সৌদি প্রবাসী নারী গৃহকর্মীর বাঁচার আকুতি

আব্দুল হালিম নিহন
আব্দুল হালিম নিহন আব্দুল হালিম নিহন , সৌদি আরব প্রতিনিধি সৌদি আরব
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ছবি-প্রতীকী

অভাবের তাড়নায় পরিবারকে সুখে রাখতে স্বদেশ ও স্বজনদের ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি দেয়া প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে অনেক নারী শ্রমিকও। যার একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মীর কাজে নিয়োজিত। প্রবাসে থাকা নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের কথা আমরা প্রায় শুনে আসছি মিডিয়ার মাধ্যমে। কিছু কিছু ঘটনার বিবরণ হতবাক করে দেয় সবাইকে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে এক সময় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারী গৃহকর্মী পাঠানোর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটির সরকার।

অন্যদিকে বিদেশে নারী গৃহকর্মী দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু বিধিমালা থাকলেও কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি সরকারের দেয়া নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভাড়াটে দালালদের মাধ্যমে নানা রকম মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার নারীকে বিদেশে পাঠায়। এর মধ্যে সব থেকে বেশি নারী শ্রমিক পাঠানো হয়েছে সৌদি আরবে।

আর এই সৌদি আরবেই গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর শোনা যায় অনেক বেশি। এমনকি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক গৃহকর্মীকে পালিয়ে এসে রাস্তায় ঘুরতেও দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে এমন কিছু ভয়ঙ্কর নির্যাতনের খবর আসে যা কল্পনাতীত।

তেমনি ভয়ঙ্কর নির্যাতরে শিকার এক গৃহকর্মীর নাম পারভিন আক্তার। তার বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। পারভিন আক্তার অভাবের তাড়নায় প্রবাসে পাড়ি জমান দুই বছর আগে। তবে কে জানতো, পারভিন আক্তার একদিন অসহায়ের মতো আকুতি করে বেড়াবেন প্রাণে বাঁচার জন্য।

সৌদি আরবের রিয়াদে দুই বছরের বেশি সময় ধরে থাকা পারভিনের কথা অনুযায়ী, দালালের সঙ্গে যে কাজের কথা বলে তিনি এসছেন সে কাজতো পাননি বরং তাকে মাত্র ৫০০ সৌদি রিয়াল বেতনে (বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার) একসঙ্গে তিন বাসার গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়েছে। আর দুই বছর ধরে কাজ করলেও তার এক টাকা বেতনও বাড়ানো হয়নি।

তিনি আরও জানান, ঘুমের সময় টুকুও দেয়া হয় না তাকে। তিন বাসায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কিন্তু তার কোনো চিকিৎসা করানো হয় না। অসহ্য হয়ে অনেকবার আত্মহত্যার কথাও ভাবেন তিনি। কিন্তু কলেজ পড়ুয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে মনকে শক্ত করেন।

পারভিন বলেন, এখানে থাকলে আত্মহত্যার প্রয়োজন নেই, সে এমনিতেই মারা যাব। এর মধ্যে অনেকবার অসুস্থ হলেও তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবারর প্রয়োজনও বোধ বরেন না গৃহকর্তাদের কেউ। তাকে হয়তো মানুষ বলেই ভাবা হয় না- আক্ষেপের সঙ্গে বলেন পারভিন আক্তার।

নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন পারভিন। তার শুধু একটাই আকুতি- তিনি এ নরক (কর্মক্ষেত্র) থেকে মুক্তি চান, বাঁচতে চান।

এমবিআর/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]