রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে রিজভী

ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও তাকে পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আজ রাষ্ট্রপতির বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে, আমরা সবাই জানি এই রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদেরই একটি প্রোডাক্ট। কিন্তু আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ছোটোখাটো যদি গর্ত হয়, আপনি সেই গর্ত টপকিয়ে পার হয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু বড় গর্ত যদি খাল হয় তখন তো সেটা টপকানো সম্ভব নয়, সেটি টপকাতে গেলে পড়ে যেতে পারেন।

‘সুতরাং কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য অনেক চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। অল্প শূন্যতা হলে সেই শূন্যতা ভরাট করে দেয়, কিন্তু বড় শূন্যতা হলে ওটা ভরাট করা মুশকিল হয়। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন, বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ এবং বাইরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্তে মেতে উঠবে।’

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, একটি পরিস্থিতি, একটি দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেবে। সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা তাদের দরকার। এর মধ্যে সংস্কারের যে কথাগুলো উঠেছে সেই সংস্কার তারা করবে। কিন্তু কথা হলো সেটা তারা কতদিনে করবে?

‘দেশের জনগণ রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে তারা সবাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ড. মোহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের একজন কৃতি মানুষ, বাংলাদেশের জন্য যিনি সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকেই তাকে শ্রদ্ধা করে। যে গণতন্ত্রের জন্য এত লড়াই এত সংগ্রাম, অনেক মা সন্তানহারা, অনেক স্ত্রী স্বামীহারা, এটা তো শুধু গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য। তাই যদি হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে আপনাদের এত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেন? নির্বাচনের জন্য আপনারা যে তারিখটা দেবেন সেটা বলে দিন, এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার করুন।’ বলেন রিজভী।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনগণ তো সংস্কার চায়, শেখ হাসিনার বিচার বিভাগ জনগণ চায় না, শেখ হাসিনার প্রশাসন জনগণ চায় না, শেখ হাসিনার পুলিশ জনগণ চায় না, যে পুলিশ মানবদরদি হবে, যে জনপ্রশাসন জনগণের কল্যাণে আসবে, জনগণ সেই প্রশাসন চায়, এগুলো সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল এটা সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বেশিদিন তো সময় লাগার কথা নয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছর ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। এক ভয়ংকর দানব শেখ হাসিনাকে তাড়াতে গিয়ে শটগানের গুলিতে কারও পা চলে গেছে, কারও দু চোখের আলো নিভে গেছে, কারেও কারও জীবন চলে গেছে। আওয়ামী বাকশালী দুঃশাসনে ভয়ংকর বিষাক্ত বাতাসের মধ্যে সারাদেশের মানুষ গত ১৫ বছর ছিল। যারা কথা বলেছে, যারা প্রতিবাদ করেছে, তাদের রাতের অন্ধকারে তাদের স্ত্রীর কাছে থেকে, মা-বাবার কাছ থেকে নিয়ে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার সুমন, জাকির আমাদের মাঝে আর নেই, তারা এখন কোথায় আছে আমরা কেউ বলতে পারি না। তাদের গুম করা হয়েছে, আমি তো মাত্র দুজনের নাম বললাম।

তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ একটা টু শব্দ করবে না, কেউ টু শব্দ করলে তার পরিণতি হবে গুম অথবা জনির মতো ক্রসফায়ারে হত্যা। এই ছিল শেখ হাসিনার আমল।

রিজভী বলেন, অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। দিনের পর দিন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুরোনো জরাজীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছে, প্রায় দুই লাখ মামলায় বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা মনে করেছিল আমার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই, আমি বাংলাদেশের মানুষের টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে আমার নিজেদের লোকজনকে দিয়ে লুটপাট করাবো, কেউ কোনো আওয়াজ করতে পারবে না। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনগণের গচ্ছিত টাকা আমি হরিলুট করবো, পাচার করবো, কানাডায় বেগমপাড়া বানাবো, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাবো, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না- এই ছিল শেখ হাসিনার ইচ্ছা। এভাবেই গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছে। বিচার বিভাগ তার আঁচলের মধ্যে ছিল, পুলিশ বিভাগ তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে ছিল, জনপ্রশাসন তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে বাধা ছিল।

এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুল ইসলাম রবিন, জাহিদুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।