মালয়েশিয়ায় কর্মী ‘কেনাবেচায়’ মিডলম্যানরা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসীরা বলেন, ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি মিডলম্যান দেশটিতে কর্মী কিনছে আর বিক্রি করছে। তারা যে যেভাবে পারে সেভাবেই কর্মীদের শোষণ করছে। কখনও হাইকমিশনের নামে, কখনও পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করে দেয়ার নামে আবার কখনও বৈধ করে দেয়ার নামে।
তারা বলেন, কর্মীরা কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে। কর্মীরা বাধ্য হচ্ছে এ চক্রের কথামতো চলতে। বৈধ হওয়ার আশায় অনেকেই মিডলম্যানদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বৈধতা না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। টাকা চাইতে গেলেই উল্টো পুলিশ দিয়ে অথবা গ্যাংস্টার দিয়ে হয়রানি করা হয় তাদের।
এরা আর কেউ নন, বাংলাদেশেরই মানুষ। এরাও একদিন কর্মী হিসেবেই মালয়েশিয়ায় এসেছেন। দীর্ঘদিন দেশটিতে বসবাস করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এমনকি তাদের পুলিশের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহা. শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ লাখের অধিক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। প্রতিদিন একভাগ লোক সমস্যায় পড়লে ১০ হাজার হয়। আর ১০ হাজার লোকের সমস্যা সমাধান করতে ১৫ মিনিট করে ব্যয় হলে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। অতএব অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে দূতাবাস অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
নেপালের নাগরিকরা সমস্যায় পড়লে রাষ্ট্রদূতসহ টিম চলে যায়, কিন্তু বাংলাদেশিরা বিপদে পড়লে দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা পান না প্রবাসীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শহিদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরে নেপালের আলাদা টিম রয়েছে, যেটা বাংলাদেশের নেই। জহুরবারুতে ঘটনা ঘটলে কুয়ালালামপুর থেকে টিম যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নেপাল যেতে পারে কারণ বিভিন্ন শহরে দূতাবাসের আলাদা টিম রয়েছে। তার পরেও আমাদের কর্মীদের সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছেন।
দূতাবাসে সেবা নিতে গেলে দুর্ব্যবহারের স্বীকার হন প্রবাসীরা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকমিশনার বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ঢাকা থেকে ৩২ জনের টিম এসে শুধু পাসপোর্টের জন্য কাজ করছে। এটা কিন্তু অনেক বড় একটি বিষয়। তারপরও সমস্যা অভিযোগ থাকতেই পারে। জেলে বন্দিদের ব্যাপারে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কোনো না কোনো অভিযানে আটক হচ্ছেন প্রবাসীরা। তবে সংখ্যা বলাটা কঠিন।
তিনি বলেন, শ্রম সচিবের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি দেশটির সিমুনিয়া ক্যাম্প পরিদর্শন করা হয়েছে বাংলাদেশি বন্দিদের সাজা শেষে দেশে দ্রুত পাঠাতে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চলতি মাসেই ৮০ জন দেশে ফিরতে পারবেন। মালয়েশিয়ার প্রতিটি ক্যাম্পে ছুটে যাচ্ছেন আমাদের টিম বাংলাদেশি শনাক্ত করে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্য পরিচালিত রিহিয়ারিং প্রোগ্রাম শেষ হয়েছিল গত ৩০ জুন। এরপর আরও একমাস সময় বাড়িয়ে ৩০ আগস্টের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল দেশটির সরকার। ইতোমধ্যে সে সময়ও শেষ হয়ে গেছে।
এরপরই অবৈধদের ধরতে সারাদেশে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ। এ কারণে অবৈধ অভিবাসীদের অনেকেই গা ঢাকা দেয়ায় শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১ হাজার ১৭৯টি। ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে জি টু জি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালের তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জি টু জি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে জুলাই মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ জন শ্রমিক পাঠায় বাংলাদেশ।
এমআরএম/পিআর