একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

হাবিবুল্লাহ আল বাহার
হাবিবুল্লাহ আল বাহার হাবিবুল্লাহ আল বাহার নেদারল্যান্ডস
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৯

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরদের চালানো নির্মম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় আনতে দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এবং বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

সেমিনারে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন।

সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাংবাদিক ও লেখক বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া। কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য হেগ পিসের পরিচালক ইয়াকব দে ইয়ঙ্গে।

অন্যান্যের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপনা এবং আলোচনায় অংশ নেন ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ খেতাবপ্রাপ্ত ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, অভিনেত্রী শমী কায়সার (শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে), জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ভোলফগাং পেটার সিঙ্গেল, ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং সম্পাদক ডানকান বারলেট, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মাদ বেলাল, বাংলাদেশি ডাচ বিশিষ্ট সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন এবং ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম ইবিএফের প্রেসিডেন্ট আনসার আহমেদ উল্লাহ।

এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা এবং ড. নুজহাত চৌধুরীর ভিডিও বার্তা দেখানো হয় সেমিনারে।

Netherlands

সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস কমিটির সমন্বয়কারী এম এম মোর্শেদ, ডাচ-বাংলাদেশি শিল্পপতি জসিম উদ্দিন লিটন, সমাজসেবী মনোয়ার মোহাম্মদ, দক্ষিণ আফ্রিকার ডাচ দূতাবাসের কূটনীতিক আন্দ্রে স্টামেট, পেন ফিনল্যান্ডের কার্যকরী বোর্ড সদস্য ড. মজিবুর দপ্তরী এবং মাহমুদ হাসান।

বক্তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাসে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ ও নৃশংস নির্যাতন করে। এছাড়া এক কোটি মানুষকে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এমন অল্প সময়ে এতো বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা এটিই বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি মানুষ মারা গেলেও, সেই যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ছয় বছর এবং ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় তিনটি মহাদেশে।

তারা বলেন, অথচ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতো বড় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না দিয়ে বড় ধরনের বৈষম্য করেছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, এতো অল্প সময়ে আর কখনো কোথাও এতো মানুষকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ১৯৭১ সালের গণহত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এখনো নিশ্চুপ রয়েছে।

পরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের নানা উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জার্মানির বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল মুনিম। স্ব-রচিত কবিতা আবৃত্তি করেন মনোয়ার মোহাম্মদ, হোসাইন আব্দুল হাই এবং মীর জাবেদা ইয়াসমিন ইমি।

সেমিনারের পাশাপাশি একই দাবিতে শনিবার হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং স্থায়ী শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

এমএমজেড/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]