ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে কপাল পুড়ল আসহবের

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মালয়েশিয়া
প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৮

ভাগ্য ফেরাতে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান নরসিংদীর আসহব আলী। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, অবশেষে দেশে ফিরলেন হুইল চেয়ারে করে। আসহবের স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় যাবে। সেখানে গিয়ে কিছু একটা করবে। নিজের ছেলে-মেয়েকে ভালো কলেজে পড়ালেখা করাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন তার নিমিষেই উবে গেল।

আসহবের দেশের বাড়ি নরসিংদীর করিমপুর গ্রামে। ২০১৫ সালে এলাকার এক দালালের উৎসাহে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ হয়। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার মুর্হূতে তিনি কিছুই বুঝতে পারেনি। ভাগ্য বদলের নেশায় বিভোর ছিল।

কাজ শুরু করার আগেই তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েন। একদিকে অবৈধ অন্যদিকে কোন কাজ নেই। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় থাকা খুবই কঠিন।

Maleshia2

অনেক দিন কাজ করতে না পারায় খুব কষ্টে দিন চলে তার। দেশের বাড়িতে অনেক ধার-দেনা করে প্রবাসে গিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও এখন জীবনযুদ্ধে মুখোমুখি আসহব আলী।

২০১৬ সালে মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা দেয় অবৈধ বিদেশিদের বৈধতা দেয়ার। রি-হিয়ারিংয়ের আওতায় আসহব আলী বৈধ হলেও চলতি বছরের ১২ জুন ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ জুন মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় কুয়ালালামপুর জেনারেল হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে। অবস হয়ে পড়ে আসহবের হাত পা। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ফের অবৈধ হয়ে পড়েন। টানা ৫ মাস চলে তার চিকিৎসা।

অন্যদিকে কাছের কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন দেশে চলে যাওয়ার। ট্রাভেল পাসও করে রেখেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাসে হাসপাতালের ৫৭ হাজার রিঙ্গিত বিল বকেয়ার কারণে তাকে রিলিজ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে তার ট্রাভেল পাসের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

Maleshia3

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের কল্যাণ সহকারী মুকসেদ আহমদ ছুটে যান হাসপাতালে। খোঁজখবর নেন আসহব আলীর। অবৈধ থাকায় তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছে না দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো রকম সহযোগিতার আশ্বাস পাননি।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মনির বিন আমজাদ ছুটে যান হাসপাতালে। আসহবের চিকিৎসার অর্থ পরিশোধ এবং তাকে দেশে পাঠাতে এগিয়ে আসেন তিনি।

এরই মধ্যে প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনির বিন আমজাদ দেশটির সরকার দলীয় আমানা পার্টির শীর্ষ স্থানীয় নেতা আব্দুল ওয়াহিদ বিন আহমাদ ইব্রাহিম ও পিকে আর এর নেতা রাজালি বিন লাতিফের সঙ্গে আলোচনা করেন হাসপাতালের বিল মওকুফ করার জন্য। দেশটির দুই শীর্ষ স্থানীয় নেতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতালের বিল মওকুফ করে দেন তারা।

Maleshia4

মওকুফের আগে হাল ছাড়েননি প্রেস ক্লাব সভাপতি রিলিজ দেয়ার আগের দিন ১৮ অক্টোবর হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে নগদ ৫৭ হাজার রিঙ্গিত নিয়ে ছুটে যান হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনিরকে জানান, বিল পরিশোধ করা লাগবে না। পরিশোধ ছাড়াই আসহবকে মুক্তি দেয়া হলো। বেঁচে গেল ৫৭ হাজার রিঙ্গিত। বিমান টিকিট ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৪৭ হাজার রিঙ্গিত সমপরিমাণ ৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আসহবের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মনির বিন আমজাদ।

এ বিষয়ে প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদ এ প্রতিবেদককে জানান, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে প্রায় ১৫ দিন ছোটাছুটি করে আসহব আলীকে দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশের মাটিতে যার যার স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দূতাবাসের পাশাপাশি অসহায় প্রবাসীদের সেবা দেয়া হলে আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে।

এদিকে, রোববার সকালে আসহবের স্ত্রী লাভলী বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে লাভলী বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, আমার স্বামী ১৯ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন। আসার পর হুইল চেয়ারেই বসে থাকতেন আজ সকাল থেকে চেষ্টা করছেন হাঁটার। আমরা সবাই মনির বিন আমজাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ও আর্থিক সহযোগিতায় আমার স্বামী সন্তানদের মাঝে ফিরে এসেছে।

এমআরএম/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]