জামায়াত নিষিদ্ধে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে: কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলটি ধর্মের মুখোশ পড়া সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। নানান সময়ে তাদের ধারা প্রকাশ্য ও গোপনে নানা অপতৎপরতা ও নাশকতা, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশের জনগণও সেটা অবহিত।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমরা আইনগত দিকটি ভালোভাবে দেখে নিতে চাই। যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে জামায়াতকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশেও দলটির নিবন্ধন না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। সেটার প্রক্রিয়া কী হবে, সেটা আইনগত দিক দেখে-শুনে সরকার শিগগির পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

সোমবার গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে অবহিত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে হওয়া ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে নেতারা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জামায়াতের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় বিবেচনা করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা ও নাগরিক সমাজ দাবি করে আসছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির গঠিত গণআদালত ও পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চের দাবিও ছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বহাল রেখেছেন উল্লেখ করে কাদের বলেন, দেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নজির আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানীতে হিটলারের নাৎসী বাহিনী রাজনীতি করতে পারে না।

সরকার অসহায় শিক্ষার্থীদের আটক ও নির্যাতন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করছে। আমাদের জানামতে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আটক করা হচ্ছে না। নিরীহ ও সাধারণ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেটার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নিজেদের আচার-আচারণে দায়িত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেয় বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গণগ্রেফতারের নামে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যাতে অপরাধী না হয়, গ্রেফতার না হয় সে ব্যাপারে আমাদের দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে কোনো অবস্থায় হয়রানি করা যাবে না। গ্রেফতারের সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য কেউ যাতে অতিউৎসাহী হয়ে সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে নিরাপরাধ কাউকে ধরে না ফেলেন। এটা যাতে কোনো অবস্থায় না হয় সেই ব্যাপারে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আরও পড়ুন:

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলের কাছে সবাই নিরাপরাধী, সবাই অসহায়। তাহলে প্রশ্ন এই ধ্বংসযজ্ঞ চালালো কারা। কারা অগ্নিসংযোগ করলো, রাষ্ট্রের সম্পদ ভষ্মীভূত করলো। বাংলাদেশে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ কারা করেছে।

কাদের বলেন, আজকে কথায় কথায় সরকার ও আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা হয়। আমি পরিষ্কার বলতে চাই এ ঘটনা প্রবাহে আমরা আক্রন্ত। আক্রমণকারী ছিলাম না। এখন অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আজকে অনেকেই বলে আওয়ামী লীগের লোকজন কম ছিল, অনুপস্থিত ছিল। আমি বলতে চাই দলীয় লোকজনকে অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হয়ে কোথাও অবস্থান নিতে বলা হয়নি। আমরা তো আক্রান্ত হয়েছি। নিরস্ত্ররা সশস্ত্রদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি।

এসময় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনার কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, তাহলে কারা এই নারকীয় বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে? তাদের সঙ্গে আপনি (ফখরুল) জাতীয় ঐক্য করছেন। যারা কারাগারের অস্ত্র লুট করেছে তারা কি আপনার বন্ধু ও দোসর। সে জন্য আজকে ইগনোর করছেন।

মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কোথা থেকে নির্দেশ এসেছে, উসকানি এসেছে, কোথায় কোথায় বৈঠক করেছেন, অর্থ জুগিয়েছেন, কোন কৌশলে অর্থ পাঠিয়েছেন সেটা আমরা জানি। সব ষড়যন্ত্র এখন জাতির কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট। মিথ্যার বেসাতি করে, আবোল-তাবোল বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।

সভায় ঢাকা মহানগরসহ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কারফিউ মেনে চলার আহ্বান জানান কাদের। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের তথ্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।’

কোটা সংস্কারে নিহতদের স্মরণ করে মঙ্গলবার একদিনের শোক পালনের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের দিনটি ঠিক রাষ্ট্রীয় শোক দিবস নয়, এটা সরকারিভাবে শোক পালন জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় নয়।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আগস্ট মাসব্যাপী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরই এ শোকের মাস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকি। এর আগেই গত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাতীয় শোক দিবসে ও শোকের মাসে আমাদের কর্মসূচি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের মহানগর ও সহযোগী সংগঠন নিজেদের ফোরাম সভা করে কর্মসূচি নির্ধারণ করেছেন।

বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

বক্তব্যের শুরুতে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছে। আপনাদের কারও সংযোজন-বিয়োজন, সংশোধন থাকলে বলতে পারেন। সংযোগ-বিয়োজন বা সংশোধন দরকার। সেটা উল্লেখ করতে কুণ্ঠিত হবেন না।

এসইউজে/এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।