পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তার গল্প

মো. রাসেল আহম্মেদ
মো. রাসেল আহম্মেদ মো. রাসেল আহম্মেদ
প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ২৩ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশের অনগ্রসর একটি গ্রামে বেড়ে উঠে জিয়াউর রহমান নিপু। যার শৈশবকাল, শিক্ষাজীবন ক্যারিয়ার গঠনের অদম্য স্পৃহা সাংসারিক জীবনসহ বিভিন্ন বিষয় পর্তুগালের জনপ্রিয় অভিবাসনবান্ধব পত্রিকা ‘জার্নাল দা মুরারিয়া’তে ১১তম সংখ্যায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।

২০০৪ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পরপরই একজন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে মাত্র ১ হাজার ৮০০ টাকার বেসিক বেতনে বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। একাগ্রতার সঙ্গে কোম্পানিতে ১৫ মাস কাজ করার পর জোনাল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে ১৮ মাস জোনাল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ‘এক্সপোর্ট মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার’ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আফ্রিকা মহাদেশে পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে দায়িত্ব পান।

এরই মাঝে চাকরি চলাকালীন অবস্থায় কিছুটা অনিয়মিতভাবে একাডেমিক ক্লাস না করেই ২০০৭ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। সেই থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৫ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আফ্রিকার দেশগুলো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করলেও আজ বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য বিপণনের কারণে আফ্রিকান জনগণের কাছে বাংলাদেশ একটি খুবই পরিচিত দেশের নাম।

ইতোমধ্যে বিশ্বের ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের কাজে ভ্রমণ করছেন এ তরুণ। ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজসহ ৬টি ভাষাতে কথা বলতে পারদর্শী তিনি। বর্তমানে পর্তুগালে অফিসিয়াল হেড কোয়ার্টার করে আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর বাজার সম্প্রসারণের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের উপস্থিতি এবং এর সম্ভাবনাময় বাজার সম্পর্কে রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের উপস্থিতি বা বর্তমান মার্কেট খুবই কম। সাধারণত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোতেই বেশি রফতানি করে থাকে।’

‘বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার মার্কেটগুলোতেই দেশীয় পণ্যের বেশি উপস্থিতি দেখা যায়। সেই হিসাবে মূলধারার মার্কেট শেয়ার থেকে আমরা অনেক পিঁছিয়ে আছি।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য বাজারজাতকরণের একটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈদেশিক বাজারের ধরণ, তাদের খাদ্যাভ্যাস, প্রতিদ্বন্দ্বী রফতানিকারক দেশগুলোর বিক্রয় নীতি বা কর্মপন্থা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আমাদের রফতানি নীতি বা কর্মপন্থা তৈরি করতে হবে।’

southeast

বাংলাদেশি এই তরুণ উদ্যোক্তা বর্তমানে পর্তুগালের লিসবনে বসবাস করছেন। দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সন্তানের পিতা এবং স্বপরিবারে লিসবনে বসবাস করছেন। জিয়াউর রহমান নিপুর জন্ম বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

পর্তুগালে স্থায়ীভাবে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজের সুবাদে আমি তিন ডজনের বেশি দেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পর্তুগাল আমার কাছে এবং আমার পরিবারের কাছে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে এখানকার আবহাওয়া, মানুষজন এবং সহজ অভিবাসন নীতি খুবই ভালো লেগেছে।

ইউরোপের পর্তুগাল বিশ্বের এমন একটি দেশ- যেখানে মাত্র পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। এখানে বৈধভাবে প্রবেশ করে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে সহজেই বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। তাছাড়া বহির্বিশ্বের তুলনায় দেশটিতে বর্ণ বৈষম্য একেবারে নেই বললেই চলে।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]