সৌন্দর্যে ভরা মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপ

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে সম্পদ দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায়। চকচকে ও ঐতিহ্যের শহর কুয়ালালামপুর। লঙ্কাভি মানে সমুদ্রতট। গেনতিং হাইল্যান্ড বলতে পাহাড়। আর এসব এক সঙ্গে পাওয়া যাবে পেনাংয়ে। মূলত এই কথা বলে দেশের উত্তর-পশ্চিমের ওই দ্বীপরাজ্য আকর্ষক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে মালয়েশিয়া।

পাহাড়-পর্বত আর দ্বীপের সমাহার এই মালয়েশিয়ায় পেনাং একটি অসাধারণ দ্বীপ। এটি একটি প্রদেশও। এই দ্বীপ প্রদেশের রাজধানীর নাম জর্জ টাউন। মূল ভূখন্ড থেকে দ্বীপে যাতায়াতের জন্য মোট দুইটি সেতু রয়েছে। ইতিহাস আর নান্দনিকতার মিশেল পেনাংকে আরো মোহনীয় করেছে। এক সঙ্গে এমন রসায়ন সহজে মেলে না।

পেনাং-কে সে’দেশের ভোজন-রাজধানীও বলা হয়। এত বৈচিত্র্যময় খাদ্যের সম্ভার সেখানে। আবার চিনা নববর্ষ-সহ বেশ কিছু জমকালো, রঙিন উৎসবও হয় সেখানে। পেনাং শুধু বিনোদন-ভ্রমণের জন্য নয়, বাণিজ্যিক অধিবেশনেরও কেন্দ্র। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার ব্যবসায়িক সম্মেলন ও হয় ওখানে।

Maleshia

সম্প্রতি (২৮ জানুয়ারি) পেনাং জর্জ টাউনের পাচঁ তারকা হেটেল জি’র হলরুমে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে হয়ে গেলো রোড-শো ও ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী দাতু হাজী আব্দুল হালিম হোসেইন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি দাতু হাজী আব্দুল হালিম হোসেইন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে তার বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করায় অভিনন্দন জানান।

তিনি মালয়েশিয়ার অগ্রগতিতে, বিশেষ করে নির্মাণ শিল্প ও পাম চাষে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

Maleshia

আসিয়ান দেশসমূহের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে উভয় দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম যেমন, কমনওয়েলথ, ওআইসি ও ন্যামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে বলে জানান।

মালয়েশিয়া প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনকে রোড-শো ও ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, এ সেমিনারের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কেই অবহিত হবেন না।

এ ছাড়াও এ সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে পেনাং রাজ্যের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীর সেতুবন্ধন রচিত হলো।

Maleshia

পেনাং রাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী তার বক্তব্যে পেনাং রাজ্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগামী মার্চে পেনাং রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রায় ৭০ জনের একটি টিম বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও মন্ত্রী সেমিনারে ঘোষণা দেন।

হাই-কমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

Maleshia

তিনি জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এশিয়ার সেরা গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতাদের নিকট তুলে ধরেন হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম।

সেমিনারে পেনাং চাইনিজ চেম্বার অব কমার্স, পেনাং মালে চেম্বার অব কমার্স, পেনাংয়ের ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স, ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফেকচারার্সসহ পেনাং রাজ্যের আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের উচ্ছপদস্থ কর্মকর্তারাও।

malaysia

এ ছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার এয়ার কমডোর মো. হুমায়ূন কবির, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মো. রাজিবুল আহসান এবং পেনাং রাজ্যে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল দাতু শেখ ইসমাইল।

সেমিনারে প্রধান অতিথিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম। সেমিনার শেষে প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মো. রাজিবুল আহসান এ প্রতিবেদককে জানান যে, এ সেমিনার আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিকট বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একদিকে যেমন জোরদার হবে, অন্যদিকে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে তিনি জানান।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]