স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় প্রবাসীরা কতটা নিরাপদ?

সাইফুল আজম সিদ্দিকী সাইফুল আজম সিদ্দিকী (মিশিগান) যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯

স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আমরা কতটা নিরাপদ? প্রশ্ন অনেকটা সোজা সাপ্টা হলেও উত্তরটা বেশ জটিল। উন্নত জীবন ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের আশায় পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরদেশে বসবাস। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আক্রমণের শিকার। হাইজ্যাক, ডাকাতি, হেটক্রাইম-সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয়ে জীবন হারানো বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়।

অতি সম্প্রতি মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে চারজন ট্যাক্সি চালক দুষ্কৃতিকারীর গুলিতে প্রাণ হারান। চলতি বছরের ২২ মে কর্মরত অবস্থায় ক্যাব চালক জয়নুল ইসলাম প্রাণ হারান। জয়নুল ইসলাম মৃত্যুর আগে ৭ সন্তানসহ বড় এক পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি হিসেবে কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত ছিলেন। এই রমজান মাসে সারাদিন রোজার পর ইফতার করে ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে কাজে বেরিয়ে পরেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ডেট্রয়েট নগরীর গণমাধ্যম ফলাও করে এ সংবাদ প্রচার করে।

USA-(1).jpg

বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশকটি সংগঠন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে আসছে। গত ২৩ জুন বিকাল ৫ টায় বাংলা টাউন খ্যাত হ্যামট্রামিক শহরের আলাউদ্দিন রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি ক্যাবচালক জয়নুল ইসলামের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (বিএডিসি) নামের সংগঠন।

বিএডিস ট্যাক্সি ক্যাবচালকদের সেইফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ এই মতবিনিময় সভায় হ্যামট্রামিক শহরের পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজ্য সরকার ও সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা, বিএডিসির নেতারা ও স্থানীয় ক্যাবচালকসহ বিপুল সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করেন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মিশিগান ওয়েইন কাউন্টির শেরিফ বেনি নেপোলিয়ন, ডেট্রয়েট সিটির ডেপুটি পুলিশ চীফ টড বেটিসন, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ আইজ্যাক রবিনসন, হ্যামট্রামিক সিটির সার্জেন্ট রবার্ট জর্জ। মতবিনিময় সভার এক পর্যায়ে ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ ইনভেস্টিগেটর ব্রায়েন ফন্টেইন ক্যাব চালকদের সেইফটি ও সিকিউরিটির ওপর ৪০ মিনিটের এক বিশদ ট্রেনিং পরিচালনা করেন।

USA-(1).jpg

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেট্রয়েট সিটি কাউন্সিলম্যান স্কট বেনসন, হ্যমট্রামিক সিটি কাউন্সিলম্যান এনাম মিয়া, সাবেক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ হাসান, কমিউনিটি নেতা হাজী নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল লতিফ আজম, হাফিজ ফখরুল ইসলাম, মন্জুর খান, ট্যাক্সি ক্যাব প্রতিনিধি আব্দুল বাসেত, বাংলাদেশি ইয়ুথদের মাঝে বক্তব্য রাখেন তাজিম চৌধুরী ও শাহ আলী প্রমুখ।

বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নাজমুল হাসান শাহীন মিটিং এর উদ্দেশ্য ও পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। বিএডিসি বর্তমান সভাপতি জুবারুল চৌধুরী খোকন স্বাগত বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনায় ছিলেন বিএডিসির জেনারেল সেক্রেটারি প্রকৌশলী রাহাত খান। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন সহসভাপতি মুহিত মাহমুদ।

এ সভার সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বিএডিসি সহসভাপতি সোলাইমান বাহার, বিএডিসি ১১ ডিসট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক রহমান(সুমন), বিএডিসি ১৩ ডিসট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি কাউসার দেওয়ান, এক্সিকিউটিভ কমিটির সেক্রেটারি আপেল খান ও জিয়াউদ্দিন জিয়া, বিএডিসি ১৪ ডিসট্রিক্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান নাঈম চৌধুরী, বিএডিসি নেতা হাফিজ রহমান, মোহাম্মদ সোলায়মান ও সাবুল চৌধুরী।

USA-(1).jpg

আলোচনা শেষে বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্যাক্সি ক্যাব চালকদের সেইফটি ও সিকিউরিটির উদ্যোক্তা ড. নাজমুল হাসান শাহীন তিন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এগুলো হচ্ছে- ১. পুলিশ প্রশাসনের সাথে বিএডিসি সেইফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে তিন মাস পর পর সংলাপের আয়োজন করবে, ২. বিএডিসি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থাকরণ, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ ও ট্যাক্সি ক্যাবে ক্যামেরা স্থাপনের জন্য কাজ করবে এবং ৩. বিএডিসি ওয়েইন কাউন্টি শেরিফ বেনি নেপোলিয়ের অফিসের সাথে কমিউনিটি পুলিশিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিএডিসি ট্রাস্টি ড. সিরাজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন, বিএডিসির উপদেষ্টা সৈয়দ ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও ইউসুফ কামাল, বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা নেতা সেলিম আহাম্মদ ও ফয়সল চৌধুরী প্রমুখ। নেতাদের মধ্যে ছিলেন কমিউনিটি নেতা মো. মনির, এনাম আহাম্মেদ, আব্দুল হালিম, মো. আলম, খাজা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় অর্ধ শতাধিক ট্যাক্সিক্যাব চালকের মাঝে ছিলেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ উদ্দিন, খন্দকার শাফি আহাম্মদ, মহিন আলী, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, আমজাদ, আইয়ুব খান, আব্দুস শহীদ, মুসলিম আলী ও শহীদ মিয়া প্রমুখ।

জেএইচ/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]