বাংলাদেশি সালমাকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে আইনি সহায়তার আশ্বাস

কৌশলী ইমা কৌশলী ইমা , যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দারকে তার ছেলের কাছ থেকে আলাদা করে দেশে ফেরত যাবার নির্দেশের বিপক্ষে সোচ্চার হয়ে উঠেছে স্থানীয় প্রবাসী ও মূলধারার রাজনীতিবিদরা।

স্থানীয় সমর মঙ্গলবার কানেকটিকাটের রাজধানী হার্টফোর্ডের ইউএস কোর্ট হাউসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বহিষ্কারাদেশপ্রাপ্ত সালমার স্বামী ও তার ছেলে মার্কিন মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের করুন কাহিনি বলেন।

কানেকটিকাটের ডেমোক্রেট দলীয় ইউএস সিনেটর ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড ব্লুমেন্থাল প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, একটি পরিবারের দুঃসময়ে মা ও ছেলেকে যাতে আলাদা থাকতে না হয় সেজন্য তিনি তার সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সালমার পরিবারকে আশ্বাস দেন তিনি।

সিনেটর ব্লুমেন্থাল বলেন, সালমার জন্য আমিও আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। খুব শিগগিরই সালমার এদেশে অবস্থান সংক্রান্ত বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিরুদ্ধে একটি জরুরি আবেদন করবেন বলে উল্লেখ করেন।

সালমার স্বামী আনোয়ার মাহমুদ সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থালসহ উপস্থিত মার্কিন নেতাদের কাছে বলেন, আমার স্ত্রী সালমা কোন অপরাধী নন। তাকে দেশে ফেরত পাঠালে কলেজ গমোনেচ্ছুক আমার নাবালক ছেলের আমেরিকার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। এই মানবিক কারণেই আমি আপনাদের সকলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ আমার পরিবারের পাশে থাকবেন। এই চরম দুঃসময়ে যারা তার পরিবারকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশি ডেমোক্রেট মো. মাসুদুর রহমান অপু বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। নাবালক সন্তানকে রেখে তার মাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত একটি অমানবিক বিষয় যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

ব্যঙ্গ করে অপু আরও বলেন, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন ‘বিলিভ মি’। তার এ ধরনের আচরণে কীভাবে তাকে বিশ্বাস করবো। সালমার বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে অংশ নিতে আসা মূলধারার রাজনীতিবিদসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

স্থানীয় কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে এসে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন কানেকটিকাট স্টেট গভর্নর ড্যানিয়েল মলয়, হাউস অব জুডিসিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান উইলিয়াম টম, কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সন ও রোসা দেলারোর প্রতিনিধি, হার্টফোর্ড সিটি মেয়র লুক ব্রোনিন, স্থানীয় বাংলাদেশি ডেমোক্রেট মো. মাসুদুর রহমান অপু, সালমার স্বামী আনোয়ার মাহমুদ, সালমা সিকান্দার ও সামির মাহমুদ। সমাবেশ সঞ্চালন করেন ভ্যানেসা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ পেয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সালমা। ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর আর দেশে ফিরে যাননি।যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে জন্ম নেবার পর তিনি তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য এদেশের থাকার জন্য একটি কষ্টের আবেদন করেন।

সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদ স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তার ক্লাস শুরু হবার কথা রয়েছে। কিন্তু তার ক্লাস শুরুর তিনদিন আগেই তার মা সালমাকে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।

সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) এর সাবেক সভাপতি ড. তামিম আহমেদ, আশফাকুল তরফদার, ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, মীর আজম, হালিম আকবর, ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশি ডেমোক্রেট মো. মাসুদুর রহমান (অপু), তারেক আম্বিয়া,মোহম্মদ রহমান তুহিন, সাদেক নজরুল, শাহাজ ইসলাম, সুহেলুর রহমান স্বপন, ডেভিড রোজারিও স্বপন, মোল্লা বাহাউদ্দিন পিয়াল, হুমায়ুন চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন হিমু, এমএ হাসেম, মীর সাব্বির, নিক্সন বিশ্বাস, আব্দুর রাজ্জাক রেজা, মিসেস হালিম, সুফিয়া আম্বিয়া, মো. আজাদ, রোজি আজাদ ও মেসবাহ উদ্দিন প্রমুখ।

এমআরএম/পিআর

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]