দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংস্কারের পথ সুগম করার আহ্বান ফখরুলের
দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সংস্কারের পথ সুগম করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনেকে সংস্কারের কথা বলেন। প্রথম সংস্কারতো শুরু করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এই সংস্কার শুরু করেছিলেন। প্রতিটি সেক্টরে তিনি সংস্কার করেছেন। এ দেশে সংস্কার বা পরিবর্তন সব কিছু শুরু হয়েছিল বিএনপির হাত ধরেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন তারাই আমাদের সংস্কারের কথা শোনান। যারা পদগুণে বুদ্ধিমান, পতাকা বলে শক্তিমান। আমাদের ৩১ দফার পর আর কোনো সংস্কার থাকে না। দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংস্কারের পথ সুগম করুন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবসের
এই আলোচনা সভায় আয়োজন করে বিএনপি।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বিএনপির নেতারা বলেন, পদগুণে বুদ্ধিমান, পতাকা বলে শক্তিমান। ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেন, পদগুণে হলো বুদ্ধিমান, পতাকাগুণে হলো শক্তিমান। কিন্তু যখন পতাকা থাকে না তখন শক্তিও থাকে না। বিএনপি সম্পর্কে যে যাই বলেন পদগুণে করেন না।
সভাপতির বক্তব্যে প্রথমেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভার্চুয়ালি নয়, সবার প্রত্যাশা দ্রুত সশরীরে উপস্থিত হয়ে আমাদের মধ্যে বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ সেই দল যারা স্বাধীনতার পর আমাদের স্বপ্ন গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তরুণদের হত্যা করেছে। এটা বারবার মনে করতে হবে।
এসময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ দেশের মানুষের একটাই প্রশ্ন আমরা কেনো আমাদের অধিকার আজও ফিরে পেলাম না? মানুষ প্রত্যাশা করেছিল যে জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে সে লক্ষ্যে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবে। কিন্তু সেটা তারা পায়নি। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তারা অনুতপ্ত না বরং নানা ধরনের উসকানি দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তবে দেশের মানুষ কখনোই নিশ্চুপ বসে থাকেনি। এর প্রতিকার করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। সুযোগ পেলে তারা ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করে, সুযোগ না পেলে গণঅভ্যুত্থান ঘটায়। তাই সাবধান করে দিতে চাই, যারা বর্তমানে যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিজয়ের কথা বলতে পারতাম না যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা না করতেন। নতুন প্রজন্ম অবশ্যই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে। তবে বলতে চাই নতুন পরিবর্তনের ফসল ঘরে তুলতে হবে। ভাবার কারণ নেই সবাই অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। যতদিন ভোটের অধিকার অর্জিত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। রাজপথ ছেড়ে যাবো না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছি এত ভার কীভাবে বহন করব? এত প্রাণ দেওয়া স্বপ্ন দেখা তার কি কোনও বাস্তবায়ন হয়েছে? আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা ও খালেদা খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হয়েছিল। ২৪ সালে এবার আকাঙ্ক্ষা আরও বেশি জনগণের স্বপ্ন বেশি এত প্রাণ ও হতাহত বাংলাদেশের কোনও সময় হয়নি। নির্বাচন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চাই, ষড়যন্ত্র করে নয়; তাই বলেছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবে বিএনপি।
সবাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারতো জোর করে দায়িত্ব নেওয়নি। জনগণ ও আমরা জোর করে দায়িত্ব দিয়েছি।
সেই সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নিয়ে কথা বলার আগে হিসাবনিকাশ করে বলতে হবে। যা মন্তব্য করবেন এ পথগুণে করবেন না। জিয়াউর রহমান বলতেন মন্ত্রীর চেয়ে রাজনৈতিক নেতা বড়। পদগুলো হলো বুদ্ধিমান পতাকাগুণে শক্তিমান কিন্তু যখন পতাকা থাকে না তখন শক্তিও থাকে না। বিএনপি সম্পর্কে যে যাই বলেন পদগুণে করেন না। পরামর্শ শুনতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতার চেয়েও ভয়ংকর। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি কারও করদ রাজ্যে হয়ে থাকার জন্য নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনীতি ছিল বা আছে বলেই ৪৭, ৫২, ৭১ , ৯০ ও ২৪ হয়েছে। বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করে কোনও লাভ হবে না। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরে দিন। কোনোভাবেই জনগণের সঙ্গে রাজনীতি করার চিন্তা করবেন না। নির্বাচন নিয়ে যত কালক্ষেপণ করবেন ততই পতিত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। ইতিহাস ভুলে যাবেন না।
আলোচনা সভায় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কেএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম