মালয়েশিয়ায় শ্রমিকরা আজ বৈধ, কাল অবৈধ
মালয়েশিয়ার অভিবাসী বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল বলেছেন, ‘বিদেশি শ্রমিকরা আজ বৈধ, কাল অবৈধ। বিগত দিনে আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিকরা ভিসা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলকারখানায় কাজ করতেন। যা দেশটির শ্রমবাজারকে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বিদেশি শ্রমিকদের বাসস্থান ও কিঞ্চিৎ মজুরিতে জিম্মি করে বছরের পর বছর কাজ করানো হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।’
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আউটসোর্সিং কোম্পানির অ্যাপ্রোভাল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখনো হাজার হাজার বিদেশিরা বিভিন্ন কোম্পানির নামে ভিসা করে অন্য কোম্পানিতে কাজ করছে। আর অন্যত্র কাজ করলেই তারা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে বৈধ হয়েও অবৈধ তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি ও মালয় এজেন্টদের প্রলোভনে অন্যত্র কাজ করার নিশ্চয়তায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের কোম্পানিতে ভিসা করেছেন। প্রতি বছর এজেন্টকে ১ থেকে ২ হাজার মালাই রিংগিত দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে চলমান সাঁড়াশি অভিযানে বৈধ অবস্থায় গ্রেফতার হলে ওই সব এজেন্টের আর খোঁজ মেলেনি। বৈধ হয়েও জেলের গ্লানি টানছে বাংলাদেশিরা।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। অভিবাসীদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। সম্প্রতি দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ বড় অভিযান শুরু করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কুয়ালামপুর, সেলাংগর, পেনাংসহ শ্রমিকপ্রধান এলাকাগুলোতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, ‘দেশটিতে অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার লোকদের সংখ্যাই বেশি। তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে, মালেয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশিরভাগই সম্প্রতি বৈধ হবার সুযোগ নিয়েছেন এবং বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।
এদিকে বড়সড় ধরপাকড়ের খবরে আতংকে রয়েছেন মালয়েশিয়ার অবৈধ শ্রমিকরা। কুয়ালালামপুরের কাছেই ক্লাং শহরে একটি আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ দানিশ। তিনি জানান, সম্প্রতি সরকারি অভিযানের খবর শুনে এখন আতঙ্কে আছেন অবৈধ শ্রমিকেরা।
আরও পড়ুন> মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের ভাগ্য নির্ধারণে রিপোর্ট প্রদান
তিনি বলেন, ‘বৈধতার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়েছি। বৈধতার পার্মিট তো হয়নি বরং উল্টো পুলিশ এখন আমাদের খুঁজছে। আমরা এখন কোথায় যাব, কী করবো? আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি। অবৈধ শ্রমিকরা ইতোমধ্যেই অনেকে পালিয়েছে। তবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে থাকতে হচ্ছে আমাদের।’
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনো শ্রমিককে তারা দেশটিতে কর্মরত চান না। আর তাই তারা এই অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ৬ (১) সি ১৯৫৯, ১৫ (১) ৩৯ (বি) ধারায় জিজ্ঞাসাবাদ করে কাগজপত্র থাকলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে অন্যথায় জেল-জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানান সারডাং পুলিশের সহকারী কমিশনার ইসমাইল বোরহান।
দেশটির অভিবাসন বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী- মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশিকে কোনোভাবেই অবস্থান করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘দেশটির সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা চলমান অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।’
মালয়েশিয়ায় দুই মাসে বাংলাদেশিসহ ৮ হাজার অবৈধ প্রবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। বিগত বছরগুলোতে শহরভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হলেও নয়া কৌশলে এগোচ্ছে অভিবাসন বিভাগ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মাচের ৬ তারিখ পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৯৯টি অভিযানে আটক করা হয় ৩০ হাজার ৯৭৮ জনকে। আটকদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৭ হাজার ৮৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে।
এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৪ জন মালিককে। তবে অভিযানে কত জন বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কতজন করে গ্রেফতার করা হয়েছে তা অভিবাসন বিভাগ প্রকাশ করেনি। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান দাতো ইন্ডেরা খায়রুল দাজামী এসব তথ্য জানান।
মালয়েশিয়ায় সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছেন বৈধ বাংলাদেশিরাও। নামবিহীন দালালের মাধ্যমে বৈধ হয়ে অন্যত্র কাজের মধ্যেই গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। দেশটির আইন অনুযায়ী যে মালিকের নামে ভিসা করা হয়েছে, সেই মালিকের কাজ করতে হবে, অন্যথায় তাদেরকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর অন্য জায়গায় কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়লে যেতে হবে জেলে।
এমআরএম/পিআর