‘২৪ এর জাতীয় নির্বাচনে পুরো জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি’
২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচনে পুরো জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন পার্টির (রওশনপন্থি) মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, ২০২৪ এর নির্বাচনে গোটা জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টির নাম নিয়ে নির্বাচন করেছেন ২৬ জন সুযোগসন্ধানী। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সব দল অংশ নেয়নি, ওই নির্বাচন আমরা যারা বর্জন করেছিলাম আজ এখানে তারাই সমবেত হয়েছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমরা একটি শক্তিশালী সুসংগঠিত জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন করতে চাই। অচিরেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য এখন থেকে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করতে থাকবো।
বুধবার (১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয় পার্টির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মহাসচিব বলেন, একদিন যারা এরশাদের নামে জিন্দাবাদ দিয়েছেন তারা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ নেই। কেউ জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করছেন, কিন্তু এরশাদের আদর্শ ধারণ করছেন না। তার ছবিও ব্যবহার করছেন না। কেউ কেউ জাতীয় পার্টির নামে দল পরিচালনা করছেন, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার থেকে এরশাদের ছবি মুছে দিয়ে নির্বাচন করেছেন। পোস্টারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছবি রাখা হয়নি অথচ অন্য দলের নেতানেত্রীদের ছবি ব্যবহার করে জাতীয় পার্টির নামে নির্বাচন করেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এরা এরশাদের রাজনীতির উত্তরসূরি নন। তারা সুবিধাবাদী এবং স্বার্থান্বেষী। তা না হলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে গোটা জাতীয় পার্টিকে কবরের কিনারে পৌঁছে দিয়ে ২৬ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না। জাতীয় পার্টির নাম মুখে নিতে হলে তার জন্য জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
বক্তব্যে কাজী মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি কেন জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের দিকে একবার ফিরে তাকাতে চাই। দেশ ও জাতির একান্ত প্রয়োজনে এবং স্বার্থে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল। নিজের ইচ্ছায় সেদিন তিনি শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেননি। ওই সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন সেনাপ্রধান। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার পর দেশে পর্যায়ক্রমে ভয়াবহ ক্রান্তিকাল নেমে আসতে থাকে। বিচারপতি সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলেও সেই সরকার দেশ পরিচালনায় চরমভাবে ব্যর্থ হতে থাকে। দেশ এক অরাজক রাজ্যে পরিণত হয়। গোটা দেশ দুর্নীতি আর দুঃশাসনের আগ্রাসনে নিমজ্জিত হয়। সেই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য তার দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেশের সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন বলেই তাকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়েছিল। তখন যিনিই সেনাপ্রধান থাকতেন তাকেই ক্ষমতা গ্রহণ করতে হতো।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করে একটি বিধ্বস্ত দেশকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেই ঘোষণা করেছিলেন দুই বছরের মধ্যে দেশকে পুনর্গঠিত করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তিনি ব্যারাকে ফিরে যাবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দুই বছরের মধ্যে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে তিনি ১৯৮৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন কিন্তু হুসেইন মুহমাদ এরশাদের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ১৯৮৪ সালে যদি রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো, তাহলে আজকের জাতীয় পার্টির সৃষ্টি হতো না। কিন্তু সেই সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে ৮৪ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের দাবি ছিল সামরিক আইনের মধ্যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। ফলে দেশে সামরিক শাসন আরও দুই বছর বৃদ্ধি পায়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ওহিদুর রহমান তরুণ, কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা হাফসা সুলতানা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু সাইদ গোফরান, নুরুল ইসলাম মিলন, নিগার সুলতানা ও তুহিনুর রহমান।
আরএএস/বিএ