মুগ্ধতার জিনিস আছে মুগ্ধ হওয়ার প্রাণ পর্যটক নেই

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২১

ওমর ফারুক হিমেল

ইউরোপের জার্মানি অন্যতম ধনী দেশ। নৈস্বর্গিক বর্ণিলতার পাশাপাশি উন্নত নাগরিক জীবনের জন্য ইউরোপের খ্যাতনামা দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত জার্মানি। বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির দেশ, একই সঙ্গে বিশ্বে নানা খাতে ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা।

প্রথম পর্বে লিখেছিলাম জার্মানিরা বিশ্ববাসীকে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে শুধু ক্ষান্ত হয়নি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ, উদারমনা সামাজিক ব্যবস্থা, নানামুখী নান্দনিকতার জন্য বৈশ্বিকভাবে নজির স্থাপন করেছে। এদেশে চলতে ফিরতে চোখে পড়ে ইউরোপের, এশিয়ার, আফ্রিকার নানা দেশের মানুষের।

বলা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ উন্নত জীবনের জন্য জার্মানিতে নোঙর তুলছে। তাদের জীবনতরীর শেষ টার্গেট বুনছে। এই কদিনে বুঝতে বাবি নেই, করোনায় এই দেশের পর্যটন খাতকে শুধু ওলট-পালট করে দেইনি, এই শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষের চোখে মুখে আতঙ্ক, নেই কোনো আহ্লাদ।

চারদিকে অ্যাম্বুলেন্সের শু শু শব্দ। দৈনিক হাজার মানুষের করোনায় মৃত্যু। লাখ লাখ বেকারত্ব, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ যেন জার্মানির স্বপ্নে আঘাত হেনেছে। তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে জার্মানির প্রতিটি শহরে হোটেলগুলিতে রাত যাপনের জন্য গড় ৫০০ মিলিয়নের বেশি বুকিং দেয়া হয়।

কিন্তু এখন সে বুকিং নেই, শহরগুলি এখন পর্যটক শূন্য। আকৃষ্ট করার মতো অনেক কিছু থাকলেও থমকে দিয়েছে ছোট এক অণুজীব। রাজধানী বার্লিন থেকে ব্রেমেন প্রায় সব শহরে যুবক-যুবতীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে ওঠত, তা এখন স্বপ্ন। ব্রান্ডেনবুর্গের তোরণ, বার্লিনের ‘জাদুঘর দ্বীপ’, নানা মিউজিয়াম, শিল্পকলার নিদর্শনগুলি আছে শুধু নেই এই পর্যটন স্থানগুলোর প্রাণ পর্যটকরা।

মুগ্ধতার জিনিস আছে মুগ্ধ হওয়ার সে পর্যটক নেই। যখনই বের হই, কোথাও যেন কেউ নেই, যদিও বার্লিনের চিত্র ভিন্ন সেখানে বার্লিনবাসীর কিছু অংশ নিজেদের স্বাধীনতার দোহাই তুলে মাস্ক না পরার জন্য মিছিল করতে শুনেছি। জার্মানির উদ্যান ঘেরা রাজপ্রাসাদ ও পার্কগুলিও যে নজর কাড়ে ভ্রমণকারীদের, সে স্থানগুলো বিবর্ণ।

ইউরোপের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও অরণ্যের সৌন্দর্য জার্মানি। গতকাল আমি যে শহরে থাকি সেখানে নিজের একটি ব্যক্তিগত কাজ সারতে ডয়চে পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। ট্রামে উঠে দেখি কোনো মানুষ নেই। যে কয়েকজন আছে সবার মুখে মাস্ক, কেন জানি সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পোস্ট অফিসেও লোকের সমাগম নেই। ট্রেন স্টেশনেও নেই, মার্টগুলোর একই চিত্র। পোস্ট অফিস থেকে বাসায় এসে রুর অঞ্চলে বসবাসরত এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি কেমন আছে সে।

বন্ধু বলল নব আনন্দের রুরেও প্রাণচাঞ্চল্যতা নেই। পর্যটকে ভিড় জমানো দেশ, বিশ্বকাপের মেসুত ওজিল, লোথার মাথেউস, মিরোস্লাভ ক্লোসা, ম্যুলাররা বিশ্বকাপের যে মাঠ কাঁপিয়েছেন, কিন্তু করোনার মতো অনুজীব দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে পুরো জার্মানিকে।

এই কদিনে বিস্ময়ের দেশ জার্মানিকে তারুণ্য উচ্ছ্বাসের প্রাণে দেখিনি। ২০২০ সালে শেষ লগ্নে প্রাণখোলা উচ্ছাস, আনন্দের পরিবর্তে দেখেছি নানা বিধি নিষেধে, ক্রিসমাস ডে উদযাপন ও বর্ষবরণ।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]