প্রবাসীরা সুখের কাঙাল

প্রবাসীদের দুঃখের শেষ নেই। কেননা পরবাসীরা না ঘুমিয়ে, সময়মতো না খেয়ে, ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সুখের কাঙাল। তারাও সুখ চায়। আর তারা তখনই সুখ পায় যখন কিনা প্রবাস থেকে নিজের দেশে কিছু নিয়ে আসে বা প্রিয় মানুষদের হাতে তুলে দিতে পারে তাদের কষ্টের টাকা।

তারা তখন আনন্দ পায়, সুখে আত্মহারা হয়ে ওঠে। তাদের কাছে তখন মনে হয় তাদের প্রবাস জীবন সার্থক। সার্থক হয়ে উঠবারই কথা, তারা যে কারণে দেশ ছেড়ে প্রবাসে গিয়ে কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছে সে জীবনের যে মূল কথা ছিল তাদের বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য ভালোভাবে জীবন কাটানোর জন্য কিছু সময় নিয়ে আসা এটাই যেন তাদের কাছে বড় পাওয়া বলে মনে হয়।

কেননা তারা তো এটার জন্যও বিদেশে দেশ ছেড়ে। প্রবাসে কী কেউ সুখের জন্য যায়? না প্রবাসে কেউ নিজের সুখের জন্য যায় না বরং অন্যের সুখটা দেখার জন্য প্রবাসে যায় দেশ ছেড়ে। তারা তাদের অর্জিত সম্পদ দিয়ে যখন প্রিয় মানুষগুলোর জন্য প্রিয় কিছু নিয়ে আসে তখন তাদের ভালো লাগে বরং আনন্দ হয় যখন কিনা তারা বুঝতে পারে, দেখতে পারে তাদের প্রিয় মানুষ, কাছের মানুষের আনন্দ তখন তারা রীতিমতো অবাক হয়, বিস্মিত হয়।

আমাদের দেশে প্রবাসীদের কোনো গুরুত্ব নেই, আছে অবহেলা। একজন প্রবাসী দেশের জন্য কাজ করতে গিয়েও যতটুকু অবহেলা সহ্য করে আত্মসম্মানের বোধ ত্যাগ করে কাজ করে সেটা আসলে আমাদের এই দেশ কখনোই বোঝেনি বা বোঝার চেষ্টা করেছে বলে তা ততটা স্পষ্ট মনে হয় না আমার কাছে কারণ আমার কাছে আমাদের দেশে প্রবাসীদের মূল্য শূন্য।

কেন এমন তা হয়তো আমার জানা না থাকলেও জানা আছে সরকার কিংবা সরকারের উচ্চপদস্থ নেতাদের। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রবাসীরা যদি দেশ ত্যাগ করে না যেত তাহলে দেশ আর দেশের মতো থাকত না।

যারা প্রবাসে চলে গেছেন দেশ ছেড়ে তাদের আপন মানুষজন ছেড়ে তাদের ভাবনায় শুধু একটা ভাবনাই থাকে, আমার মা ভালো আছে তো! আমার বাবা ভালো আছে তো! আমার সন্তানরা ভালো আছে তো! এই ভাবনাগুলো তাদের আরো ভাবিয়ে তোলে যে, তাদের যত কষ্টই হোক না কেন তাদের উপার্জন করতে হবে।

তখন তারা বুকে পাথর চাপা দিয়ে কাজে নেমে যায়, যে নেমে যাওয়ার মধ্যে আর কোনো দ্বিধা থাকে না, দ্বন্দ্ব থাকে না, থাকে শুধু একটাই ভাবনা যে, আমাকে ভালো কিছু করে দেশে গিয়ে পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। যে ফোটানোর মধ্যে কোনো ক্লান্তি থাকবে না, ক্লেদ থাকবে না, তৃষ্ণা থাকবে না, থাকবে না এর কোনোকিছু।

কেননা তারা তাদের কথা ভেবে প্রবাসে যায় না, তারা তাদের পরিবারের কথা, দেশের কথা ভেবে বিদেশ যায়। গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠায়। দেশ থেকে একজন মানুষ যখন প্রবাসে যায় তখন তার ভাবনায় সবচেয়ে আগে যে ভাবনাটা থাকে সেটা হলো আমাকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যে অর্থ দিয়ে আমি বিদেশে এসেছি আমাকে তা শোধ করে পরিবারের জন্য কিছু নিয়ে দেশে ফিরতে হবে। যে ফেরার মধ্যে থাকবে মমতা।

পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি এবং সচ্ছলতার কথা চিন্তা করে প্রবাসীরা দেশে আসারও সাহস করেন না। অথচ মন যে পড়ে থাকে তার প্রিয়জনদের কাছেই। যাদের স্বজন প্রবাসে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত একটু হিসেব করে খরচ করা। ছোট ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। সেটা মুদি দোকানও হতে পারে।

আর যদি তা সম্ভব না হয়, প্রবাসীদের নামে ব্যাংকে টাকাগুলো জমা রাখা। কারণ আজ যে প্রবাসে অবস্থান করছে, সবসময় সে প্রবাসে থাকবে না। এক সময় দেশে আসবে। তার আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের করতে হবে। কারণ সে তার সারাটা জীবন পরিবারের সদস্যদের জন্যেই ব্যয় করেছে।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]