বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি দম্পতি
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। এমন বার্তা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ের আল কুজের আল সেরকাল কংক্রিট দালানে গত ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশীয় শিল্প প্রদর্শনী- ফ্যাব্রিকেটেড ফ্র্যাকচার। এটি চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশের সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন ও দুবাইয়ের আল সেরকাল এ্যাভিনিউ। যুদ্ধের কারণে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, দেশান্তর হয়েছে। আর তাদের সেই দেশ ছাড়ার সময় রয়ে যায় কিছু আবেগমাখা চিহ্ন। আপনজন সেই শেষ চিহ্নটুকুই বুকে বয়ে বেড়ায়। এসব সৃতিচিহ্ন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিল্পীরাও। যুদ্ধের সময় জাতি ভাগ হলেও তাদের বংশছায়া সীমানার এপার-ওপারে সমান এমনটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। কেউ তুলেছেন রঙতুলিতে আবার কেউবা ক্যামেরার লেন্সে।
ভারতের বিখ্যাত আলোক চিত্রশিল্পী পাবলো বার্তলো ম্যাও বাংলাদেশ ও ভারতের চাকমা উপজাতির জীবনধারা তার ক্যামেরায় বন্দী করেছেন।
বাংলাদেশের কনাকচাপা চাকমা, রশীদ চৌধুরী, আমফিকা রহমান, জয়দেব রোয়াজা, ঋতু সাত্তার, কামরুজ্জামান স্বাধীন, মোনেম ওয়াসিফ, দেবাশীষসহ অনেকে এসেছেন এই প্রদর্শনীতে।
কেউ ছবি এঁকেছেন রঙতুলিতে, কেউ দেখিয়েছেন লেন্সের ভাষা। আবার কেউবা গেয়েছেন বাংলা লোক গান, আর কেউ মঞ্চ নাটক। এই প্রদর্শনীটিতে ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়গুলো সবার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। উপসর্গ দেয়া হয়েছে ‘ভুলেও আমাদের বিভক্ত করার ভুল চেষ্টা করবেন না’
ফ্যাব্রিকেটেড ফ্র্যাকচার প্রদর্শনীটি আলসেরকাল এভিনিউর বৃহত্তম গ্যালারির মধ্যে একটি, ‘কংক্রিট’ নামক বিল্ডিংয়ে করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর কিউরেটর আমেরিকার নাগরিক ডাইয়ানা ক্যাম্পবেল খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন, যা দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে।
রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে, বিভিন্ন উপজাতি ও অন্যান্য জাতির লোকেরা সংখ্যালঘু হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে হার মানে, নিজ মাটি ও ভিটে-বাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে হয়, কিন্তু অক্ষুণ্ন রয়ে যায়, শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আর এই কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে এই প্রদর্শনী।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিভক্তিকে ব্রিটিশরা একটি উপনিবেশিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশরা স্বাধীন ভারত থেকে পাকিস্তানকে ভাগ করে, পূর্ব ও পশ্চিম শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল, তখন তারা একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম, ইসলামকে মাথায় রেখে - সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে একটি দেশকে একত্রিত করেছিল। আর তার কারণে বর্তমান সময়ে দেশ ভিন্ন হলেও, আমরা সংষ্কৃতিতে অনেক মিল পাওয়া যায়।
১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার কারণে ঘরে ঘরে দেশপ্রেমী জন্ম নিয়েছিল, সেই দেশপ্রেমের কারণেই ১৯৭১ সালের জাগরণ। জন্ম হয় ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি দেশের। ভাষার ওপর ভিত্তি করেই সীমানা তৈরি করা যায়, ফলে সাংস্কৃতিক একটা পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রদর্শনীর ১৫ জন শিল্পী তাদের সম্প্রদায়গুলোতে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে, এবং তাদের কাজ এই আতঙ্কের নিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে এবং অতীতেই এই বিভক্তির রহস্য লুকিয়ে আছে বলে জানাচ্ছে তাদের শিল্পকর্ম।
আলসেরকালের সহযোগিতায় খুব ভালোভাবে এক নতুন বিশ্বের স্বপ্ন সবার কাছে তুলে ধরেছে, সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন। আর তারা আশাবাদী যে এমন কাজের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে এক নতুন পরিবর্তন আসবে, এবং সীমানা ভুলে, মানুষ মানবতায় বিশ্বাস করবে।
শিল্পকলার ষোলকলা যেন একরুমে সহজে বন্দী করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্প সংগঠক দম্পতি রাজিব সামদানি ও নাদিয়া সামদানি। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে।
এই দম্পতি ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দু’জনেরই বাড়ি গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে। ২০১২ সাল থেকে ঢাকা সামিট-এর জন্য কাজ করছেন দেশে দেশে তারা। ২০২০ সালের ভাষার মাসে ঢাকা সামিট-এর বিশাল আয়োজন তাদের।
তারা নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন শিল্প সংগঠক আর পৃষ্ঠপোষণের জন্য। তাদের কাজের অন্যতম প্রকল্প হলো সিলেটের আদিনাম নিয়ে 'শ্রীহট্ট'। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বমাঝে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছেন তারা।
রাজিব সামদানি দুবাইয়ের আলসেরকাল তথা শিল্প সংস্থার উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য। বাংলাদেশ থেকেও তিনি এই সংগঠনের সাথে বিগত কয়েক বছর ধরে যুক্ত। জীবনের বাকি সময়ে দেশকে শিল্প-সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা তার স্বপ্ন।
এমআরএম/এমএস