যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত, সাংবাদিক গ্রেফতারে ক্ষমা প্রার্থনা

কৌশলী ইমা কৌশলী ইমা , যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ৩১ মে ২০২০

পুলিশি নির্যাতনের পর কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক রাজ্যে, শহরে। মিনেসোটা, নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াতে দেখা দিয়েছে উত্তাল বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে নিউইয়র্ক, লস অ্যানজেলেস, শিকাগো, ডেনভার, হিউজটন, লুইসভিলে, ফিনিক্স, কলম্বাস ও মেম্ফিসে।

বিক্ষুব্ধ জনতা হোয়াইট হাউজের বাইরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা জর্জ ফ্লয়েডের ছবিসহ প্লাকার্ড নাড়িয়ে স্লোগান দেয়। ফ্লয়েড হত্যায় বিচার দাবি করতে থাকে। তবে হোয়াইট হাউজ এ সময় ছিল লকডাউনে। ওদিকে বিক্ষোভের রিপোর্ট কভার করতে যাওয়া সিএনএনের সাংবাদিক ওমর জামিনেজকে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শুক্রবার সকালের দিকে তিনি লাইভ সম্প্রচারে রিপোর্ট দিচ্ছিলেন। পুলিশ তার ক্যামেরাম্যান ও প্রযোজককে আটক করে। ওমর জামিনেজকে হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। পরে তাদেরকে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে ক্ষমা চেয়েছেন মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ।

অন্যদিকে সিএনএন বলেছে, এভাবে সাংবাদিকদের গ্রেফতারে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এসব খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিচার দাবি করছেন।

এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গ কোনো ভেদাভেদ নেই। আগের দিন বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। এ নিয়ে প্রশাসনে, রাজনীতিতে তোলপাড় হয়। এরই মধ্যে মিনিয়োপোলিসের সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাউভিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জর্জ ফ্লয়েডকে তাদের হেফাজতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

জর্জ ফ্লয়েডকে গত সোমবার যখন একটি গাড়ির পাশেই হাঁটু গেঁড়ে দিয়ে তিন পুলিশ সদস্য মাটির সঙ্গে সজোরে চেপে ধরে, তার মধ্যে শ্বেতাঙ্গ এই পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা গেছে ফুটেজে। এরই মধ্যে তিনি ও অন্য তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ডেরেক চাউভিনকে মিনিয়াপোলিসের আদালতে উপস্থিত করার কথা রয়েছে।

ওদিকে প্রথমদিকে জর্জ ফ্লয়েডকে নির্যাতনের যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছিল, অন্য পাশ থেকে তোলা আরেকটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে মিডিয়ায়। এসব ঘটনাকে অত্যন্ত ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ফ্লয়েড পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজের বাইরে সমবেত হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্লোগান দিতে থাকেন। তারা সমস্বরে বলতে থাকেন- ‘আই ক্যান্ট ব্রিথ’। অর্থাৎ আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। এই শব্দ কয়টি জর্জ ফ্লয়েডের উচ্চারণ করা শেষ শব্দ। একই কথা ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে বলেছিলেন আরেক কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গারনার।

তিনিও পুলিশি নির্যাতনে মারা গিয়েছিলেন। হোয়াইট হাউজ অস্থায়ীভিত্তিতে রয়েছে লকডাউনে। সব প্রবেশদ্বার ও বহির্গমন পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইউএস সিক্রেট সার্ভিস। শুক্রবার ও শনিবার রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে মিনিয়াপোলিস-সেইন্ট পলের টুইন সিটিতে। কিন্তু কারফিউ কর্যকর হওয়ার পরও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

পরে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভবন ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। আটলান্টায় বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ডালাসে বিক্ষোভকারীরা ইটপাথর নিক্ষেপ করার পর তাদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার ছুড়েছে পুলিশ।

জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় ডেরেক চাউভিনকে থার্ড ডিগ্রি হত্যা ও সেকেন্ড ডিগ্রি ম্যানস্লাউটারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলেও অন্য কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছে বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশি হত্যাযজ্ঞের অভিযোগকে আরো ধারালো করেছে। ক্ষোভকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই অভিযোগ আছে, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।

ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, মিনিয়াপোলিসে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের বিক্ষোভে রাতের বেলা একটি পুলিশ স্টেশন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু ভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুটপাট ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে অনেক স্থান। এর ফলে সেখানে ন্যাশনাল গার্ডদের ডাকা হয়।

হেনেপিন কাউন্টির প্রসিকিউটর মাইক ফ্রেম্যান বলেছেন, তিনি অন্য তিন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন। তবে বিস্তারিত জানান নি তিনি। তিনি বলেছেন, তাদের সামনে প্রমাণ উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে তারা এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]