সৌদি প্রবাসী ষাটোর্ধ্ব হারেস মিয়ার কষ্টের জীবনের গল্প

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা মদিনা থেকে
প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পবিত্র নগরী মদিনার ব্যস্ততম ফুটপাতে গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে রাস্তার ওপর একাধিক কার্টন ও ছোটবড় প্লাস্টিকের ঝুড়িতে টমেটো, শশা, লেবু, ঢেঁড়স ও লাউ সাজিয়ে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ।

শাকসবজি বেচাকেনার চেয়ে বৃদ্ধের দৃষ্টি রাস্তার ওপর। কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি গাড়ি দেখে পণ্যাদি রেখে বৃদ্ধ হাওয়া! গাড়িটি চলে গেলে আবার ফিরে আসেন তিনি।

‘আর ভালো লাগে না। পুলিশের ভয়ে শান্তিমতো বেচাকেনা করতে পারি না। খালি দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। মাথার ওপর ছয় লাখ টাকার বোঝা না থাকলে কালই দেশে ফিরা যাইতাম।’

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার গোসাইরচর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. হারেস মিয়া এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আট মাসের প্রবাস জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বলছিলেন।

হারেস মিয়া জানান, জীবন ও জীবিকার তাগিদে আট মাস আগে সাত লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে আসেন তিনি। দেশ থেকে সৌদি আরব আসার আগে শুনেছিলেন থাকা-খাওয়া বাদে মাসে হাজার পঞ্চাশেক টাকা বাঁচবে। কিন্তু এখানে আসার পর মালিক এক বছরের আকামা দেয়। প্রথমে বেশ কিছুদিন চাকরি খোঁজেন। চাকরি পেলেও বেতন মাত্র ৬০০ রিয়েল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার টাকা)।

hares

বেতন কম হওয়ায় চাকরি না করে ব্যবসা শুরু করেন। কাঁচাবাজার থেকে শাকসবজি কিনে এনে বিক্রি শুরু করেন। ভাষাগত কারণে প্রথমে বেচাকেনা করতে না পারলেও এখন কিছুটা পারেন। ব্যবসায় আয়-রোজগার চাকরির চেয়ে ভালো হলেও আকামায় নিয়োগকর্তা চাকরি করবে- এই কথা লিখে দেয়ায় ব্যবসা করা তার জন্য অবৈধ। এ কারণে পুলিশ দেখলে পালিয়ে বেড়ান বলে জানান হারেস মিয়া।

তিনি জানান, সরকারের নতুন নিয়মে প্রতিবছর আকামা নবায়নের জন্য ১০ হাজার রিয়েল দিতে হবে। ব্যবসা করতে হবে সৌদি নাগরিকদের নামে।

হারেস মিয়া বলেন, ‘সাত লাখ টাকা ঋণ করে এলেও গত আট মাসে দেশে মাত্র এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। আর চার মাস পরে ১০ হাজার রিয়াল দিয়ে আকামা নবায়ন করতে হবে। আকামা নবায়নের টাকা কোথা থেকে জোগাবো সে চিন্তায় রাতে ভালো ঘুম হয় না। ঋণ করে না এলে কালই বিমানের টিকিট কেটে বাংলাদেশ ফিরে যেতাম।’

সৌদি সরকারের নতুন নিয়মে আকামা নবায়নে বছরে ১০ হাজার রিয়েল পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। আকামা নবায়নের টাকা দিতে না পারলে বহু শ্রমিককে দেশে ফিরতে হবে বলে তারা জানান।

এমইউ/বিএ/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]