ে নানাবিধ নেতিবাচক কথা আছে। ডেনিয়াল উইল্ডের মতো মনোবিজ্ঞানী বলেন ‘আপনি পার্টনার নির্বাচন করছেন মানে আপনি নিশ্চিত সমস্যা নির্ধারণ করছেন’। তবে এ সমস্যা কিংবা যুদ্ধ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ভ্যাক্সিনেশনের মতো কার্যকরী।

‘যদি সম্পর্কে জড়ানোর কিংবা বিয়ে করার পর প্রথম তিন বছরের মধ্যে আপনি ঝগড়া কিংবা ছোটখাট যুদ্ধের সম্মুখীন না হন তবে নিশ্চিত আপনি অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কে আছেন যা একটা সময় সম্পর্কচ্ছেদের কারণ হয়। তাই সামাজিক জীবের সূত্র মেনে মানুষের পার্টনার নির্বাচন করতে হয় কিংবা জীবন-যাপন করতে হয় যৌথভাবে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়।’

তবে এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্য পালনীয়। যেমন- ২০১২ এ ব্রিটেনভিত্তিক এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ৪০ ভাগ দম্পতি (যাদের বিয়ের বয়স ১৫-৩০ বছর হয়ে গেছে) প্রেমে মত্ত থাকেন এখনো একে অপরের মধ্যে। এমন সম্পর্কগুলোর ওপর গবেষণা করে তারা কিছু কারণ বের করেছেন। যেমন- পারস্পারিক বোঝাপড়া, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, অ্যাডভেঞ্চার, নিত্য-নতুন কিংবা চমকপ্রদ উপহার, শ্রদ্ধাবোধ এবং অবশ্যই দুই জনের গভীর ভালোবাসা।

‘সম্পর্কের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস হচ্ছে সেই নিরাপত্তা বলয় যেটা কিনা দুইজন মানুষকে পৃথিবীর আর সব সমস্যা ও বিপদ থেকে নিরাপদ রাখে। আর এই বিশ্বাস যদি কখনো একটু হলেও হালকা হয়ে যায় তাহলে যতটাই আপনি ভালোবাসুন না কেন আপনি আপনার সঙ্গীকে, সম্পর্কের শেষ দাগটা নির্ধারণ করা হয়ে যায় তখনই। তাই একে অন্যকে বিশ্বাস করুন।’

কেউ বলতে চান, সম্পর্ক টেকা না টেকার আসল কারণটা হচ্ছে বন্ডিং। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যে সমস্ত সম্পর্কে দুইজনের ভালোলাগা খারাপ লাগা, পছন্দ অপছন্দ এক, তাদের সম্পর্ক বহুদিন টিকে থাকে। আর যে সম্পর্কের মধ্যে এটা নেই সেই সম্পর্ক তাসের ঘরের মতো হয়। একটু হাওয়া দিলেই ভেঙে যায়।’

আসলে সম্পর্কের দুইজন মানুষ একে অপরের সঙ্গে থাকতে চায়। তাই তাদের মধ্যে মানসিক মিলটা খুব জরুরি হয়ে পড়ে। সেই একাত্মতায় যখন অপছন্দের কিছু আসে তখনই সমস্যা দেখা দেয়। আর তা ভেঙে যায়। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা উচিত যার সঙ্গে মনের মিল ঘটে।

গবেষকরা বলছেন, ভালোবাসার সম্পর্কে কেবল ভালোবাসা দেখানোটাই সবচাইতে বড় ব্যাপার নয়। ভালোবাসার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়, যেটি খুব বড় স্থানজুড়ে থাকে একটি সম্পর্কে, সেটি হলো শ্রদ্ধা। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। শুধু ভালোবাসার সম্পর্ক কেন, যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। তবে অন্যসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নিজ থেকে চলে আসলেও অনেকে ভালোবাসার মানুষটির ক্ষেত্রে এই শ্রদ্ধাবোধ দেখানোর কথা ভুলে যান। যেটি কিনা বেশ দুর্বল করে তোলে একটি সম্পর্ককে।

তাই একে অন্যের সব সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন। সম্পর্ক টিকে থাকার এতসব কারণের মধ্যেও আপনার একটাও প্রয়োজন না হতে পারে। আপনার জন্য প্রয়োজন যেটা কিংবা যা আপনার সম্পর্ককে দীর্ঘজীবী করবে আপনি সেটা নিয়েই চিন্তা করতে হবে কারণ সম্পর্ক আপনার টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আপনার। তবুও এতসব গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে সম্পর্ক আদতে টেকে থাকে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভরসা, ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]