বিএনপির বছরের বড় অর্জন ‘সরকার পতন’
দীর্ঘ দেড় দশক ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সরব বিএনপি। এসময়ে দলটিকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। বারবার হতে হয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীকে অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে লড়তে হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। স্রোতের প্রতিকূলে নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন সময় হয়েছেন কোনঠাসা।
তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনের অবসান হলে প্রাথমিকভাবে হাঁপ ছাড়ে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ফেরে চাঙ্গা ভাব। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালটিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বছর হিসেবেই দেখছে বিএনপি। সরকার পতনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং তাতে সফল হওয়াটাকে নিজেদের এ বছরের রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন দলটির অনেকে।
চলতি বছরে বিএনপি গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান সফল করতে দলটি নেপথ্যে থেকে কাজ করেছে এবং চূড়ান্ত পর্বে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে জীবন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এটিই তো বড় অর্জন।- সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স
বিএনপি নেতারা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের যে পতন হয়েছে তাতে সার্বিকভাবে বিএনপির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। এ ভূমিকার কারণে দল এবং দলের নেতৃত্বের প্রতি দেশের জনগণের আস্থা বেড়েছে।
- আরও পড়ুন
- সংস্কার চাইলে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে: ফখরুল
- আজকের যুদ্ধ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার: তারেক রহমান
- নির্বাচন কবে জানতে চাইলে উপদেষ্টারা বিরক্ত হন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত
২০২৪ সালে বিএনপির রাজনৈতিক অর্জন প্রশ্নে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনই সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা একটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। কেউ কেউ মনে করেন সেখানে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এমনটি মনে করা একেবারেই সঠিক নয়। হাসিনা সরকারের পতনে মূল ভূমিকায় ছিল বিএনপি।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গত ১৭ বছরে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুনের শিকার হয়েছেন। এ সবকিছুরই বহিঃপ্রকাশ ৫ আগস্ট। সরকার পতনের ক্ষেত্রটা তৈরি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জেল-জুলুম আর নির্যাতনের মাধ্যমে। তাদের ওপর যে নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছে সেখান থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত।
সরকার পতনের পুরো প্রেক্ষাপটটা কিন্তু একদিনে বা অল্প কিছু দিনে হয়ে যায়নি। বছরের পর বছর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে ধাপে ধাপে দেশকে এই অর্জনের পথে এগিয়ে নিতে হয়েছে। যেখানে মূল ভূমিকায় ছিল বিএনপি।- সেলিমা রহমান
‘পরবর্তীকালে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু এর ফিনিশিং করেছে বিএনপি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাকর্মীদের মাঠে রেখে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।’
দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, বিগত দেড় দশক জাতির ওপর যে দুঃশাসন চেপে বসেছিল সেই দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারাটাই এ বছরে বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, চলতি বছরে বিএনপি গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান সফল করতে দলটি নেপথ্যে থেকে কাজ করেছে এবং চূড়ান্ত পর্বে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে জীবন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এটিই তো বড় অর্জন।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের চূড়ান্ত বিজয়ের দুই বছর আগে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি দিয়েছিল। এখন সারাদেশ, সারা বিশ্ব সেদিকে ঝুঁকে পড়েছে, সেটির প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।
‘এই যে ইকোনমিস্ট (ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট) বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এটির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বিএনপি নেতাকর্মীদের। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দেশের এই ইমেজটাকে তুলে ধরেছে। অর্জনটা হচ্ছে সেখানে যেখানে বিএনপি ও যুব-ছাত্র-জনতার ঐক্য শিখিয়েছে যারা মরতে জানে তাদের মারা যায় না এবং সেই মৃত্যুকে জয় করাই হচ্ছে বিএনপির বড় অর্জন।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ২০২৪ সালের অর্জন বলতে আমি মনে করি বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে। সরকারের পতন নিশ্চিত হওয়া সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বলেন, অর্জন অনেক রয়েছে। কারণ, সরকার পতনে বিএনপির বড় ভূমিকা রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দেশ গঠনে এখন যত রকমের সহায়তা দরকার বিএনপি সেটা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে।
- আরও পড়ুন
- তারেক রহমান কি আসলেই ‘শিগগির’ দেশে ফিরছেন?
- অর্ধযুগ পর খালেদা জিয়ার প্রকাশ্য উপস্থিতি যে বার্তা দিচ্ছে
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অর্জন তো অনেক। পুরো বাংলাদেশের যে অর্জন, আমি তো বলবো এই অর্জনে বিএনপি অগ্রসেনানী। বিএনপি গত ১৭ বছর যে আন্দোলন করেছে, নেতাকর্মীরা যেভাবে হামলা-মামলা ও হয়রানির হয়েছেন, যেভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়ন স্বীকার করেছেন এবং গুম-খুন হয়েছেন, তা এ কথায় অভূতপূর্ব।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে পুড়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পর্যন্ত মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপিকে ভাঙার সব রকম চেষ্টা হয়েছে। এতকিছুর মধ্যেও আমরা সংগ্রাম জারি রেখেছি। আজকে বাংলাদেশের যে অর্জন এর পেছনে বড় ভূমিকা দেশের জনগণের এবং একই সঙ্গে বিএনপির। দেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
‘হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই স্বীকার করি ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে। যাদের বুকের রক্ত সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। আমরা তাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানাই। কিন্তু পুরো প্রেক্ষাপটটা কিন্তু একদিনে বা অল্প কিছু দিনে হয়ে যায়নি। বছরের পর বছর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে ধাপে ধাপে দেশকে এই অর্জনের পথে এগিয়ে নিতে হয়েছে। যেখানে মূল ভূমিকায় ছিল বিএনপি’- যোগ করেন সেলিমা রহমান।
কেএইচ/এমকেআর/জিকেএস