জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রবাসী রহিম
পরিবারের সুখের আশায় বছরখানেক আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মো. আব্দুর রহিম ভুইয়া। দেশটিতে আসার পর থেকে কফিলের (মালিক) কোনো সন্ধান পাননি তিনি। ফলে রহিমের দীর্ঘ সময় কেটেছে পথে প্রান্তরে। কোনো কাজ না মেলায় আকামাও বানাতে পারেননি তিনি। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সৌদির ওলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।
‘দেশে পরিবারের অবস্থাও তেমন একটা ভালো নয়। ঘর-বাড়ি বিক্রি করে ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৮ লাখ টাকা জোগাড় করে সৌদিতে এসেছি। টাকা পরিশোধের টেনশনে আজ আমি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমাকে এদেশে দেখার কেউ নেই।’
কথাগুলো এভাবে বলছিলেন অসহায় প্রবাসী মো. আব্দুর রহিম ভূইয়া। দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। বর্তমানে তিনি সৌদির সেন্ট্রাল হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন রহিম। বর্তমানে তিনি দাম্মামের কাতিফ সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দ্বিতীয় তলায় পাঁচ নম্বর রুমের পাঁচ নম্বর বেডে সময় পার করছেন।
রহিম বলেন, ‘আমি হাসপাতালে আছি ঠিকই কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছি না। কারণ আকামা, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ও মালিক না থাকায় ডাক্তাররা ওষুধ দিতে চাচ্ছে না। শুনেছি হাসপাতালের বেড ভাড়া অনেক এসেছে, এখন কি যে করি বুঝছি না।’ এ অবস্থায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এ রেমিট্যান্স যোদ্ধার পাসপোর্টে পেশা উল্লেখ রয়েছে ‘লেবার’। এ পেশায় সৌদি সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফ্রি চিকিৎসার নিয়ম নেই। যারা সৌদিয়ানদের অধীনে কাজ করে- যেমন বাসার কাজ, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান হলে হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
তিনি জানান, হাসপাতালের সিট ভাড়া এবং চিকিৎসা বাবদ মোটা অঙ্কের বিল জমা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে পরিশোধের জন্য। কোথা থেকে বিল দেবে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছে না প্রবাসী রহিম।
তিনি বলেন, ‘দেশটিতে আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।’ তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। তবে তার এ আবেদনে কোনো কাজ হয়নি। অ্যাম্বাসির পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করার সুযোগ নেই, যা করার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করবে বলে দূতাবাস জানায়।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমাদের কিছু করার নেই। সহযোগিতা পেতে হলে বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। দেশ থেকে যদি অনুমতি দেয় তাহলেই দূতাবাস সহযোগিতা করবে।
সৌদি প্রবাসীরা জানায়, অসহায় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিপদে দূতাবাস না থাকলে কে সহযোগিতা করবে? হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে অনেক প্রবাসী। শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে অনেককে। অথচ আমাদের মতো প্রবাসীরাই দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আব্দুর রহিমের পাশে থাকার জন্য দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন সৌদি প্রবাসীরা।
সহযোগিতা করতে যোগাযোগ করা যাবে- মো. আব্দুর রহিম ভূইয়া, বাড়ি- সালামত উল্লাহ সেরাং। গ্রাম- মুছাপুর ডাকঘর- আলামিয়া বাজার, সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম। পাসপোর্ট নম্বর- BQ0359275।
এমআরএম/পিআর