দ্বিগুণ খরচে তৃতীয় দেশ হয়ে কুয়েতে ফিরছেন বাংলাদেশিরা

সাদেক রিপন
সাদেক রিপন সাদেক রিপন , কুয়েত প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের ১৩ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করে কুয়েত সরকার। ফলে দেশে ছুটিতে যাওয়া প্রবাসীরা পড়েছেন মহাবিপাকে।

১ আগস্ট সীমিত পরিসরে ফ্লাইট (বিশেষ) চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিসর, নেপালসহ মোট ৩৪ দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার।

দীর্ঘদিন ছুটিতে দেশে থাকায় হতাশাগ্রস্ত আর অর্থ কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রবাসী পরিবারগুলো। ফ্লাইট চালুর আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে হারিয়েছেন চাকরি, আবার অনেকের দেশটিতে প্রবেশে বৈধতার (আকামা) মেয়াদ শেষের পথে।

কুয়েতে থেকে ছুটিতে গিয়ে যেসব প্রবাসীদের আকামার মেয়াদ রয়েছে তারা উপায় খুঁজছেন ভিন্নপথে নিজ কর্মস্থলে ফিরতে। প্রবেশ নিষিদ্ধ ৩৪ দেশ ব্যতীত অন্য যে কোনো দেশ হয়ে কুয়েত প্রবেশের সুযোগ রয়েছে তবে ওই দেশে ১৪ দিন থাকার পর পিসিআর সনদ নিয়ে কুয়েতে ঢুকতে পারবে।

জানা গেছে, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ ভিসা সহজ হওয়াতে মিসর, ভারত, পাকিস্তানের নাগরিকরা আমিরাত হয়ে ১৪ দিন থাকার পর পিসিআর সনদ নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করেছে। অন্য দেশের নাগরিকরা এক লাখ টাকার মধ্যে কুয়েতে প্রবেশে করলেও বাংলাদেশিদের খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো।

ট্রাভেলস এজেন্সিকে কন্ট্রাক করে ঝুঁকি নিয়ে এত টাকা দিয়ে যাদের খুব বেশি জরুরি শুধু তারাই আসছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের ভিজিট ভিসা নিয়ে আসা অনেক প্রবাসীকে যেতে দেওয়া হয়নি। যাত্রীরা অভিযোগ করেন ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো বেশি টাকা নেওয়ার কারণে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দুবাইয়ের ভিসা ও টিকিট নিয়েছে কোনো ট্রাভেলস এজেন্সির সঙ্গে কন্ট্রাক করেনি তাই তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

ভিজিট ভিসায় দুবাইতে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, ভারত, পাকিস্তান, মিসরের নাগরিকরা কম খরচে দুবাই হয়ে কুয়েতে প্রবেশ করছে। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় না। আমাদের বাংলাদেশি প্রবাসীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকার নেশায় মেতে উঠেছে। সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ যেতে চাইলে তাকে বিমানবন্দরে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।

দুবাই হয়ে কুয়েতে আসা মো. সেলিম হাওলাদার বলেন, দুবাই হয়ে কুয়েতে আসা আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য অন্য দেশের তুলনায় খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি এবং যাত্রীদের ঝুঁকি নিতে হয়। দেশ থেকে আসতে পিসিআর সনদ নিতে হয়। ৩৪ দেশ ব্যতীত দুবাই বা অন্য যে কোনো দেশে ১৪ দিন থাকার পর সেই দেশ হতে পিসিআর সনদ নিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েত প্রবেশ করতে হয়।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কুয়েতে আসতে দুবাইতে ভিজিট ভিসার বিভিন্ন দেশের যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়াতে দুবাই থেকে কুয়েতের টিকিটে মূল্য অন্য যে কোনো সময়ের তুলনা অনেক বেশি। দুবাই কুয়েত টিকিটের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট।

তিনি আরও বলেন, দুবাইয়ে আসার পর যদি ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হয় অথবা দুবাই এবং কুয়েত সরকার তাৎক্ষণিক কোনো সীদ্ধান্তের কারণে যদি কুয়েতে প্রবেশ করতে না পারে এক্ষেত্রে ট্রাভেলস এজেন্সি কোনো ধরনের দায় নেবে না। এ সময় যাত্রীরা আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে পারে। দুবাই থেকে কুয়েতের ফ্লাইট মূল্য বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ দিনার।

যেটার স্বাভাবিক মূল্য ছিল ৬০-১২০ দিনার। যার কারণে দুবাই ১৪ দিন থাকার পর পিসিআর সনদ নিয়ে ওমান ও কাতার ট্রানজিট হয়ে কুয়েতে প্রবেশ করছে।

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কুয়েত সফরে এসে দেশটির নতুন আমীর শেখ নওয়াফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর আহ্বান জানান।

এমআরএম/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]