উজ্জীবিত তারুণ্যের ভিড়ে বিশ্বজয়ী নাজমুন

মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল)
মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ২০০০ সালে বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু নাজমুন নাহারের। ১৯ বছরের মধ্যে নাজমুনের ১৩৫টি দেশে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছে দেয়ার অর্জনকে সম্মানিত ও অভিনন্দিত করে সংগঠনটি। জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে জাতীয় রেঞ্জার কমিশনার রিতা জেসমিনের সভাপতিত্বে নাজমুন নাহারের গলায় সম্মানসূচক স্কার্ফ পরিয়ে বরণ করে দেন সংগঠনটির রেঞ্জাররা। সেই সঙ্গে তাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে অভিনন্দন জানানো হয়।

নাজমুন নাহার একজন প্রাক্তন রেঞ্জার, পৃথিবী ঘুরছেন তিনি, জয় করছেন পৃথিবী। সকল প্রতিকূলতাকে ভেদ করে একা একা সড়ক পথে পৃথিবীর ১৩৫টি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে। তিনি আজ তরুণদের কাছে একটি উৎসাহের নাম, একজন আইকন, একজন ভালো গল্পকারও।

শুধু বিশ্ব জয়ের নেশায় একের পর এক দেশ জয় করছেন না নাজমুন নাহার, নিজের অভিজ্ঞতা এমনভাবে বলেন যেন উপস্থিত দর্শক নাজমুনের সাথে পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। সেটা আমরা বুঝতে পারি যখন তিনি স্টেজ থেকে নামেন। এ সময় সবাই তাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চান।

‘ডটার অব দ্য আর্থ’ উপাধিতে ভূষিত আন্তর্জাতিক ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনকারী নাজমুন নাহার যেমনি একজন বিশ্বজয়ী পরিব্রাজক, তেমনি একজন ভালো গল্পকারও। পৃথিবী দেখতে দেখতে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি এখন অনেক ভারী। সময় পেলেই তিনি তরুণদের মাঝে ছুটে যান তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য। বিশ্বজয়ের পাশাপাশি ইতোমধ্যে নাজমুন মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবেও তরুণদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি বাংলাদেশের পতাকা হাতে পৃথিবীর ১৩৫টি দেশ ভ্রমণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন এবং তার যাত্রা অব্যাহত থাকবে পৃথিবীর ২০০টি দেশ পর্যন্ত।

Najmun-1

বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত জাতীয় যুব দিবসে তরুণ জাগরণের প্রতীক নাজমুন নাহার বেইলী রোডের গাইড হাউস অডিটোরিয়ামে ভরপুর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের কয়েক শত রেঞ্জার তরুণ শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করেছিলেন বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রার লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনার মাধ্যমে। এছাড়া নাজমুন নাহারের জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ও ভিডিও স্লাইড প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়েছে একই সময়ে।

পুরো বিশ্বের মানচিত্রের মাঝে নাজমুনের অভিযাত্রার সময় ঘটে যাওয়া নানা ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনার মাঝে পড়ে তিনি কীভাবে কৌশলে বেঁচে এসেছেন, বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি একা একা সড়কপথে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যেভাবে পৃথিবীর অপূর্ব সৌন্দর্য আরোহণের যাত্রী হয়েছেন, তার সকল অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেন বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের রেঞ্জার, গাইড ও আগত সকল অতিথিদের সামনে। পৃথিবীর পথে পথে নাজমুনের প্রতিটি পদক্ষেপের অভিজ্ঞতার কথা বলে তরুণদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছেন দারুণভাবে।

বক্তব্য শেষে নাজমুন মঞ্চ থেকে নামার সাথে সাথে কয়েকশ রেঞ্জার তরুণ শিক্ষার্থীরা তাকে ঘিরে ধরেছিল একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য এবং তার সাথে একটি সেলফি তুলে স্মৃতি করে রাখার জন্য।

