প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ

ভোটে খুনিদের অযোগ্য ঘোষণাসহ ইসলামী আন্দোলনের ৭ সংস্কার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ও খুনিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সাত দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ সংস্কার প্রস্তাব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পির সাহেব চরমোনাই। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেন।

প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনমতের প্রতিফলনের সরকার। আপনাদের সঙ্গে দেশের জনগণ রয়েছে। আপনারা সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার। কিন্তু খুনি, অর্থ পাচারকারী, অপরাধীরা কীভাবে দেশ থেকে পালালো? আপনারা কেন তাদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

তিনি বলেন, ‘সংস্কার করতে যতটুকু সময় লাগে আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের দাবি সংস্কার কাজ শেষ করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বৈরাচারীরা যেন কোনোভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সে ব্যবস্থা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।’

এসময় ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ হতে সংস্কার কমিশনের প্রতি ৭ দফা লিখিত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়া হয়। যা রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবে

নির্বাচন সংস্কার
ক. সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। খ. আরপিও এর সর্বশেষ সংশোধনী বাদ দিয়ে আরপিও পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গ. ইসি নিয়োগে সাবেক বিচারপতি, আমলা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করা। ঘ. সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দেওয়া। ইসির কার্যক্রম জবাবদিহিতার আওতায় আনা। ঙ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতায় মোতায়েন রাখা। চ. দুর্গম না হলে ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো। ছ. ব্যালটে নির্বাচন হওয়া। আপাতত ইভিএম-এ নয়। জ. সম্পদ পাচারকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যেকোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

পুলিশ সংস্কার
ক. পুলিশ সংক্রান্ত উপনিবেশন আমলের সব আইন বাতিল করা এবং পুলিশের ব্রিটিশ লিগ্যাসি বাদ দেওয়া। কারণ তা ছিল নিপীড়ক ধরনের বাহিনী। খ. দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র বিবেচনা করে সেবা জনসহায়ক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। গ. অজ্ঞাত সংখ্যায় আসামি দিয়ে মামলা করার প্রবণতা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া। ঘ. রাত্রিকালীন টহল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টহলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবেশদ্বারগুলোতে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ।

বিচার বিভাগ সংস্কার
ক. উপনিবেশিক লিগ্যাসি ও আইন বাদ দেওয়া। খ. আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহকেও গ্রহণ করা গ. উচ্চ আদালতে আলাদা শরীয়া বেঞ্চ গঠন করা। ঘ. বিচারপ্রার্থীর শরীয়া আইনে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রাখা।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার
ক. দুদককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা। খ. দুদক কমিশনার হিসেবে উলামা, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়োগ করা। গ. দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা আদালত স্থাপন করা। ঘ. বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রশাসন সংস্কার
ক. উপনিবেশিক ধারাবাহিকতার আমলাতন্ত্র আমূল বদল করা। পদবিন্যাস, পদবীর নাম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা। খ. বর্তমান প্রশাসন নির্দেশনা ও পদ্ধতি নির্ভর; সেখান থেকে সরে এসে কর্ম ও প্রকল্প কেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করা। গ. ইসলামের ধারণা এবং সংবিধানের মর্মমতে জনপ্রশাসন জনতার সেবক। কিন্তু নাম হলো ‘প্রশাসন’। এখান থেকে সরে আসতে হবে। ঘ. প্রশাসনের সর্বস্তরকে দুর্নীতি মুক্ত করা এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা। ঙ. চিহ্নিত দলবাজ, বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ সচিবদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা।

সংবিধান সংস্কার
ক. আওয়ামী আমলের সংশোধনীগুলো বাতিল করা। খ. আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহ-র প্রধান্য নিশ্চিত করা। গ. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ঘ. দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকারের প্রধান না হওয়া। ঙ. বর্তমান সংবিধানে ধারা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। চ. ন্যায়পাল কার্যকর করা, এবং তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিধানকে ভিত্তি হিসেবে রাখা। ছ. সংবিধান সংস্কার কমিটিতে ওলামাদের থেকে একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা। জ. সংস্কার অবশ্যই গণভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ঝ. সংবিধানে ইসলামের মৌলিকত্ব লঙ্ঘন হয় এমন কোনো ধারা থাকতে পারবে না— তা নিশ্চিত করা। ঞ. দেশের যুব চরিত্র নষ্ট করে এমন কোনো উপাদান (যে কোনো মদ বা মাদকতা সৃষ্টিকারী উপাদান) বা আচরণের (পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল চলচ্চিত্র, জুয়া ইত্যাদির) বৈধতা সম্বলিত কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ট. নারী ও শিশু পাচার বন্ধে এবং অসহায় নারীদের সুস্থ-ধারায় পুনর্বাসনের সুস্পষ্ট ধারা-বিধান থাকতে হবে।

শিক্ষা কমিশন সংস্কার
ক. নীতি-নৈতিকতা, সুঅভ্যাস-সুআচরণ ও দেশপ্রেম গড়ে ওঠে এমন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। খ. দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিগত সোয়া দুইশত বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। গ. এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। ঘ. সব সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঙ. অনৈতিক আচরণে দোষী ব্যক্তিদের শিক্ষাঙ্গনে অনুপযুক্ত ঘোষণা করতে হবে। চ. গতানুগতিক ব্রিটিশ প্রবর্তিত লেজুরবৃত্তিক চাকরিজীবী তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। যাতে দেশের প্রবীণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ আলেম ও দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছ. প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী ও সমৃদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

এএএম/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।