মন খারাপ প্রবাসীদের

মন খারাপ হতে শুরু করেছে প্রবাসীদের। ঈদের সময় আশপাশে যখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না তখন নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে যায় গ্রামের সেই চিরচেনা ঈদ উদযাপনের স্মৃতিগুলো।

ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য মায়ের বকুনি, মা-বাবাকে সালাম করে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়া, পশু কোরবানি করা, বাড়ি বাড়ি সেমাই, পায়েশ, চটপটি খাওয়া, তারপর দিনভর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এসব স্মৃতি মনে করে চোখের কোনটা ভিজে আসে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগামী পরশু পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। সৌদির একটি উচ্চ পর্যায়ের চাঁদ দেখা কমিটি ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দেন। সৌদির উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটির সিদ্ধান্ত পালন করে ঈদ উৎসব উদযাপন করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। সাধারণত সৌদি আরবের একদিন পর বাংলাদেশে ঈদ উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

১৫ বছর আগে কুয়েতে এসেছেন ৮০ বছর বয়সী আবির হোসেন। ঈদ নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘মালিক ছুটি দেয়নি, কিছু করার নেই। প্রবাসে ইচ্ছা করলেই নিজের মতো সবকিছু করা যায় না। প্রায় ১০টি ঈদ বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে করতে হয়েছে। সকালে নামাজে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া নিয়েছি। নামাজ শেষে প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি নিজের কষ্টগুলো।’

kuet2

এক একজন প্রবাসীর এক এক রকম কষ্ট। কেউ পাঁচ বছর কেউ দশ বছর দেশে যান না। তবে আগামী ঈদ দেশে করতে পারব সেটা এবার মালিক জানিয়ে দিয়েছে। ছেলে-মেয়ে ছাড়া ঈদ জমে না। প্রবাস জীবন মানেই নিষ্ঠুরতা। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে অভিনয় করে চলতে হয় বলেও মন্তব্য করেন আবির বৃদ্ধ আবির।

ভিসা জটিলতা, আর্থিক সমস্যা নানা কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই দেশে যেতে পারেন না। এমন লাখো প্রবাসী রয়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যারা বছরের পর বছর দেশের স্মৃতি নিয়ে প্রবাসে ঈদ উদযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত কষ্টে থেকেও স্বজনদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছেন।

আলম নামে এক প্রবাসী কথা বলতে বলতে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়লেন। বলেন, আমরা প্রবাসীরা শুধু দিতে জানি নিতে জানি না। বছরের পর বছর এই কাজটি আমরা হাসিমুখে করে যাচ্ছি। দেশ থেকে স্বজনরা একটু হাসিমুখে কথা বললেই আমরা ভুলে যাই প্রবাসের সব কষ্ট।

কুয়েতের রাজধানী কুয়েত সিটির অলিগলিতে বাংলাদেশিদের আনাগোনা। ঈদের দিন আর একটু বেশিই। নামাজ শেষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কিছু সময় কাটালাম দেশীয় আমেজ নেয়ার জন্যই। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে অনেক প্রবাসীরা এসেছেন একই উদ্দেশ্যে। দেশীয় পোশাকে বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত ঈদের আগে পরে বেশ কয়েকদিন এমন চিত্র থাকবে।

এমআরএম/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]