পঁচিশে ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৯ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫

গুম-খুন-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ছিল নেতৃত্বের ভুল ও অহমিকা। ফলাফল জনরোষ। সবমিলিয়ে ভয়াবহ পতন ও লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার মসনদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর কেন্দ্র থেকে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড-ইউনিটের নেতারাও আত্মগোপনে। কার্যত বন্ধ সব অফিসিয়াল কার্যক্রম। এমন ঘটনাবহুল ২০২৪ সাল শেষে ২০২৫ এ পদার্পণ। খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে সবার মতো ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঐতিহ্যবাহী দলটির।

অজ্ঞাত স্থান থেকে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা জনগণের সঙ্গেই থাকতে চান। দলের সব অন্তর্নিহিত শক্তিকে দেশের জন্য উৎসর্গ করতে চান। নতুন বছরে নিজেদের শুধরে জনগণের কাছে ফেরার পথ উন্মুক্ত করবেন।

আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে নতুন বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘স্বাভাবিক নিয়মেই সময়ের কাঁটা ঘুরে, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছর এসে কড়া নাড়ে। সময়, সমাজ ও সভ্যতা সামনের দিকে এগিয়ে চলে। বিরূপ পরিস্থিতিতে শক্ত মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের শুভ ও কল্যাণময় সময় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রত্যাশা থাকবে নতুন বছরে পদার্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলার জনগণ সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তিতে বসবাস করবে।’

আরও পড়ুন

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে- নতুন বছরে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে, দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী অনির্বাচিত অসাংবিধানিক অবৈধ সরকারের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে শান্তির বাংলাদেশ গড়তে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের দলের সমস্ত অন্তর্নিহিত শক্তিকে দেশের জন্য উৎসর্গ করবো।’

বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘অবস্থা এমন- মাঠে নামতে পারে না, রাস্তায় নামতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। আত্মগোপনে থাকে। শহরে গ্রামে, কোথাও তো কোনো নিরাপত্তা নেই। চরম নিপীড়ন-নির্যাতন, ভয়ভীতি, আতঙ্ক, এটা নিয়েই তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি মুহূর্ত পার করছে। তার ভেতর দিয়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা আছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও পরিকল্পনা সবই আছে। আমরা ঘুরে ফিরে জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। জনগণের সঙ্গে কাজ করতে চাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে থাকতে চাই।’

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ বেশ কিছু ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হওয়া দরকার। জাতির এই ঐক্যের স্পিড আওয়ামী লীগও ধারণ করে। আওয়ামী লীগের ভুল ছিল, নানান ব্যর্থতাও ছিল। তবে সফলতাও ছিল উল্লেখযোগ্য।’

অবস্থা এমন- মাঠে নামতে পারে না, রাস্তায় নামতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। আত্মগোপনে থাকে। শহরে গ্রামে, কোথাও তো কোনো নিরাপত্তা নেই। চরম নিপীড়ন-নির্যাতন, ভয়ভীতি, আতঙ্ক, এটা নিয়েই তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি মুহূর্ত পার করছে। তার ভেতর দিয়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা আছে।- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম

তিনি বলেন, ‘ভুল শুধরে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আওয়ামী লীগ। অতীত ইতিহাস তাই বলে। এই দলকে ’৭৫ পরবর্তী, এরশাদের স্বৈরশাসন এবং ওয়ান/ইলেভেনের সময় মাইনাস বা বিনাশের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। সামনেও পারবে না। এখন হয়তো প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারছে না বা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারলে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে।’

তবে দলটির প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ফারাক ব্যাপক। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের জনবিচ্ছিন্নতা ও পলায়নপর মনোভাব চোখে পড়ার মতো। নতুন বছরে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো বেশ দুঃসাধ্য।

গত বছরের জুনে আদালতের এক রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ফিরে আসে। এটি সংস্কারের দাবিতে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন থেকে এই সংগঠনের ব্যানারে লাগাতার কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি। এসব কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আক্রমণের শিকার হয়। আরও প্রতিবাদমুখর হয়ে কর্মসূচি দেয়।

এরই মধ্যে সরকারপ্রধানের এক বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে পুরো দেশের ছাত্র সমাজ। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে স্লোগান তোলে- ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ রাজপথ চলে যায় শিক্ষার্থীদের দখলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে পেশিশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে গিয়ে আরও সংকট তৈরি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এর ওপর হামলা ও গুলিয়ে চালিয়ে শত শত শিক্ষার্থী হত্যা করে। আহত হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এতেও দমেনি আন্দোলন, বরং আরও বেগবান হয়।

তীব্রতর এ আন্দোলন ও গণভবন অভিমুখী জনস্রোত থেকে বাঁচতে ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি দেশে আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রম নেই। অজ্ঞাত স্থান থেকে অনলাইনে দলটির পেজ থেকে কাজ চালাচ্ছে দলটি।

এসইউজে/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।