৬ মাসের ছুটি শেষে বিদেশ, আজও কার্গোতে আটকা মাল

সাদেক রিপন
সাদেক রিপন সাদেক রিপন , কুয়েত প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রাম বন্দরে আটমাস ধরে আটকা আছে কুয়েত প্রবাসীদের পাঠানো মালামাল। গত বছরের এপ্রিল মাসে অনেক প্রবাসী তাদের পরিবার পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল যেমন- কসমেটিক্স, পোশাক, ফলমূল, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সি কার্গোতে বুক দিয়েছে সেসব পণ্য আজও তাদের বাড়ি পৌঁছায়নি বলে একাধিক প্রবাসী অভিযোগ করেছেন।

‘দেশে যাওয়ার আগে কার্গো অফিসে পণ্য বুক দিয়েছি। অথচ বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আবার কুয়েতে ফিরেছি আজও বন্দরেই পড়ে আছে জিনিসপত্র। দুই মাসের মধ্যে পোঁছানোর কথা থাকলেও ৬ মাস হয়ে গেছে তবুও কার্গো কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়াশব্দ মিলছে না।’

কুয়েত প্রবাসী কাজী মোহাম্মদ শাওন, মোশারফ। পণ্য আটকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, গত বছর এপ্রিলে মাল দিয়েছি সি কার্গোতে। যেগুলো ৫০ দিনের মধ্যে যাওয়ার কথা ছিল। আমি দেশে গিয়ে ছুটি শেষে আবার কুয়েত চলে এসেছি। কিন্তু আমার সেই মালামাল আজও বাড়ি পৌঁছায়নি।

আব্দুর রহিম নামে আরেক প্রবাসী বলেন, প্যাকেটের মধ্যে পাউডার দুধ, কসমেটিক্স, গৃহস্থলি ব্যবহারের জিনিসপত্র আছে। এতদিনে নষ্ট হয়ে গেছে অথবা নষ্ট হওয়ার পথে। এর দায়ভার কে নেবে? এখানকার কার্গো অফিস বলছে আমাদের কিছুই করার নেই। আবার শুনছি বন্দর অফিসেও নাকি ঝামেলা আছে। আমাদের দেখার যেন কেউ নেই।

প্রবাসী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার এক বন্ধু মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহৃত জিনিস ও রুমের মালপত্র তার পরিবারে কাছে পাঠিয়েছি। ৬ মাস হয়ে গেল এখনো পাইনি। অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে।

কুয়েতে কার্গো অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, দেশের বন্দর মাল ছাড়ছে না। আমাদের কাজ আমরা করে দিয়েছি। বাকিটা চট্টগ্রাম সি কার্গো জানে। এ মাসে ওই মাসে বলতে বলতে ৮ মাস শেষ হয়ে গেল। কী কারণে মাল আটকা আছে কিংবা ছাড়বে কিনা আভাস পাচ্ছি না। কোনো সমস্যা হলে অন্ততপক্ষে আমাদের জানানো উচিত। আমরাও তো প্রবাসী ব্যবসায়ী। আসলে এই সেক্টরে জবাবদিহিতার জায়গাটা একদমই নেই। আমরা মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ী হওয়ায় সবার তিক্ত কথা শুনতে হচ্ছে।

কুয়েত সিটির মুরগাব কার্গো ব্যবসায়ী নুরুল আমিন ও ফাহাদ হোসেন বলেন, এখানে যারাই কার্গো ব্যবসা করে তাদের বেশির ভাগেরই এজেন্ট হিসেবে সি কার্গো ও এয়ার কার্গোতে কাজ করতে হয়। আমরা প্রবাসীদের কাছ থেকে জিনিসপত্র গ্রহণ করে কার্গো অফিসে জমা দিই। এসব ঘটনায় কাস্টমাদের সঙ্গে আমাদের প্রায়ই ঝামেলা হচ্ছে।

তারা বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটক মালামাল দ্রুত ছাড়তে চেষ্টা করবে। এমন ঘটনায় আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে সেখানে কিছু অসাধুর কারণে আমাদের দেশের মানুষ সঠিক সময়ে মালই বুঝে পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কার্গো ব্যবসায়ী বলেন, ‘আটক মালামালের কাগজপত্রে গরমিল রয়েছে। কন্টেইনারের সঙ্গে যে কাগজ দেয়া আছে তার সঙ্গে চালানের মিল না থাকায় মালগুলো পড়ে আছে। এমন হয়েছে কার্গোর কিছু অসাধু লোকের কারণে। চট্টগ্রামের বন্দর সিন্ডিকেট সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। কার্গোগুলোতে যদি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলে তাহলে হয়তো প্রবাসীরা সময়মতো মালামাল বুঝে পাবে।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]