অবশেষে বুঝলাম মা-বাবার ভালোবাসাই আসল
যদিও সবাই একটা সময় জানতে পারবে আমার ডিভোর্স হওয়ার কথা তবুও যতটা সম্ভব চেপে যাওয়াই ভালো। যখন শুনবে তখন জবাব দেয়া যাবে। বন্ধুর বাসা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিল। ওর সঙ্গে কথা বলে যেটুকু বুঝতে পেরেছিলাম গ্রামসুদ্ধ সবাই জানে আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বউ নাকি আমাদের গ্রামের কাউকে দেখলে বলে আমার সঙ্গে সংসার না করে সারাজীবন স্বামীহীন থাকবে তবুও ভালো।
আসার সময় দোকান থেকে দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট আর এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বাসায় ফিরলাম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেকে শেষ করে দেব। ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। একেরপর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছি সিগারেট টানতে টানতে বমি করে দিলাম। বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না। জীবনের প্রথম সিগারেট খেয়েছিলাম বলেই সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম।
পরেরদিন সকালে মা আমার ঘরে এসে ফ্লোরে সিগারেটের শেষ অংশ আর ঘুমের ট্যাবলেট দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। তার চিৎকারে বাড়ির সব লোক একত্রিত হল। সবাই একসাথে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল তারা মনে করেছে আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মরতে বসেছি। আমাকে হঠাৎ বিছানায় উঠতে দেখে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। আমাকে মা বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
সেদিন প্রথম আমি বুঝেছিলাম পরিবারের ভালোবাসা একজন নারীর ভালোবাসার চেয়ে শতগুণ শ্রেয়। নারীর ভালোবাসা হয়ত আমাদের সুখী করে কিন্তু পরিবারের ভালোবাসা দেয় আত্মতৃপ্তি। আমার প্রতি তাদের এত ভালোবাসা দেখে সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম স্ত্রী নকল ভালোবাসার চেয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনের এক প্রকৃত ভালোবাসা নিয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকাও উত্তম।
সিদ্ধান্ত নিলাম নাদিয়াকে ডিভোর্স পেপারে সাইন করব এবং তৎক্ষণাৎ তাকে মুক্ত করে দিলাম। বিষাদ সিন্ধুতে ইয়াজিদ বলেছিল ‘যে আমার না আমি তার হব কেন!এ কথাটি জপতে জপতে দিনগুলি কাটতে লাগলাম। একটা সময় সিদ্ধান্ত নিলাম টাকা ইনকাম করতে হবে এবং আগেরই সেই প্রবাস জীবন বেছে নিলাম।
মোতাহার ভাই নিজের কথা বলতে বলতে আনমনা হয়ে তার সাবেক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নিষিদ্ধ ভাষায় গালি দিল। আমি বললাম। থাক ভাই যা হবার তা হয়েই গেছে, জানেন তো ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। গালাগালি করে মুখ খারাপ করবেন না। মোতাহার বলল নাদিয়া আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে আমি পরে জানতে পারি সে তার খালাতো ভাইকে বিয়ে করছে।
বিয়ের আগে ওর খালাত ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল এবং বিয়ের পরও ওই ছেলের সঙ্গে ও প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। সে ছেলে তাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়াতেই মিথ্যা অভিযোগ করে আমার কাছ থেকে ডির্ভোস নেয়। আমি কোনো জবাব দিলাম না কারণ একজন ভুক্তভোগী জানে নারী প্রেমে প্রতারণার স্বীকারের যন্ত্রণা কতটুকু।
হায়রে! নারীর প্রেম! কাউকে সুখী করে আর কাউকে করে ধ্বংস।
এমআরএম/এএসএম