স্বর্গের ইউরোপে নরক যন্ত্রণা

মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল)
মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

ইউরোপজুড়েই চলছে অভিবাসীদের হাহাকার। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অভিবাসীরা সমস্যায় ভুগছে। অসহায় অনাহারে দিন যাপন করছে লাখ লাখ শরণার্থী। সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দেশীয়করণে নতুন নতুন আইন পাস করছে।

গরিব দেশ থেকে বহু মানুষ ধনী দেশে আসার চেষ্টায় মরিয়া। চরম হতাশার হাত থেকে তারা পালিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে। কিন্তু যে স্বর্গের আসায় তারা যাচ্ছে তা তো এখন নরকের যন্ত্রণাকেও হার মানাচ্ছে। সেই স্বর্গ ইতোমধ্যেই বদলে গেছে।

ইউরোপে নতুন জীবনের স্বপ্ন সম্বল করে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে বসছেন অসংখ্য শরণার্থী। ভূমধ্যসাগরে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনায় ইউরোপগামীদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার শরণার্থী।

ইদানিং রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতির তাড়নাই মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। স্বভাবতই অনেকে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া কিংবা সোমালিয়া দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশ থেকে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন। রাজনীতির বিপত্তি এড়াতে মানুষ যখন অন্য দেশে যাওয়ার কথা ভাবে, তখন সেই ভিনদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ছাড়া অর্থনেতিক সুযোগ-সুবিধা আছে কিনা, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

উদ্বাস্তু সংকট, অভিবাসন, দেশ ছাড়া, এ সবের পেছনে হাজারটা মানবিক কাহিনি, সহস্র মানবিক ট্র্যাজেডি লুকিয়ে রয়েছে। আর রয়েছে মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, নিজের এবং নিজের পরিবারের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর প্রচেষ্টা। ইউরোপের সব দেশই ভিয়েনা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী, ইউরোপের সব দেশেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করা যায়। তবুও জার্মানি কিংবা সুইডেনে যেতে পারা একটা আলাদা ব্যাপার।

ইউরোপে যাব বললেই তো আর যাওয়া যায় না। কতজন বাড়িঘর, জমিজামা বেচে দালালকে টাকা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ডিঙিতে সাগর পেরিয়ে গ্রিসের লেসবসে পৌঁছাচ্ছে। আবার সেখানেই ফেঁসে যাচ্ছে অনেকে। অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

উদ্বাস্তু, শরণার্থী, অভিবাসীদের চেয়ে বাস্তববাদী আর কেউ নেই। দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতেই যেখানে অনেক সাহস লাগে, সেখানে হতাহত, অনাহুত হিসেবে বিদেশে যাওয়া, ভিসা ছাড়া পরের দেশে ঢোকা, ধৈর্য বুক বেঁধে সুদিনের অপেক্ষায় থাকা যে কত কঠিন যারা যায় তারাই ভালো জানে।

uk2

ইউরোপে হাওয়া যে বদলাচ্ছে, খোদ ইউরোপ যে বদলাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্রেক্সিট, গোটা ইউরোপজুড়ে দক্ষিণপন্থি, জাতীয়তাবাদী পপুলিস্টদের পালে হাওয়া সত্যিই বদলে যাচ্ছে। ইউরোপ আর আগের মতো বিদেশি-বহিরাগতদের সাদরে স্বাগত জানায় না। ইউরোপের কোথায় যেন শঙ্কা ঢুকে গেছে।

সার্বজনীন মানবাধিকারের মূলনীতিতে ঐ ভাগ্যান্বেষী নিরীহদের সমস্যা সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা নানামুখী অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং এভাবে ‘ইউরোপে শরণার্থী সংকট’ বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

আফ্রিকা ও আরবের বিভিন্ন দেশ থেকে তুরস্ক কিংবা গ্রিসে নৌপথে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর কিংবা আটলান্টিক মহাসাগর স্পিডবোট কিংবা ট্রলার দিয়ে পাড়ি জমানোর সময় সলিল সমাধি হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের। আবার আফ্রিকার দেশ মরোতানিয়া রটে সাহারা মরুভূমি হয়ে পর্তুগাল ঢোকার চেষ্টাকালে সাহারা মরুভূমির দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনাহারে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এদিকে, দালালদের মাধ্যমে যারা ইউরোপে ঢুকতে পেরেছেন তাদের মাথা গোজার জন্য জীবন যুদ্ধে নামতে হয়। প্রথমে তাদের বাসস্থানের জন্য পরিচিত জনদের কাছে যেতে হয়। বাসস্থানের পর কাজের জন্য মিথ্যা চেষ্টা করতে হচ্ছে। ইউরোপের যে কোন দেশে যেমন স্পেন, ফ্রান্স ইতালি কিংবা পর্তুগালে কাজের পারমিট ছাড়া কাজ পাওয়া সম্ভব নয়।

যারা অ্যাসাইলাম কিংবা হিউম্যান রাইটসে থাকার জন্য আবেদন করেন তাদের আবেদন বিবেচনা কিংবা আমলে নিতে প্রায় ৮ মাস সময় লেগে যায়। কোন কোন দেশে কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগে। এভাবেই কাটতে থাকে প্রবাসীদের জ্বালাময় জীবন।

এমআরএম/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]