নাজমুন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তার বিশ্বভ্রমণ অভিযাত্রার প্রথম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ গার্লস গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের হাত ধরেই এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রথম শুরু হয়েছিল এই গার্ল গাইডসের মাধ্যমে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে।

Najmun-2

তিনি বলেন, গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন আমার জীবনের প্রথম অ্যাডভেঞ্চারের শিক্ষাগুরু সংস্থা। প্রতিকূলতার মাঝে নিজেকে টিকিয়ে রাখা ও বাধাকে অতিক্রম করার দীক্ষা কৌশল বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমি জেনেছি। ভারতের পাঁচমারীর অ্যাডভেঞ্চারের সময় পর্বত আহরণরোহণ, বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, হাইকিং, বন্য প্রাণীর মাঝে জঙ্গলের মধ্যে তাবু করে থাকার সব অভিজ্ঞতা আজও বিশ্বভ্রমণের পথে পথে আমার অনেক কাজে লেগেছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার ও (লিয়েন) গভ. লিড ব্রিটিশ কাউন্সিলের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম বলেন, আমি খুবই গর্বিত যে নাজমুন আমাদের একজন প্রাক্তন রেঞ্জার। সে আমাদেরই মেয়ে যে আজ বিশ্বজয়ের পথে। নাজমুন অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ। দেশের জন্য তার অর্জন আজ লক্ষ-কোটি তরুণদের উৎসাহিত করছে।

জাতীয় রেঞ্জার কমিশনার রিতা জেসমিন বলেন, আমাদের রেঞ্জার নাজমুন আজ লাল-সবুজ পতাকা হাতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত হাজার কোটি নাজমুনের প্রতীকী মানবী। নাজমুন নাহার আমাদের একটি সাফল্যের গল্প। নাজমুন একটি দৃঢ়তার প্রতীক, নাজমুন একটি সমতার প্রতীক। নাজমুন নাহার একটি দৃঢ় প্রত্যয়ী উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম, যার বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে।

Najmun-3

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এ সম্মান শুধু বাংলাদেশে গার্ল গাইডসের নয়, পুরো বাংলাদেশের, ভারত স্কাউটস ও গাইডস তথা পুরো ভারত বর্ষের, তথা পৃথিবীর সাফল্য। কারণ ভারতের মধ্য প্রদেশের পাঁচমারিতে অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামের মাধ্যমেই নাজমুনের মনে অ্যাডভেঞ্চার, প্রকৃতি, বিধাতার অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করা, অজানাকে জানা, বাঁধা ও ভয়কে জয় করার নেশা জাগ্রত হয়েছিল। আমি বলব, মেয়ে নয়, একজন মানুষ নাজমুন নাহার সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষের চলার পথকে উজ্জীবিত করবে।

বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের রেঞ্জার শেখ সায়েরা খাতুন বলেন, বিশ্বজয়ী নাজমুনকে চোখের সামনে দেখা ও তার মুখ থেকে বিশ্বজয়ের অভিজ্ঞতা শুনতে পারা সত্যিই খুব সৌভাগ্যের বিষয়। পতাকা হাতে ১৩৫টি দেশ অভিযাত্রার মত একটি প্রায় অসাধ্য কাজের বর্ণনা শুনে নিজে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছি, শিখেছি নানা কৌশল। নিজ দেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে তোলার এই অসাধারণ প্রচেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উপাধি ও সম্মাননায় ভূষিত নাজমুন নাহার ইতোমধ্যেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে। তিনি বিশ্ব ভ্রমণের পাশাপাশি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ‘ওয়াননেস ফ্যামিলি’ অর্থাৎ এক পৃথিবী এক পরিবারের বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ ও শিশুদের মাঝে।

নাজমুন নাহার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ‘পিস টর্চ আওয়ার্ড’ ও ‘ডটার অব দ্য আর্থ’ উপাধি। ২০১৮ সালে জাম্বিয়া সরকারের গভর্নরের কাছ থেকে পান ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি।

এছাড়া তিনি পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষ দশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৯, গেম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড, মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড, গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল এনকারেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড।

এমআরএম/এমএসএইচ/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]