নরওয়েতে স্থায়ী হতে যা করণীয়

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নরওয়ে উত্তর ইউরোপে স্ক্যান্ডিনেভীয় উপদ্বীপের পশ্চিম ও উত্তরাংশে অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর সাগর ও দক্ষিণে স্কাগেরাক ইনলেট, পশ্চিমে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর (নরওয়েজীয় সাগর) ও উত্তর-পূর্বে বারেন্টস সাগর অবস্থিত।

স্ক্যান্ডিনেভীয়কে বলা হয় সেরাদের সেরা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, পেনশনের সবচেয়ে ভালো সুবিধা রয়েছে। আর এই সুবিধাভোগের জন্য অবশ্যই নরওয়ের সিটিজেন বা নরওয়ের স্থায়ী আবাসিক হতে হবে। কীভাবে অন্য দেশের পাসপোর্ট নিয়ে (ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মান ইত্যাদিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশের) নরওয়ে স্থায়ী হবেন আজকে সেই আলোচনা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সমূহের যেকোনো একটির পাসপোর্টধারী হলে পেয়ে যাবেন নরওয়ে স্থায়ী হবার গ্রিন চ্যানেল। নরওয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২ হাজারের মতো। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী ৩০০-৪০০ জনের মতো। বেশিরভাগ বাংলাদেশি ইউরোপের পাসপোর্ট পাওয়ার পর ব্রিটেনে পাড়ি জমান।

তারা মনে করে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির কিছুটা সাপোর্ট পাওয়া যাবে। আরেকটা বড় কারণ হলো ছেলে-মেয়েদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য ভালো পরিবেশ আছে ইউকেতে। ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বড় মুসলিম কমিউনিটি রয়েছে। সোমালিয়ান, পাকিনস্তানি, আফগানি, ইরাকি, ইরানি আর সিরিয়ার ইমিগ্রান্টসদের হাব হচ্ছে নরওয়ে।

বর্তমানে নরওয়েতে মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখের মতো। আর এর মধ্যে ১৬ ভাগ অভিবাসী। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোল্যান্ডের নাগরিক, সেকেন্ড পজিশনে আছে লিথুয়ানিয়ান আর থার্ড পজিশন সুইডিশরা, ৪র্থ পজিশনে জার্মানরা সবচেয়ে বেশি কাজের জন্য নরওয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

একজন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক যেভাবে নরওয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে?

প্রথম ধাপ- প্রথমতো নরওয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় নরওয়ে কোনো প্রকার রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই যদি না আপনি ৩ মাসের কম সময় অবস্থান করেন। নরওয়েতে ৩ মাসের বেশি সময়ের জন্য কোনো চাকরি, পড়াশোনা কিংবা বসবাসের জন্য সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অথ্যাৎ মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হবে। দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার প্রথম ধাপ হলো যেকোনো কাজ খুঁজে নেয়া। যেহেতু আপনি ইউরোপের পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন নরওয়ে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কোনো ঝামেলা নেই কাজের ব্যাপারে। চাইলে দক্ষ কাজ কিংবা অদক্ষ যেকোনো কাজই করতে পারেন কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই।

দুইভাবে কাজ খুঁজতে পারবেন। এক, নিজে বা কারও মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, নরওয়েজিয়ান অফিসিয়াল ওয়েবের মাধ্যমে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যত ধরনের কাজ থাকে তার তালিকা দেয়া হয় প্রতিদিন। আপনি আপনার স্কিল অনুযায়ী কাজে আবেদন করতে পারবেন। চাইলে সিভি আপলোড করে পছন্দ মতো কাজ খুঁজে নেবেন। কাজ খুঁজুন এখানে

দ্বিতীয় ধাপ- যেকোনো কাজে যোগদানের পর প্রথম কাজ কাজ হলো মালিকের কাজ থেকে জব অফার লেটার বা জব কন্ট্রাক্ট নিয়ে নেয়া। রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনার জব কন্ট্রাক্ট (ফুল টাইম বাধ্যতামূলক। আপনি যদি একের অধিক জায়গায় জব করে তাহলেও চলবে। শুধু মাথাই রাখতে হবে ৮ ঘণ্টার দৈনিক সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার জবের কনফার্ম জব অফার লাগবে হক সেটা এক মালিকের বা দুই মালিকের।

তৃতীয় ধাপ- ট্যাক্স কার্ডের আবেদন। সেটা মালিক বা কোম্পানি আপনাকে দেবে। চাইলে অনলাইনেও আবেদন করতে পারবে। জব কন্ট্রাক্ট নিয়ে সাথে পাসপোর্ট না ন্যাশনাল আইডিকার্ড সাথে নিয়ে নিকটস্থ যেকোনো ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে পারবেন। ট্যাক্স অফিসে গিয়ে যে ফরম পূরণ করবেন সেটা- RF-1209 Tax detuction Card for foreign Citizen নামে পরিচিত।

আর এফ ১২০৯ বললে ডেস্ক থেকে আপনাকে সেটা দেয়া হবে বিনামূল্যে। ট্যাক্স ডিডাকশন কার্ডের আবেদনের পর আপনাকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে আপনার বাসায় চিঠির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবে। নরওয়েজীয়ান ট্যাক্স কার্ড আপনার মেইন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ট্যাক্স কার্ড সম্পর্কে বা নরওয়েজীয়ান ট্যাক্স সম্পর্কে জানতে পারবেন বিস্তারিত এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে- www.skatteetaten.no/en ট্যাক্স কার্ড হাতে পেলে আপনাকে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে রেজিস্ট্রশনের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

চতুর্থ ধাপ- পুলিশের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন। সেটাও দুইভাবে করা যাবে। অনলাইনে নরওয়েজিয়ান ডিরেকটর অব ইমিগ্রেশনের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে- selfservice.udi.no/en-gb অথবা সরাসরি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে বা পুলিশের ওয়েবসাইটে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে - www.politiet.no

রেজিস্ট্রেশন শেষে পুলিশ আপনাকে একটা সার্টিফিকেট দেবে যা প্রমাণ করবে আপনি নরওয়েতে জব/স্টাডি/বিজনেস পারপাসে থাকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। রেজিস্ট্রেশন বাবদ কোনো ফি দিতে হবে না। আপনার কাজ শেষ। যারা মূলত কাজের জন্য আসবেন তারা পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

রেজিস্ট্রেশন করা যাবে যেসব ঠিকানায়- অফিসে ট্যাক্স, ফরেইনার রেজিস্ট্রেশন, ইমিগ্রেশন পুলিশ, সোশ্যাল সিকিউরিটির মতো সব কিছুর ফেসিলিটি ওই অফিসে পাবেন। তাছাড়া যেকোনো তথ্যের জন্য তাদের ঠিকানাই ভিজিট করুন।

যুবরাজ শাহাদাত/এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]