প্রবাসীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে দেশটিতে প্রবাসীদের ভোগান্তি বাড়তেই আছে। স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যে সরকারি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন এমন বিদেশিদের জীবন কঠিন হয়ে পড়ছে। তার এ নীতিতে অবৈধরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, যেসব অভিবাসীরা খাদ্য, বাসস্থান বা স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন তারা বোঝা হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং তাদের গ্রিন কার্ড পাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশিদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা বন্ধ কিংবা আরো কঠোর করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে দেশটিতে বৈধভাবেও যেসব বিদেশি যাবেন বা রয়েছেন তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা, গৃহায়ণ কিংবা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় অভিবাসন কর্মকর্তাদের ভিসা কিংবা বসবাসের অনুমতি প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। দেশটিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবার মতো কিছু বিষয়ে সেবা পাওয়ার আইনগত অধিকার রয়েছে। নতুন নীতিমালা হলে বিদেশিদের জন্য এসব সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রায় দু’দশক ধরে চলমান নীতির আওতায় সেখানে অনুমতি নিয়ে বসবাসরত বিদেশিরা এসব সুবিধা পেয়ে আসছিলো। এখন নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে যারা ভিসা চাইবেন বা স্থায়ী বসবাসের আইনগত অনুমতি চাইবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে যারা নাগরিকত্বের আবেদন করবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
সেক্রেটারি অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কার্স্টজেন নিয়েলসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা অভিবাসনের আবেদন করবেন; তাদের আর্থিকভাবে নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। অভিবাসীদের আত্মনির্ভরশীলতায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে; যাতে তারা মার্কিন করদাতাদের জন্য বোঝা না হয়। সেজন্য প্রস্তাবিত আইন কংগ্রেসে উত্থাপন করা হবে।
যদিও চূড়ান্ত হওয়ার আগে এর ওপর মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে এবং সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে পাওয়া মতামতগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় তিন লাখ ৮২ হাজারের বেশি ব্যক্তি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়ে থাকেন, আর নতুন এ নীতি তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-৪ ভিসাধারীদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিল করতে আগামী তিন মাসের মধ্যে আইন তৈরি হবে বলে জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে চাকরি হারাবে দেশটিতে কর্মরত অনেক ভারতীয়। কলম্বিয়ার ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলেছে, এইচ১বি অভিবাসীদের স্বামী বা স্ত্রী, যারা এইচ-৪ ভিসা নিয়ে আছেন, তাদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিল করতে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। এইচ-৪ ভিসাধারীদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিলের আইনটি হোয়াইট হাউসের অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অব বাজেটে (ওএমবি) উপস্থাপিত হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি সালমা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে বিপাকে পড়ে, তিনি ১৯৯৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর আর দেশে ফিরে যাননি। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে অবৈধ অভিবাসীর কালিমা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার। যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে জন্ম নেবার পর তিনি তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য এদেশের থাকার জন্য একটি কষ্টের আবেদন করেন। সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদ স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তবুও তাকে দেশে ফিরতে হচ্ছে। আইনি লড়াই করার পর এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি মিলেছে। তবে এ মেয়াদ শেষ হলে তাকে দেশে ফিরতেই হবে।
এমআরএম/এমএস