নামমাত্র চলছে ‘প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার’
তিন বছরেও সাড়া ফেলতে পারেনি প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক সমাধানে চালু হওয়া ‘প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার’। লোকবল কম, মাত্র কয়েক ঘণ্টা চালু থাকা, প্রচার না থাকা প্রভৃতি কারণে কল সেন্টারটি নামমাত্রই আছে বলে মনে করেন প্রবাসী এবং তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করা ব্যক্তিরা।
প্রাথমিকভাবে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও জর্ডানে বসবাসরত কমপক্ষে ২৫ লাখ প্রবাসীর জন্য প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারের সেবা চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব দেশের জন্য চালু করার কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন বছরে সেন্টারটির কার্যক্রম বাড়েইনি। বরং তাৎক্ষণিক সমাধান না পেয়ে এই সেবার মান নিয়ে হতাশাই বেড়েছে প্রবাসীদের মধ্যে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ‘সেবা বাড়ানোর’ পুরোনো সেই প্রতিশ্রুতিই পুনর্ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চালু থাকে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার। যেখানে কর্মী সংখ্যা মাত্র দু’জন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আবার বন্ধ থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এ কল সেন্টার চালু করে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে কল এসেছে ২০১৬টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮টি।
যেখানে প্রায় সোয়া এক কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে সেখানে মাত্র দু’জন কর্মী নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হাস্যকর বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম।
আরও পড়ুন > ৩০০ জনের প্রাণ বাঁচালো ‘৯৯৯’
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই কল সেন্টারটি আছে নামমাত্র। প্রবাসীদের জানার জন্য বিশেষ কোনো প্রচারও নেই। বাংলাদেশের অফিস সময়েই ইচ্ছা করলে প্রবাসীরা কল করতে পারেন না। কারণ, একেক দেশের একেক রকম সময়। আমাদের প্রবাসীরা ২৪ ঘণ্টা রেমিটেন্স পাঠান। তেমন করে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হবে। শুধু ফোন ধরা নয়, সমস্যা সমাধানও করতে হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।’
তার মতে, এই সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি কল সেন্টার সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যাতে প্রবাসীরা এটা সম্পর্কে জানতে পারে।
কুয়েতে কর্মরত আনোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেতন সংক্রান্ত সমস্যায় পড়ে অনেকবারই এই নম্বরে কল দিয়েছিলাম কিন্তু বন্ধ পেয়েছি। তাই আর কল করার আগ্রহ পাইনি।’
অন্যদিকে মালয়েশিয়া থেকে শাহজান সিরাজ নামে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জাগো নিউজকে জানান, অনেকবারই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফোন করেছি। কিছু তথ্য দেয়া ছাড়া আদতে এই কল সেন্টার কিছুই করতে পারে না।
প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের টেলিফোন অপারেটর সাইফুর রহমানও জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখুন, এমন অনেক সমস্যা আছে যা তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া যায় না। এসব সমস্যা আমরা নোট নিয়ে স্যারদের জানাই। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।’
তিনি জানান, সাধারণত দেশ থেকেই কল বেশি আসে। আর এসব কল আর্থিক অনুদান, শিক্ষাবৃত্তি এসব সংক্রান্ত।
এ ছাড়া বিদেশ থেকে যেসব কল এসেছে সেগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বেশি। এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগেরই অভিযোগ আকামা এবং কাজ না পাওয়া সংক্রান্ত।
কয়েকবার সৌদি আরব থেকে দু’একজন নারী দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়ে ফোন করেছে বলেও জানা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) মো. জহিরুল ইসলাম বেনার বলেন, ‘এই কল সেন্টার আরও বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এখনই ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু করা না গেলেও বাংলাদেশ সময়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শামছুন নাহার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে যে প্রচেষ্টা বর্তমান সরকার করে যাচ্ছে, প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার তারই একটি উদ্যোগ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম এই কল সেন্টারের উদ্বোধন করেন। প্রবাসীদের জন্য সার্বক্ষণিক চালু থাকা নম্বরটি হলো- ০৯৬৫৪৩৩৩৩৩৩।
উদ্বোধনকালে বলা হয়েছিল, এ কল সেন্টারের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি যারা দেশের অর্থনীতিতে সহায়তা করছেন, তারা সরাসরি যেকোনো অভিযোগ, পাসপোর্ট-সংক্রান্ত সমস্যা, মরদেহ পরিবহন ও দাফন সংক্রান্ত বিষয়, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি, আইনগত তথ্য ও সেবা, অসুস্থ কর্মীদের আর্থিক সহায়তা, প্রবাসে আটক কর্মীদের মুক্ত করাসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে পারবেন। দেশে থাকা তাদের স্বজনরাও এ কল সেন্টারের সুবিধা নিতে পারবেন।
এমআরএম/এমএস