ভ্রমণ-পিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে দুবাই
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনপ্রিয় ও প্রধান আকর্ষণীয় রাজ্যের নাম দুবাই। বিলাসবহুল জীবন-যাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্রালিকা, হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ নানা কারণে দুবাই ভ্রমণ-প্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে। পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় শহর দুবাই।
শপিং মল : আপনি দুবাই যাবেন আর শপিং মলে যাবেন না এমনটি হতে পারে না। ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও ব্যয়বহুল কিছু শপিংমলে, যেগুলো দুবাইতে অবস্থিত। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং মল ‘দুবাই মল’।
দুবাই মল : ‘দুবাই মল’ এক কথায় অসাধারণ। চোখ ধাঁধানো সব দোকান এবং ভেতরের পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে আপনি বার বার থমকে যাবেন কিছু না কিছু দেখেই। মনে মনে আপনি ভাবতে বাধ্য এটি কীভাবে বানানো হয়েছে, কত দিন সময় লেগেছে এই জিনিসটি বানাতে, দাম কত। বিশ্বের সব নামি-দামি বড় ব্রেন্ডের দোকান পেয়ে যাবেন আপনি এখানে। দাম একটু বেশি হলেও চাইলে কিছু কিনে নিতেই পারেন।
দুবাই মরুভূমি : দুবাইতে অনেক মরুভূমি রয়েছে। দুবাই মরুভূমির জন্যও অনেকে বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে ও লোকাল যে পর্যটকরা আসে তারা গাড়ি ভাড়া করে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায়। দুবাইতে এটিকে ‘Desert Safari’ বলা হয়ে থাকে। এই রাইডে আপনি দারুন এক অভিজ্ঞতার সাক্ষি হবেন। যে কোনো মানুষের কাছেই দুবাইয়ে এই রাইড দারুণ উপভোগ্য। দুবাই গেলে “Desert Safari” করতে ভুলবেন না কিন্তু।
বুর্জ খলিফা’ ও ‘পাম জুমাইরাহ : দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বলা হয়ে থাকে। অনেক পর্যটক শুধু এই দুটি স্থান উপভোগ করতেই বারবার নিজ দেশ থেকে দুবাই উড়াল দেয়। আপনি যদি দুবাই যেতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চই আপনার স্বপ্নে ও আগ্রহের মূল কেন্দ্রেই আছে ‘বুর্জ খলিফা’ ও ‘পাম জুমাইরাহ’।
পাম জুমাইরাহ : এখন আপনি জানতে পারবেন, দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আরেকটি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কৃত্তিম দ্বীপ ‘পাম জুমাইরা’। পাম জুমাইরাহ নিয়ে অবাক করা বিষয় হলো, পাম জুমাইরাহ মহাকাশ থেকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। এই দ্বীপ টি তৈরিতে যত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে পুরো পৃথিবীর চারদিকে ২ মিটার উঁচু এবং ০.৫ মিটার চওড়া দেয়াল ৩ বার তৈরি করা যাবে।
এর এপার্টমেন্ট বা ভিলাগুলোর দাম এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও প্রথম ধাপে সবগুলো (প্রায় ৪০০০) ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। বেশিরভাগই আগ্রীম বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এই তথ্যগুলো পেয়ে আপনি ধরণা করতে পারেন, পাম জুমাইরা কত সুন্দর বা আকর্ষণীয় হতে পারে। এমন সুন্দর দ্বীপ আপনি পৃথীবির কোথাও খঁজে পাবেন না। যে কোনো পর্যটক দুবাই যাবে আর পাম জুমাইরাহ’র সুন্দর্য উপভোগ করবে না এমনটি হতে পারে না।
মিরাকল গার্ডেন : কবির ভাষায় 'ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়'। তবে এই বিখ্যাত উক্তিটির বাস্তবতাও রয়েছে দুবাইয়ে। যেখানে ভালবাসা আর অতিযত্নে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করা হয়েছে। মরুভুমির উত্তপ্ত বালিতে যেখানে গাছ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। নাম দেয়া হয়েছে 'মিরাকল গার্ডেন'।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় ফুলের বাগান এটি। বাগানটির অবস্থান দুবাইয়ের শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ সড়কের পাশে। মরুভূমির মধ্যে নির্মিত এই বাগানের আয়তন ৭২ হাজার বর্গমিটার।
প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া এই বাগান প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি যেন এক স্বর্গক্ষেত্র। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে'তে যাত্রা শুরু করে এই বাগান। এখানে প্রবেশ করে কারও বোঝার উপায় নেই মরুভূমির কোন দেশে আছি নাকি চিরসবুজ কোনো উদ্যানে আছি। চারদিকে নানা রঙের বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুল দিয়ে যে কত অবাক করা আর দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব তা দুবাই মিরাকল গার্ডেন না দেখলে বুঝা যাবে না। কারণ ফুল মানুষকে কতটুকু আনন্দ দিতে পারে তা দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলেই বুঝা যায়!
কোরআন পার্ক: মূলত ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মানুসারী ও সংস্কৃতির মানুষদের কাছে কোরআনের সৌন্দর্য ও অলৌকিকতা উপস্থাপনের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে কোরআন পার্ক।
দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ অঞ্চলের ৬০ হেক্টর ও ৬ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে এ পার্ক বিস্তৃত। কোরআনে যেসব গাছ-গাছালি ও জীব-বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ আছে, তার সবই পার্কটিতে রয়েছে। কোরআনে বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাবলির চিত্রায়নও করেছে চিত্তাকর্ষকভাবে।
প্রমিজ ব্রিজ: দুবাইয়ের পর্যটকদের পছন্দের জায়গার নাম 'প্রমিজ ব্রিজ'। ব্রিজটিতে এখন ঝুলছে হাজার হাজার প্রেমের তালা। ব্রিজটি ঘিরে এর চার পাশে রয়েছে চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য। ভ্রমণ করতে এসে পর্যটকরা স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে এ ব্রিজের গায়ে লাগিয়ে যান তালা । দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ এলাকায় তৈরী করা হয় এই সেতু। সেতুর রেলিং-এ প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে তালা লাগান।
এছাড়া দুবাইয়ে রয়েছে অনেক আকর্ষনিয় স্থান। প্রতি বছর এসব জায়গায় ঘুরেত আসেন সারা বিশ্বের কোটি পর্যটক।
এমআরএম/এএসএম