প্রতিবন্ধীর অধিকার ও আমাদের দায়িত্ব

মো. রাসেল আহম্মেদ
মো. রাসেল আহম্মেদ মো. রাসেল আহম্মেদ
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১১ জুলাই ২০১৯
ফাইল ছবি

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী অথবা শিশুদের জন্য উন্নত ও সভ্য সমাজে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশের ও চলাফেরার ব্যবস্থা থাকে। মানবিক বিবেচনায় তা অত্যাবশ্যকীয় কাজ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য। সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত কল্পে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখে।

ছোট মুদি দোকান থেকে শুরু করে সুপারমার্কেট, রাস্তাঘাট, বাস ট্রেন ট্রাম বা মেট্রো, অফিস আদালত, ব্যাংক বা বীমা সবস্থানে এসব মানুষ অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। চলাচলের জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা ও আলাদা লাইন এবং সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এসব মানুষের অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। কোথাও তাদের অধিকার খর্ব করে না। বরং নিজেদের অধিকার ছেড়ে দিয়ে এসব মানুষের প্রতি যত্নবান হয়। আর এটিই হলো একটি শান্তিপূর্ণ দেশের নাগরিকের মানবিক ভূমিকা।

উন্নত বিশ্বে এমন উদার সমাজ কিন্তু আপনা আপনি সৃষ্টি হয়নি বরং তা আইনের দ্বারা সুরক্ষিত যা সকলে সম্মান করে। কেননা কোনো না কোনো সময় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আমাদের যে-কেউ হতে পারে। আজ আমি সুস্থ সবল কিন্তু কিছুদিন পরে আমিও বৃদ্ধ হব বা আমার ও মা বোনসহ পরিবার পরিজন আছে যাদের ঘরের বাইরে সুরক্ষা প্রয়োজন। তাই আগে রাষ্ট্র আইন করেছে ও জনগণ তা অনুসরণ করে যাচ্ছে একটি সুখী ও নিরাপদ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে।

আমাদের দেশের রাস্তা ঘাট, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা বা বিপণী-বিতানে কিংবা হাসপাতালে এখনো এ সমস্ত মানুষের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। বরং বলা চলে অনেক ক্ষেত্রে এদের অধিকার উপেক্ষিত এবং আমরা যারা সুস্থ সবল আছি তারা ওদের অধিকার খর্ব করি। এখনো আমরা নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস আচরণ করি নানা ক্ষেত্রে আর অক্ষম ও বৃদ্ধাদের জন্য বিশেষায়িত চলাফেরার কোনো ব্যবস্থা একেবারে নেই বল্লেই চলে।

বেশিরভাগ সড়ক এখনো প্রতিবন্ধী বান্ধব হয়নি। তাছাড়া বাস, ট্রেন বা লঞ্চে নারী ও শিশুদের সংরক্ষিত আসনগুলো প্রায় সময় স্বাভাবিক মানুষ দখল করে বসে থাকে। আমাদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে এসব মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।

মধ্য আয়ের দেশ হতে সব শর্ত আমরা পূরণ করেছি ইতোমধ্যে, তাই রাষ্ট্রের প্রতি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও ত্বরান্বিত হোক। বিশেষ করে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তাহলে সম অধিকার ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব শিগগিরই।

আমরা যারা সবল মানুষ আছি সবাই এ সমস্ত মানুষের প্রতি আরও যত্নবান হলে দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় একধাপ এগিয়ে যেতে পারব। তৈরি হবে সমতার ও শ্রেণিবিহীন এক বাংলাদেশের আর জয় হবে মনুষ্যত্ব ও মানবতার।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]