মিশিগান মেতেছে বৈশাখী উন্মাদনায়

সাইফুল আজম সিদ্দিকী সাইফুল আজম সিদ্দিকী মিশিগান (যুক্তরাষ্ট্র)
প্রকাশিত: ০৭:২১ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৮
এসো হে বৈশাখ

বাংলাদেশের মতো বৈশাখী ঝড় হানা দিয়েছে এবার যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। কালবৈশাখীর মতো দমকা হাওয়ায় বিদ্যুৎহীন শহরতলীর অনেক বাড়িঘর। গ্রীষ্মের গুমোট গরম না থাকলেও এখনো শীতের প্রকোপ কমেনি এ রাজ্যে। ঝরছে ঝুমঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি জমেছে পথঘাটে বরফের পুরু আবরণ।

এমন বিতিকিচ্ছিরি আবহাওয়ার মধ্যেও, এ বছর মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটি মেতেছিল বৈশাখী উন্মাদনায়। প্রতি বছরের মতো এবারও বেশ জমকালোভাবে পালন করা হয় বৈশাখী উৎসব। মিশিগানে একদল তরুণ সংগঠকের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অনুরণন’ এর পরিবেশনায় ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন।

রোববার দুপুর ২টায় মিশিগানের নর্থভিল শহরে হিলসাইড মিডল স্কুলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের পর্দা ওঠে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে আটপৌড়ে দেশীয় সাজে সেজেছিল বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি।

অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে ছিলো পল্লীগীতি আর লোকনৃত্যের যত আয়োজন। চিরচেনা ‘এসো হে বৈশাখ’ দিয়ে গান শুরু হলেও, একে একে প্রবাসী শিল্পীরা ‘ও আমার দরদী’, ‘আমায় ভাসাইলি রে’, ‘নাও ছাড়িয়া দে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় সব লোকগীতি পরিবেশন করেন।

media

সংগীত পরিবেশনে ছিলেন- জারা আনোয়ার, অভি বিশ্বাস, করবী বাশার, ফজলে রাব্বি আহাদ, সুরভী বনিক, নীলুফা আক্তার নিতু, শিহাব উল্লাহ, শাকিল খন্দকার এবং ইলোরা হোসেন। ঢোল নিয়ে লোকনৃত্য দিয়ে সবার মন মাতিয়ে তোলেন ইমি ইসলাম, সুমাইয়া করিম, তৃশা সাহা, শারমিন তানিম এবং সানজিদা বন্যা।

দেশীয় বিভিন্ন প্রপ্স যেমন কুলা, হাতপাখা ইত্যাদির ব্যবহার ছিলো দৃষ্টিনন্দন। প্রথম ভাগের অনুষ্ঠান শেষ হয় পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের আখ্যানকাব্য ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ অবলম্বনে একটি ব্যতিক্রমী গীতি নৃত্যনাট্য দিয়ে- এর নাট্যরূপ এবং নির্দেশনায় ছিলেন শিহাব উল্লাহ।

তবলার তালে তালে সংলাপ, জনপ্রিয় লোকসংগীতের ব্যবহার, কলাকুশলীদের দারুণ অভিনয় এবং চমৎকার অনেকগুলো নাচের জন্য এই গীতিনৃত্য-নাট্যটি অতিথিদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগায়। নাট্যটিতে ছিলেন জাহেদ জিয়া, ইমি ইসলাম, মোহাম্মদ মোতাকাব্বির শাহীন, সুরভী বনিক, নাইমা হোসেন, সালমান সোহেল, মুকিত হাসান, তৃশা সাহা, শারমিন তানিম, সানজিদা বন্যা এবং সুমাইয়া করিম।

media

পুরো অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগের সঞ্চালনা করেন সাবরিনা সাব্বির বন্যা। যন্ত্রবাদনে ছিলেন- শাকিল, শাওন, শাফি, ইলোরা এবং জাফরী, ক্যামেরায় ছিলেন সনেট।

বাংলাদেশের সিনেমার বিবর্তন নিয়ে অনবদ্য পরিবেশনা ছিল এ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে। ষাটের দশকের জনপ্রিয় গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে হালের নায়িকা পরিমনীর নাচ- বাংলা চলচ্চিত্রের মাইলফলক সবকিছুকেই ধারণের একটা প্রয়াস ছিলো এ অংশের পরিবেশনায়। ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘মনেরো রঙ এ রাঙাব’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’, ‘পড়েনা চোখের পলক’ ইত্যাদির মতো লোকপ্রিয় গান উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে নস্টালজিয়ার আবহ তৈরি করে।

প্রথম ভাগের শিল্পীদের পাশাপাশি এই অংশে আরও গান পরিবেশন করেন দেবাঞ্জন দীপ। ‘ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’ গানের সঙ্গে যুগল নৃত্য পরিবেশন করেন শারমিন তানিম এবং মীর রসি। তাদের অভিনব বেশভুষা এবং নৃত্যশৈলী দর্শকদের মুগ্ধ করে। ইমি ইসলাম এবং সুমাইয়া করিমের পরিবেশনায়‘ ধিম তানা’ নাচটিও অতিথিদের বেশ বিনোদিত করে। বাংলা চলচ্চিত্রের গানের বিবর্তনকে ভিত্তি করে বিভিন্ন দশকের গান নিয়ে আকর্ষণীয় একটি মেডলি নিয়ে আসেন জাফরী আল ক্বাদরী এবং নিলুফা আক্তার নিতু।

media

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে মঞ্চ নাটকের আদলে তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি ‘দাওয়াত দে, ‘এ ফাইট ফর ইনভাইটেশন’ এর মাধ্যমে। ফাহিম আহমেদ পরিচালিত এ পরিবেশনাটির শেষে ছিলেন দীপ, পুলক, মারুফ, ফাতিমা,শাওন,মাহির, আশরাফ, মাজহার, মেহেদী, রাজিউর, বুশরা, তৃষা, জিশা, রামিম, দীপন, মিশু, সানাউল এবং তনবী।

হাস্যরসে ভরপুর, টানটান উত্তেজনা অংশটি বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সব চরিত্রকে উত্তর আমেরিকার পটভূমিতে দেখানো হয়েছে। পাত্র-পাত্রীরা চিত্র নায়ক জসীম, ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেতা ডিপজল, অঞ্জুঘোষ, অনন্ত জলিলসহ জনপ্রিয় সব চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলেন।

দ্বিতীয় ভাগে, অভিনব কায়দায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাই সিদ্দিকী, এবং মাফরুহা জাহান, বাংলা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয় ও চলচিত্রের বিভিন্ন ট্রিভিয়া নিয়ে তাদের উপস্থাপনা দরশকদের মন কাড়তে সক্ষম হয়।

প্রবাসে কর্মব্যস্ততা ও জীবনসংগ্রামে হাঁপিয়ে ওঠা, বিদেশি সংস্কৃতির মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে নিজস্ব শেকড় সন্ধানে কিছুটা আত্মতৃপ্তি খুঁজে ফেরেন প্রবাসী বাঙালিরা। বৈশাখী আয়োজন যেন তাদের কাছে নিরাপদ আশ্রয়। বৈশাখীর অনুষ্ঠান বিদেশে ও নতুন প্রজন্মের কাছে নিজের দেশ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার বড় মাধ্যম।

শিহাব উল্লাহ/এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]